গোলাপি বলের ভীতিটা ডোবাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের

গোলাপি বলে দলীপের প্রথম দিনটা শেষ হওয়ার পর অশোক দিন্দার সঙ্গে একটু কথাবার্তা হচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, কী বুঝলি? দিন্দা দেখলাম একটু যেন চিন্তাতেই পড়েছে। বলল যে, রিভার্স হচ্ছে না। বলের পালিশটাই যাচ্ছে না। কুলদীপ যাদবের ইন্টারভিউ করার সময় ওকেও প্রশ্নটা করেছিলাম।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

গ্রেটার নয়ডা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৬
Share:

চোখ গোলাপি বলে। দলীপ ট্রফির ম্যাচে পার্থিব আর রায়না। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি

গোলাপি বলে দলীপের প্রথম দিনটা শেষ হওয়ার পর অশোক দিন্দার সঙ্গে একটু কথাবার্তা হচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, কী বুঝলি? দিন্দা দেখলাম একটু যেন চিন্তাতেই পড়েছে। বলল যে, রিভার্স হচ্ছে না। বলের পালিশটাই যাচ্ছে না।

Advertisement

কুলদীপ যাদবের ইন্টারভিউ করার সময় ওকেও প্রশ্নটা করেছিলাম। কুলদীপ আবার বলল, বাকি সব ঠিক আছে। শুধু গ্রিপ করতে একটু অসুবিধে হচ্ছে। পরেও দু’একজনের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছিল। তাদের নাম আর করছি না। কেউ ব্যাটসম্যান, কেউ বোলার। কাউকে বলতে শুনলাম, ব্যাট করার সময় বলের পেসটা বোঝা যাচ্ছে না। অনেকটা নাকি বোলিং মেশিনের সামনে ব্যাট করার মতো ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে। যে পেসে বল আসবে বলে ভাবছে, স্পিড বাড়িয়ে দেওয়ায় তার চেয়ে অনেক দ্রুত আসছে। কেউ কেউ আবার বলল, বল করার সময়ও নাকি বোঝা যাচ্ছে না কী গতিতে বলটা যাবে শেষ পর্যন্ত।

দেখুন, প্রথম বার গোলাপি বলে খেললে প্রশ্ন উঠবেই। দর্শক আজকের খেলা দেখার পর নিশ্চয়ই এটাও জানতে চাইবে, কী এমন আছে গোলাপি বলে যে দিনে সতেরোটা উইকেট পড়ে যাচ্ছে! চার দিনের ম্যাচ খেলতে নেমে একটা টিমের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যাচ্ছে ১৬০ রানে। জবাবে অন্য টিমটার আবার একশো তুলতেই কালঘাম ছুটছে। লোকে ভাবতেই পারে যে, গোলাপি বল আদতে ব্যাটসম্যানের নেমেসিস। যা ভুল।

Advertisement

মঙ্গলবার যদি প্রথম থেকে খেলাটা কেউ দেখে থাকেন, তা হলে তাঁর এ সব মনে হবে না। আমি মাঠে ছিলাম। গোটা দিন কমেন্ট্রি করেছি। কখনও আমার মনে হয়নি যে, গোলাপি বল ব্যাটসম্যানের মারাত্মক অসুবিধে করে দিচ্ছে। সিম মুভমেন্ট বা টার্ন— কোনওটাই এত মারাত্মক হয়নি যা ব্যাটসম্যানের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে। আমি তো বলব, ঘাতকের নাম ভীতি। গোলাপি বলে খেলার ভীতি। এটা ঠিক যে, বলের পেস বুঝতে একটা সমস্যা ব্যাটসম্যানের হতে পারে। যুবরাজ যেমন আউট হওয়ার সময় বলের পজিশনেই যেতে পারল না। কিন্তু আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি হয়নি তেমন। আসলে এত দিন গোলাপি বল নিয়ে শুনে এসেছে ক্রিকেটাররা। কী হবে না হবে, তা নিয়ে একটা চিন্তা ছিলই। সেটা নিয়ে বেশি ভাবতে গিয়েই ডুবেছে ব্যাটসম্যানরা।

আমার তো বেশ ভালই লেগেছে। প্রথমত, টেস্ট ক্রিকেটকে যদি বাঁচাতে হয় তা হলে গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্টই ভবিষ্যৎ। দ্বিতীয়ত, বল নিয়ে মারাত্মক অভিযোগের জায়গা নেই। ল্যাকার (পালিশের স্তর) বাড়িয়ে দেওয়ায়, বলে চকচকে ব্যাপারটা থাকছে অনেকক্ষণ। আবার সিমটাও একটু বার করা যাতে স্পিনারদের গ্রিপ করতে অসুবিধে না হয়। কেউ কেউ বলল, ওই ল্যাকার বাড়িয়ে দেওয়াতেই নাকি গ্রিপ করতে অসুবিধে হচ্ছে। কিন্তু প্রজ্ঞান ওঝাকেই তো পরপর উইকেট নিতে দেখলাম। তিনটে উইকেট পেল। টার্ন হচ্ছে, ড্রিফট হচ্ছে, ডিপ করছে—স্পিনার এর চেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারে? লাল বলের সঙ্গে তুলনায় আমি যাচ্ছি না। লাল বল এর চেয়ে এখনও ভাল। কিন্তু কলকাতায় যে গোলাপি বলে খেলা হল, তার চেয়ে এটা অনেক উন্নত। আসলে কোকাবুরা কোম্পানির লোকজন মাঠে থাকছে। খোঁজখবর নিচ্ছে যে, কোথায় সুবিধে আর কোথায় অসুবিধে। সেই ফিডব্যাক নিয়ে ওরা বলটাকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে। এ সব টুকটাক সমস্যা তাই সহজে মিটে যাবে।

বরং সবচেয়ে বড় প্রশ্নের উত্তর এ দিন পেলাম না। যে, শিশির পড়লে গোলাপি বল কী করবে? তার হাল কি সাদা বলের মতো হবে, শিশির পড়লে যার অবস্থা সাবানের মতো দাঁড়ায়? মঙ্গলবার মাঠে শিশির পড়েইনি। উত্তরটাও তাই পাওয়া যায়নি। আরও একটা জিনিস। একজন ক্রিকেটারকে যা বলতে শুনলাম। যে, এমন ফ্লুরোসেন্ট বলে খেলা হলে সাইটস্ক্রিন কালো করে দেওয়া হবে না কেন? সাদা সাইটস্ক্রিনের তো দরকার নেই।

শুনে আমার খারাপ লাগেনি। বোর্ডও কিন্তু ব্যাপারটা ভাবতে পারে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: প্রথম দিন ভারত(লাল) ১৬১ (মুকুন্দ ৭৭, সন্দীপ ৪-৬২) , ভারত (সবুজ) ১১৬-৭ (সৌরভ ২৭ ন.আ., কুলদীপ ৩-২৬)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন