cricket

সাত উইকেটে জিতল ভারত, ইতিহাস গড়ে অস্ট্রেলিয়া ছাড়ছে বিরাট-বাহিনী

সিরিজের নির্ণায়ক ওয়ান ডে ম্যাচে ভারতের দরকার ২৩১ রান। চহালের ছয় উইকেটের দাপটেই ২৩০ রানে থেমে গেল অস্ট্রেলিয়া। ফলে টেস্ট সিরিজের পর একদিনের সিরিজ জেতার সুযোগ ভারতের সামনে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৪০
Share:

ফিনিশার ধোনি ফের জেতালেন ভারতকে। ছবি: এএফপি।

ইতিহাস সৃষ্টি করল ভারত। অস্ট্রেলিয়ায় কখনও দ্বিপাক্ষিক একদিনের সিরিজ জেতেনি ভারত। এই প্রথমবার জিতে তাই নজির গড়ল বিরাট কোহালির দল। এর আগে টেস্ট সিরিজও জিতেছিল ভারত। যা আগে কখনও হয়নি।

Advertisement

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাটেই সিরিজ জিতল ভারত। বিরাট কোহালি ফেরার পর চতুর্থ উইকেটে কেদার যাদবের সঙ্গে তাঁর জুটিই জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে গেল দলকে। একদিনের সিরিজে টানা তিন ম্যাচে পঞ্চাশ করে ফেললেন তিনি। দুই উইকেটে ভারত যখন ৫৯, তখন ক্রিজে এসেছিলেন ধোনি। প্রথমে কোহালির সঙ্গে জুটিতে পঞ্চাশের বেশি রান, তারপর কেদার যাদবের সঙ্গে একশো রানের জুটিতে জয় ছিনিয়ে আনলেন এমএসডি। কেদারের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেটের জুটিতে ১৯.২ ওভারে ১২১ রান যোগ করলেন ধোনি। যা ফারাক গড়ে দিল। একদিনের সিরিজ জেতাল ২-১ ফলে।

একদিনের সিরিজ জিততে শুক্রবার মেলবোর্নে দরকার ছিল ২৩১ রান। শেষ ওভারে চার বল বাকি থাকতে তিন উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেল ভারত (৪৯.২ ওভারে ২৩৪-৩)। জয় এল সাত উইকেটে। ১১৪ বলে ধোনি অপরাজিত থাকলেন ৮৭ রানে। ৫৭ বলে কেদার যাদব অপরাজিত থাকলেন ৬১ রানে। জয়সূচক স্ট্রোক এল কেদারের ব্যাটেই।

Advertisement

বিরাট কোহালিকে হারিয়ে ইনিংসের মাঝপথে অবশ্য চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। ৬২ বলে ৪৬ রান করে রিচার্ডসনের বলে উইকেটকিপারকে খোঁচা দিয়ে ফিরলেন তিনি। ৩০ ওভারে ১১৩ রানে পড়ল ভারতের তৃতীয় উইকেট। সেখান থেকে ধোনি-কেদার ধীরে ধীরে ম্যাচের দখল নিয়ে নিলেন।

আরও পড়ুন: মেলবোর্নেও ভুবির শিকার ফিঞ্চ, সিরিজে এই নিয়ে টানা তিনবার​

আরও পড়ুন: ধোনিকে ‘ফিনিশার’ বানিয়েছে এই অমর ইনিংসগুলি

শুরুতে দুই ওপেনারের কেউই স্বস্তি দেননি। রোহিত শর্মার (৯) পর ফিরলেন শিখর ধওয়ন (২৩)। ১৬.২ ওভারে ভারতের দ্বিতীয় উইকেট গেল ৫৯ রানে। বিরাট কোহালির সঙ্গে ক্রিজে জুটি বাঁধলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। অম্বাতি রায়াডুকে বাদ দেওয়ায় মেলবোর্নে চার নম্বরে নেমেছেন এমএসডি। কিন্তু প্রথম বলেই মার্কাস স্টোইনিসের বলে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেললেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। অ্যাডিলেডে বিরাট-ধোনি জুটি ভারতকে জয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। মেলবোর্নেও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা সেই আশা করছিলেন। দু’জনে তৃতীয় উইকেটে ৫৪ রান যোগ করলেন। তারপর ধোনিই প্রধানত দায়িত্ব নিলেন। সঙ্গতে থাকলেন কেদার। এই ইনিংস বিশ্বকাপের আগে কেদারের জায়গা প্রথম এগারোয় নিশ্চিত করল বলেও মনে করছে ক্রিকেটমহল।

তার আগে যুজভেন্দ্র চহালের ঘূর্ণিতে মেলবোর্নে ভারত-অষ্ট্রেলিয়া তৃতীয় একদিনের ম্যাচে বিধ্বস্ত দেখাল অস্ট্রেলিয়াকে। জীবনের সেরা বোলিং করে ছয় উইকেট নিলেন তিনি। ১০ ওভারে ৪২ রানে ছয় উইকেট নিলেন তিনি। ২৯ বছর বয়সীর একদিনের কেরিয়ারে এটা দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট। তাঁর লেগস্পিনের জাদুতেই ভাঙন ধরল অজি ইনিংসে। ২৩০ রানে শেষ হল অস্ট্রেলিয়া। ফলে, টেস্টের পর একদিনের সিরিজ জিতে নতুন ইতিহাস লেখার দারুণ সুযোগ বিরাট কোহালির দলের সামনে।

কুলদীপ যাদবের বদলে দলে আসা লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহালই পাল্টে দিলেন ম্যাচের গতিপথ। প্রথম ওভারেই হানলেন জোড়া আঘাত। ফেরালেন জমে যাওয়া দুই বাঁ-হাতি শন মার্শ ও উসমান খোয়াজাকে। মার্শ (৩৯) ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে হলেন স্টাম্পড। আর খোয়াজা (৩৪) ফিরতি ক্যাচ দিলেন চহালকে। ২৪ ওভারের মধ্যে ১০১ রানে পড়ল অস্ট্রেলিয়ার চার উইকেট। তারপর চহাল ফেরালেন মার্কাস স্টোইনিসকে (১০)। ২৯.৩ ওভারে ১২৩ রানে পাঁচ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। চহালের চতুর্থ শিকার হলেন ঝাই রিচার্ডসন (১৬)। তিনি শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিলেন কেদার যাদবকে। পিটার হ্যান্ডসকম্বকে নিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করলেন তিনি। এলবিডব্লিউ হলেন হ্যান্ডসকম্ব (৫৮)। তাঁর ষষ্ঠ শিকার হলেন অ্যাডাম জাম্পা (৮)। জাম্পার লোপ্পা ক্যাচ ধরলেন অভিষেককারী বিজয় শঙ্কর।

সিরিজের নির্ণায়ক ওয়ান ডে ম্যাচে শুরুতেই ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল বৃষ্টি। টস জিতে ভারত ফিল্ডিং নেওয়ার দু’বল পরেই বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। তখন অস্ট্রেলিয়া বিনা উইকেটে ১ রান করেছিল। বন্ধ থাকার খানিকক্ষণ পর ফের খেলা শুরু হয়।

ছয় উইকেট নিলেন চহাল। যা তাঁর কেরিয়ারের সেরা বোলিং। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

ভারত এই ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন করেছে। দলে এসেছেন কেদার যাদব, বিজয় শঙ্কর, যুজভেন্দ্র চহাল। চার নম্বরে নেমে বড় রান পাননি। সেই কারণেই বাদ পড়েন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান অম্বাতি রায়ডু। বাদ পড়েন পেসার মহম্মদ সিরাজও। অ্যাডিলেডে অভিষেক ম্যাচে তিনি হতাশ করেন দলকে। সিডনিতে আবার বাঁ-হাতি পেসার খলিল আহমেদও অনেক রান দিয়েছিলেন। তাই সিরাজের জায়গায় তামিলনাড়ুর অলরাউন্ডার বিজয় শঙ্করকে দলে রাখা হয়।

মেলবোর্নে বাদ পড়েন কুলদীপ যাদব। লেগব্রেক বোলার যুজবেন্দ্র চহাল আসেন কুলদীপের জায়গায়। সব মিলিয়ে বোলিং লাইন আপকে শক্তিশালী রেখে কার্যত ছয় বোলারে নামে ভারত। বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন কোহালি। আর সেই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত করেন বোলাররা।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করতে নামেন যথারীতি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও অ্যালেক্স ক্যারি। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে বিরাট কোহালিকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ক্যারি (৫)। এর পর ফিঞ্চও (১৪) ভুবির বলে ফের আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন। তৃতীয় উইকেটে উসমান খোয়াজা ও শন মার্শ ৭৩ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়াকে বড় ইনিংসের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে চলেছিলেন। তারপরই শুরু হল চহালের জাদু। দ্রুত তিন উইকেট নিলেন তিনি। পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। এরপর মহম্মদ শামির বাউন্সারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (২৬) অসাধারণ ক্যাচ নিলেন ভুবি। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ উইকেটও নিলেন শামি। বোল্ড করলেন বিলি স্ট্যানলেককে (০)। তাঁর ুই উইকেট এল ৪৭ রানে। তবে ভুবির (২-২৮) গড় আরও ভাল।

(আইসিসি বিশ্বকাপ হোক বা আইপিএল ,টেস্ট ক্রিকেট, ওয়ান ডে কিংবা টি-টোয়েন্টি। ক্রিকেট খেলার সব আপডেট আমাদের খেলা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন