অপ্রতিরোধ্য: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ঘরের মাটিতে আরও এক সিরিজ জয়ের উৎসব বিরাট বাহিনীর। পিটিআই
আর কয়েক দিন পরেই নতুন বছর। কিন্তু নতুনের আগমনী সুরের মধ্যেও সেই পুরনো কথাটা আবার বলতে হচ্ছে। চেজমাস্টার এক জনই। তার নাম বিরাট কোহালি।
রবিবার কটকে বিরাটকে অসম্ভব ক্ষুধার্ত লাগছিল। প্রায় প্রতিটা শটের পরে মুষ্টিবদ্ধ হাত ঝাঁকানো, উল্টো দিকের ব্যাটসম্যান বাউন্ডারি মারলে এগিয়ে এসে জোরের সঙ্গে তার পিঠ চাপড়ে দেওয়া। শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল এই ম্যাচে ভাল কিছু করার জন্য কতটা মরিয়া কোহালি।
ক্রিকেটীয় নিরিখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটা এতটাও গুরুত্বপূর্ণ নয় যে জেতার জন্য এ রকম তেতে থাকতে হবে। কিন্তু এই হল কোহালি। গলি ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট— কোথাও হারতে শেখেনি। এ ছাড়া মনে হয় আরও একটা ব্যাপার কোহালিকে তাতিয়ে দিয়েছিল, ওর অহং বোধে আঘাত করেছিল। কটকে এর আগে শেষ চার ম্যাচ মিলিয়ে কোহালির মোট রান ছিল ৩৪। তা ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আগের দুটো ওয়ান ডে ম্যাচে রান পায়নি। বিশাখাপত্তনমে প্রথম বলেই আউট হয়ে গিয়েছিল। এর পরেও চ্যাম্পিয়নের অহং বোধে আঘাত লাগবে না, হয় নাকি?
কটকে টস জেতার সময়ই কোহালির মুখে একটা হাসির আভাস দেখেছিলাম। ভারত অধিনায়ক হয়তো মনে করেছিল, শিশিরের জন্য পরের দিকে ক্যারিবিয়ান বোলাররা ভাল ঝামেলায় পড়ে যাবে। কিন্তু সে রকম কিছু হয়নি। শিশিরের জন্য অতটা সমস্যা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের। যে কারণে ৩১৫ রান তাড়া করে আট বল বাকি থাকতে চার উইকেটে জেতাটা আরও কৃতিত্বের।
রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুল যে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতের ‘জুটি নম্বর ওয়ান’ হতে চলেছে, এই সিরিজের পরে এই নিয়ে আর কোনও সন্দেহ থাকারই কথা নয়। এ দিনও দু’জনের জুটিতে ২১.২ ওভারে উঠল ১২২ রান। দু’জনেই হাফসেঞ্চুরি করে গেল। কিন্তু তার পর থেকে ম্যাচটা ধরে নিয়েছিল বিরাট। আর শেষ দিকে এসে কাজটা করে গেল রবীন্দ্র জাডেজা। বিরাট চেজমাস্টার হলে এ দিন ফিনিশার কিন্তু ছিল জাডেজা।
যখন মনে হচ্ছিল, বরাবরের মতো কোহালি ম্যাচ জিতিয়ে ফিরবে, হঠাৎই অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে এনে বোল্ড হয়ে গেল ও। ওই সময় জাডেজার (৩১ বলে ৩৯ অপরাজিত) মতো এক জন ক্রিকেটারকে খুব দরকার ছিল ক্রিজে। জাডেজা আমার কাছে একটা পরিপূর্ণ প্যাকেজ। ১০টা ওভার করে দেবে, উইকেট নেবে, অসাধারণ ফিল্ডিং করবে আবার গুরুত্বপূর্ণ সময় মাথা ঠান্ডা রেখে রানও করে দেবে। এ দিন যে রকম হল। আমি নির্বাচক থাকলে জাডেজার নামটা সব সময় আগে লিখে রাখতাম। ওকে ছাড়া দল হয় না। সেটা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছে।
বিরাটের ৮১ বলে ৮৫ রানের ইনিংস হয়তো বিধ্বংসী ছিল না, কিন্তু ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ের শেষ কথা হয়ে থাকবে। জেসন হোল্ডারকে মারা একটা চার এখনও চোখে ভাসছে। বোলারের বাঁ দিকে পুশ করে চার। ওই শটে সব চেয়ে শিক্ষণীয় মুহূর্তটা হল, ব্যাট যখন বলে লাগছে। ওই সময় একেবারে সোজা ছিল বিরাটের ব্যাট। এর পরে বাঁ-হাতি স্পিনার পিয়েরকে মারা দুটো শটের কথাও বলতে হবে। প্রথমটা লেট কাট। যা শর্ট থার্ডম্যানকে দাঁড় করিয়ে রেখে বাউন্ডারিতে চলে গেল। ঠিক পরের বলেই অফস্টাম্পের উপর থেকে মিডউইকেট দিয়ে ফ্লিক করে চার। এখানে জোরটা ছিল বটমহ্যান্ডের উপরে। এই দুটো বাউন্ডারি বুঝিয়ে দিচ্ছে, কোহালির শটের ভাণ্ডারের ঔজ্জ্বল্য কতটা।
বিরাট আউট হওয়ার পরে এক দিকে জাডেজা থেকে যাওয়ায় সমস্যা হয়নি। তবে শার্দূল ঠাকুরের (৬ বলে অপরাজিত ১৭) ব্যাটিং দেখে কেউ কেউ অবাক হতে পারেন। আমি নই। আইপিএলে কিন্তু এই রকম উপযোগী ইনিংস খেলার উদাহরণ আছে শার্দূলের। আইপিএলে খেলে অনেকেই কিন্তু অনেক ভাবে পরিণত হয়েছে। শার্দূল এ রকমই একটা উদাহরণ। এই ম্যাচে কিন্তু একটা বড় সুযোগ ছিল তরুণ প্রজন্মের সামনে। মানে শ্রেয়স আইয়ার এবং ঋষভ পন্থের কাছে। আগের ম্যাচে এত ভাল খেলেছিল দু’জনে। এখানে যদি চাপের মুখে দু’জনে ম্যাচটা বার করে দিতে পারত, তা হলে বিরাটরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত হতে পারত। কিন্তু সেটা হল না। শ্রেয়স শটে পুরো জোর না দিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে বসল। পন্থ তো একটা জঘন্য আউট হল পঞ্চম স্টাম্পের বল উইকেটে টেনে এনে।
স্কোরকার্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩১৫-৫ (৫০)
ভারত ৩১৬-৬ (৪৮.৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
লুইস ক সাইনি বো জাডেজা ২১•৫০
হোপ বো শামি ৪২•৫০
চেজ বো সাইনি ৩৮•৪৮
হেটমায়ার ক কুলদীপ বো সাইনি ৩৭•৩৩
পুরান ক জাডেজা বো শার্দূল ৮৯•৬৪
পোলার্ড ন. আ. ৭৪•৫১
হোল্ডার ন. আ. ৭•৪
অতিরিক্ত ৭
মোট ৩১৫-৫ (৫০)
পতন: ১-৫৭ (লুইস, ১৪.৬), ২-৭০ (হোপ, ১৯.২), ৩-১৩২ (হেটমায়ার, ২৯.২), ৪-১৪৪ (চেজ, ৩১.৩), ৫-২৭৯ (পুরান, ৪৭.৫)।
বোলিং: শার্দূল ঠাকুর ১০-০-৬৬-১, মহম্মদ শামি ১০-২-৬৬-১, নবদীপ সাইনি ১০-০-৫৮-২, কুলদীপ যাদব ১০-০-৬৭-০, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-০-৫৪-১।
ভারত
রোহিত ক হোপ বো হোল্ডার ৬৩•৬৩
রাহুল ক হোপ বো জোসেফ ৭৭•৮৯
কোহালি বো পল ৮৫•৮১
শ্রেয়স ক জোসেফ বো পল ৭•৭
ঋষভ বো পল ৭•৬
কেদার বো কটরেল ৯•১০
জাডেজা ন. আ. ৩৯•৩১
শার্দূল ন. আ. ১৭•৬
অতিরিক্ত ১২
মোট ৩১৬-৬ (৪৮.৪)
পতন: ১-১২২ (রোহিত, ২১.২), ২-১৬৭ (রাহুল, ২৯.৫), ৩-১৮৮ (শ্রেয়স, ৩২.৩), ৪-২০১ (ঋষভ, ৩৪.৬), ৫-২২৮ (কেদার, ৩৮.৫), ৬-২৮৬ (কোহালি, ৪৬.১)।
বোলিং: শেল্ডন কটরেল ১০-১-৭৪-১, জেসন হোল্ডার ১০-০-৬৩-১, কিমো পল ৯.৪-০-৫৯-৩, রস্টন চেজ ৪-০-১৯-০, খারি পিয়ের ৭-০-৪৬-০, আলজ়ারি জোসেফ ৮-০-৫৩-১।