Cricket

সঙ্গে রাখো স্যানিটাইজ়ার, একলা চলো রে, বন্ধ হাডলও  

‘এসওপি’ বলছে, প্রত্যেক রাজ্য সংস্থার অধীনে ক্রিকেটারদের শিবির শুরু হওয়ার আগে মেডিক্যাল টিম বিস্তারিত খোঁজ নেবে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০৫:০৪
Share:

সঙ্গী: মুখাবরণ হয়তো এ বার পাকাপাকি ভাবে সফরসঙ্গী হয়ে গেল কোহালি, রাহুলদের (বাঁ-দিকে)।

অতিমারির উদ্বেগের মধ্যে ক্রিকেটে ফেরার জন্য যুদ্ধকালীন নির্দেশিকা তৈরি করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। প্রত্যেক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে পাঠানো ১০০ পাতার ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর)-তে চোখ বোলাতে গিয়ে মনে হবে, ক্রিকেট কি আর ক্রিকেট থাকবে? নাকি যুদ্ধের আকার নেবে?

Advertisement

১০০ পাতার এই ‘এসওপি’ হাতে এসেছে আনন্দবাজারের। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য সংস্থাদের বলা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে অনুশীলনে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথমে শুরু হবে একলা ট্রেনিং দিয়ে, তার পরে ছোট গ্রুপ করে, অতিমারি নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকলে তখনই আগের মতো দলবদ্ধ হওয়া যাবে। রাজ্য সংস্থাদের বলা হয়েছে, এক জন চিফ মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করতে হবে। মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করে তিনিই নিশ্চিত করবেন, যাতে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করে তার মধ্যে সুরক্ষিত রাখা যায় দলের সকলকে।

কী ভাবে তৈরি করা সম্ভব এই জৈব সুরক্ষা বলয়? ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ— দু’টি দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচে যা সম্ভব, তা কী করে হবে একশো তিরিশ কোটির দেশে? যেখানে হাজার-হাজার ঘরোয়া ক্রিকেটার রয়েছেন। ‘এসওপি’ বলছে, প্রত্যেক রাজ্য সংস্থার অধীনে ক্রিকেটারদের শিবির শুরু হওয়ার আগে মেডিক্যাল টিম বিস্তারিত খোঁজ নেবে। শেষ চোদ্দো দিনের ভ্রমণ ইতিহাস থেকে শুরু করে সব কিছু জেনে নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল টিম একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করবে। সেই প্রশ্নপত্র অনলাইনে পাঠানো হবে শিবিরে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের কাছে। জবাব সন্তোষজনক হলে তবেই অনুশীলনের অনুমতি মিলবে। প্রত্যেকের মোবাইলে আরোগ্যসেতু অ্যাপ ডাউনলোড করে রাখাও বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়েছে। দলের প্রত্যেক সদস্যকে নিজস্ব হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারের বোতল রাখতে হবে এবং যত বার সম্ভব তা দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিজস্ব সরঞ্জাম থাকা বাঞ্ছনীয়। টাইগার পটৌডির কথা অনেকের মনে পড়ে যেতে পারে। নবাব নিজের ব্যাট রাখারই প্রয়োজন বোধ করতেন না। হাতের সামনে যাঁর ব্যাট পেতেন, তা নিয়েই মাঠে নেমে পড়তেন আর এক চোখ নিয়েই বুক চিতিয়ে রান করে আসতেন। করোনার সময়ে হলে সম্ভব ছিল না। কারণ, বোর্ডের নির্দেশিকা বলছে, অন্যের ব্যাট ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।

Advertisement

এখানেই শেষ নয়। এক দিন অন্তর দু’টি ‘নেগেটিভ’ ফল আসতে হবে অনুশীলনের অনুমতি পাওয়ার জন্য। যদি দু’টি পরীক্ষার ফল ‘নেগেটিভ’ আসে, তবেই শিবিরে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র মিলবে। ঘর থেকে বেরোনো ইস্তক মাঠে খেলার সময়টুকু ছাড়া বাকি সারাক্ষণ এন-৯৫ ত্রিস্তর মাস্ক (ভাল্ভড রেসপিরেটর ছাড়া) পরতে হবে এবং চোখেও চশমাজাতীয় কিছু পরে রাখতে পারলে ভাল। শিবির শুরুর আগে চিফ মেডিক্যাল অফিসারের (সিএমও) নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কশপ করতে হবে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাদের। ওয়েবিনারের মাধ্যমে দলের সব সদস্যকে ভ্রমণের নিয়মাবলী থেকে শুরু করে ট্রেনিংয়ের সময় বা টিম হোটেলে থাকার সময় কী কী নিয়ম অনুসরণ করতে হবে, সব জানাবেন সিএমও।

টিম হোটেলে থাকার বিধিনিষেধও পাল্টে যাচ্ছে। বরাবর বলা হয়েছে, ক্রিকেট দলগত খেলা। একতা তৈরি করাই লক্ষ্য। এখন একতা তৈরি করতে হবে ‘একলা চলো রে’ মন্ত্র নিয়ে। ক্রিকেটারদের সকলকে সিঙ্গল রুমে রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে মাঠের কাছাকাছি হোটেলে থাকার। যদি ম্যাচের সময় অন্য শহরে গিয়ে হোটেলে থাকতে হয়, তা হলে হোটোলের সম্পূর্ণ পৃথক বিভাগে ক্রিকেট দলকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। হোটেলের জিম, সুইমিং পুল, স্টিম-বাথ ব্যবহার করা যাবে না যে-হেতু সেগুলি অনেকে ব্যবহার করছেন। ক্রিকেটারেরা মাঠে যাবেন বাসে করে। সেই বাস রওনা হওয়ার আগে ভাল করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যদি কেউ নিজের বাড়ি থেকে মাঠে আসেন, তা হলে নিজের যানবাহনে আসবেন। যদি তা সম্ভব না হয়, তা হলে রাজ্য সংস্থার দায়িত্ব তাঁকে নিজেদের অ্যাকাডেমি বা স্টেডিয়াম আবাসনে রাখার। জনতার সঙ্গে যদি একান্তই যাতায়াত করতে হয়, তা হলে ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। শেয়ার ট্যাক্সি বা অটোতে চড়তে মানা করা হয়েছে।

বাসে ওঠার মুখে এবং বাস থেকে নেমে সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটাইজ় করতে হবে। জিমন্যাসিয়াম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। প্রথমত, শারীরিক দূরত্ববিধি মানতে হবে সারাক্ষণ। বার বার জিমের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। একে অন্যের তোয়ালে বা জলের বোতল ব্যবহার করা যাবে না। ফিজিয়োথেরাপি রুমে এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার করা যাবে না। ঘরের দরজা খুলে রাখতে হবে, যাতে বার বার সেখানে হাতের স্পর্শ না লাগে। মেডিক্যাল রুমেও এসি চলবে না। বড় মেডিক্যাল রুম রাখতে হবে যাতে দূরত্ব বিধি মানা সম্ভব হয়।

ড্রেসিংরুম বিধিতে বলা হয়েছে, খেলোয়াড়েরা একদম পোশাক পরেই যেন মাঠে চলে আসেন। যাতে ড্রেসিংরুমে বেশিক্ষণ একসঙ্গে থাকার সম্ভাবনা কমানো যায়। সিডনিতে চিরস্মরণীয় সেই ডাবল সেঞ্চুরির আগের রাতে ঘুম হয়নি সচিন তেন্ডুলকরের। মাঠে গিয়ে তাই ফিজিয়োর টেবলে শুয়েই আধ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন তিনি। করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে এমন কাহিনি আর শুনতে পাওয়া যাবে না, ধরে নেওয়া যায়।

টিম হাডল বন্ধ। হাত মেলানো বা হাই ফাইভ করা যাবে না। টিম মিটিংও ড্রেসিংরুমের চেয়ে মাঠে করাই ভাল বলে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে দূরত্ব বিধি মানার জন্য বেশি জায়গা পাওয়া যাবে। ওয়ার্ম আপের জন্য ফুটবল খেলতে হলে ট্যাকল করা যাবে না। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, এই সব বেশিরভাগ নিয়ম জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও থাকবে। অর্থাৎ, আগের মতো কোহালি বনাম ধোনি ওয়ার্ম আপের মাধ্যমে ফুটবল দ্বৈরথ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আইসিসি ইতিমধ্যেই বলে থুতু বা লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। সেই নিয়ম ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও মানা হবে।

রোজ সকালে দলের সব সদস্যের শরীরার তাপমাত্রা মাপা হবে। কারও উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নিভৃতবাসে চলে যেতে হবে। দর্শক, বাইরের কেউ বা এমনকি খেলোয়াড়দের পরিবারের কাউকেও স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। যদি একান্তই কাউকে প্রবেশ করতে দিতে হয়, তা হলে তাপমাত্রা মাপা এবং কোভিড উপসর্গ সংক্রান্ত নানা পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

মাত্র একটা প্রবেশ পথ দিয়েই মাঠে ঢুকতে হবে। একসঙ্গে বেশি ভিড় এড়ানোর জন্য কিউরেটর এবং মাঠ কর্মীরা মাঠ বা পিচ প্রস্তুত করবেন অনুশীলনের সময় ছাড়া দিনের অন্য কোনও সময়ে। বেঙ্গালুরুতে জাতীয় অ্যাকাডেমিতেও টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে। তাতে অ্যাকাডেমির প্রধান রাহুল দ্রাবিড় থাকবেন। প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গী হবেন চিফ মেডিক্যাল অফিসার, ‘হাইজিন অফিসার’ এবং বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্‌স সহকারী ম্যানেজার।

একশো পাতার এ শুধু অংশবিশেষ। আরও কত কী রয়েছে! ছবি-সহ নির্দেশিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে ক্রিকেটার, দলের সব সদস্যরা সঠিক ভাবে বুঝতে পারেন, ভাইরাস থেকে কী ভাবে সাবধান থাকা যায়। ক্রিকেট নয়, ক্রিকেট যুদ্ধই যেন চালু হতে যাচ্ছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন