চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কটের হুমকি ভারতের

আইসিসি বনাম বোর্ড লড়াই তুঙ্গে

আইসিসি বনাম ভারতীয় বোর্ড লড়াই হঠাৎ করে নতুন মাত্রা পেয়ে গেল। এক দিকে বিসিসিআইয়ের চাপের সামনে পিছু হঠতে হচ্ছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থাকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

যুদ্ধং দেহি শিরকে-অনুরাগ।

আইসিসি বনাম ভারতীয় বোর্ড লড়াই হঠাৎ করে নতুন মাত্রা পেয়ে গেল। এক দিকে বিসিসিআইয়ের চাপের সামনে পিছু হঠতে হচ্ছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থাকে। আবার অন্য দিকে আইসিসি-র উপেক্ষার জবাবে রীতিমতো চটে গিয়েছে বোর্ড। এতটাই যে, আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কটের ভাবনাও শুরু হয়েছে।

Advertisement

টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিস্তরীয় কাঠামো চালু করা যে আইসিসি-র পক্ষে সম্ভব হবে না, তা গত কয়েক দিন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। ভারতীয় বোর্ড প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে এসেছে। এই লড়াইয়ে এর আগে ভারত পাশে পেয়েছিল জিম্বাবোয়ে এবং বাংলাদেশকে। এর পর শ্রীলঙ্কাও ভারতের পাশে এসে যাওয়ায় ভোটাভুটিতে আইসিসির পক্ষে এই প্রস্তাব পাশ করার কোনও জায়গা ছিল না। তাই দুবাইয়ে এগজিকিউটিভস কমিটির বৈঠকে আলোচনাতেই উঠল না বহুচর্চিত প্রস্তাবটি।

কিন্তু আইসিসি থেকেও পাল্টা এসেছে। দিন কয়েক আগে দুবাইয়ে আইসিসি-র ফিনান্স কমিটির বৈঠকে ভারতের কোনও প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। যা নিয়ে প্রবল ক্ষিপ্ত বিসিসিআই কর্তারা। বোর্ড সচিব অজয় শিরকে বলেই দিয়েছেন, ‘‘এই ফিনান্স অ্যান্ড কমার্স কমিটিতে সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখানে ভারতীয় প্রতিনিধির না থাকাটা যথেষ্ট অপমানজনক।’’ শুধু এখানেই শেষ নয়। শিরকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমরা আইসিসি-কে বলে দেব হয় নিজেদের নীতি বদলাও, না হলে ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থরক্ষা করতে আমাদের যা করার করব। এমনকী সেটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে নাম তুলে নেওয়াও হতে পারে। তবে আশা করব, ব্যাপারটা এতদূর গড়াবে না।’’

Advertisement

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন জমানায় আইসিসি ঠিক করেছিল, ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার এই ‘বিগ থ্রি’-কে বাড়তি লভ্যাংশ দেওয়া হবে। কিন্তু শশাঙ্ক মনোহর আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেন। যেটা কিন্তু বিসিসিআইয়ের বর্তমান কর্তারা ভাল ভাবে নেননি। কেউ কেউ মনে করছেন, বকলমে এটা না প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট বনাম বর্তমান বিসিসিআই হয়ে দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত।

আইসিসি বনাম বিসিসিআইয়ের প্রথম রাউন্ডে অবশ্য বোর্ডই এগিয়ে। এ দিন দুবাইয়ে আইসিসি-র চিফ এগজিকিউটিভ ডেভ রিচার্ডসন জানিয়ে দেন, ২০১৯ সালের আগে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে কোনও নতুন মডেল চালুর কথা ভাবছেন না তাঁরা। যে ঘোষণায় উচ্ছ্বসিত ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর। দ্বিস্তরীয় টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে কট্টর সমালোচক অনুরাগ আইসিসিকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘‘আইসিসি-র বাকি সদস্যরা এ নিয়ে আমাদের অবস্থানটা বুঝে প্রস্তাব প্রত্যাহার করায় আমি কৃতজ্ঞ।’’

আইসিসি-র প্রস্তাবিত দ্বিস্তরীয় কাঠামো ছিল এই রকম। প্রথম স্তরে থাকবে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা সাত দেশ। পরের স্তরে বাকি তিন দেশ ও সেরা দুই অ্যাসোসিয়েট, এ ক্ষেত্রে যা আফগানিস্তান এবং আয়ার্ল্যান্ড। এটা চালু হলে অবনমন ও প্রমোশনের ভিত্তিতে কোন টিম কোন টায়ারে সেটা ঠিক হবে। অনুরাগ আগেই বলেছিলেন, ‘‘দ্বিস্তরীয় টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় বোর্ড আর্থিক দিক থেকে দারুণ লাভবান হবে এটা ঠিক। কিন্তু ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থ ধাক্কা খাবে।’’ এ দিন সেই বক্তব্যের রেশ টেনে যোগ করেন, ‘‘আইসিসি-র অন্যতম প্রধান অংশীদার হিসেবে ভারতীয় বোর্ডের এটা কর্তব্য যে আমরা বাকিদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলি। যাতে প্রত্যেক ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। ক্রিকেটের প্রসার আর উন্নতি ধাক্কা না খায়।’’

ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটের কাঠামো নিয়ে আলোচনার জন্য দুবাইয়ের বিশেষ চিফ এগজিকিউটিভস কমিটির বৈঠকে অবশ্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে আলোচনা হয়। ওঠে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পুরনো প্রস্তাব। ভারতীয় বোর্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চেয়েছিল। কিন্তু আইসিসি-র ফিউউচার ট্যুরস প্রোগ্রাম আগেই ঠিক হয়ে আছে। সময়ের অভাবে প্রত্যেক দেশের একে অপরের বিরুদ্ধে খেলা সম্ভব নয়। তৃতীয় প্রস্তাব ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়ন ঠিক করতে প্রতি দু’বছরে এক বার করে প্লে অফ খেলবে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক এবং দু’নম্বরে থাকা টিম। ঠিক হয়েছে, এই নিয়ে চিফ এগজিকিউটিভরা নিজেদের বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে আরও ভাবা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন