স্যাম বড় ব্যাটসম্যানও, মত ‘গডফাদার’ ল্যাম্বের

স্যামের বাবা কেভিন কারেন জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৫০
Share:

অ্যালান ল্যাম্ব

তাঁর প্রিয় বন্ধুর ছেলে যখন মোহালির মাঠে তরঙ্গ তুলেছে, তিনি টিভি-র সামনে ছিলেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজে রয়েছেন এই মুহূর্তে, তাই দেখা হয়নি আইপিএলে প্রীতি জিন্টার কিংস ইলেভেন পঞ্জাব বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার। স্বচক্ষে তাই দেখতে পারেননি প্রিয় বন্ধুর ছেলের হ্যাটট্রিক, ১১ রানে চার উইকেট নেওয়ার অবিশ্বাস্য সেই স্পেল।

Advertisement

কিন্তু মঙ্গলবার মোবাইলে ধরতেই ভেসে এল উচ্ছ্বসিত গলা। ‘‘এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে রয়েছি। ম্যাচটা দেখতে পারিনি। তবে আমি শুনেছি, দারুণ বোলিং করেছে। ও কিন্তু খুব প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ভারতে ক্রিকেটের প্রচুর ভক্ত আছে। তারা খুব উপভোগ করবে ওর খেলা।’’ যিনি বললেন, তাঁর নাম অ্যালান ল্যাম্ব। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা ব্যাটসম্যান। আশির দশকের সেই বিখ্যাত হয়ে থাকা গুচ-গাওয়ার-গ্যাটিং-ল্যাম্ব-বোথামের ইংল্যান্ড। পঞ্চ তারকার এক জন তিনি। যাঁকে নিয়ে বললেন, তিনি পঞ্জাবের নতুন রাজা স্যাম কারেন। যাঁকে প্রায় নিজের ছেলের মতোই গড়ে তুলেছেন ল্যাম্ব।

স্যামের বাবা কেভিন কারেন জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার। যিনি কপিল দেবের সেই টানব্রিজ ওয়েলসের ১৭৫ নট আউটের ইনিংসে বিপক্ষ দলে ছিলেন। ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে এসে ল্যাম্বের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল কেভিনের। কে জানত, বন্ধুত্বে অকাল ছেদ পড়বে! ২০১২-তে জগিং করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্যামের বাবা কেভিন। তার আগেই অবশ্য নানা দুর্যোগ নেমে এসেছে কারেন পরিবারের উপরে। জিম্বাবোয়েতে রবার্ট মুগাবের সরকার তখন। এক দিন মুগাবের লোকজন চড়াও হল কেভিনের ফার্মে। ফতোয়া জারি করে দেওয়া হল, ফার্ম খালি করে দিতে হবে। ক্রিকেটার বলে তা-ও এক মাসের নোটিস পেয়েছিলেন কেভিন, না হলে সেটাও জুটত না।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

প্রীতির সঙ্গে ভাংড়া নাচলেন ম্যাচের সেরা। ফাইল চিত্র

ল্যাম্ব এখনও সে সব কথা মনে করতে পারেন। ‘‘কাউন্টি খেলতে আসত কেভিন। আর ওর বাচ্চারা সাইডলাইনে খেলত। স্যামকে আমি খুব ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলার জন্য ছটফট করতে দেখেছি। চার বা পাঁচ বছর বয়স ছিল তখন ওর। তখন থেকেই আমি কেভিনকে বলতাম, তোমার ছেলেটা দেখবে এক দিন তোমাকে গর্বিত করবে,’’ বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ল্যাম্ব। তার পরেই দীর্ঘশ্বাস পড়ে তাঁর, ‘‘আজ যদি কেভিন বেঁচে থাকত। গর্বে আমার বন্ধুর বুকটা ফুলে উঠত নিশ্চয়ই।’’ বাবা কেভিন নেই, কিন্তু তাঁর বন্ধু ল্যাম্বই হয়ে উঠেছিলেন কারেনের ছেলেদের ‘গডফাদার’। তিন ভাই তাঁরা। টম, বেন এবং স্যাম। সর্বকনিষ্ঠ স্যাম। তিন জনের মধ্যে টম এবং স্যাম ইংল্যান্ডের হয়ে খেলে ফেলেছেন। বেন নর্দ্যাম্পটনশায়ারে খেলেন।

ল্যাম্ব জানালেন, অনলাইনে পরে দেখেছেন স্যামের বোলিং এবং তাঁর সঙ্গে কথাও বলেছেন। ‘‘আমি কথা বলেছি। ও খুব খুশি।’’ স্যাম এবং টমকে নিয়ে বললেন, ‘‘ওরা দুই’জনেই খুব প্রতিভাবান। বিশেষ করে স্যাম। ও তো এখন টেস্ট দলেও ঢুকে পড়েছে।’’ মনে করিয়ে দেওয়া যাক, বিরাট কোহালির ভারতীয় দলের ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট সিরিজে স্যাম কারেনই সিরিজের সেরার পুরস্কার জেতেন।

ল্যাম্ব যদিও অবাক করার মতো কথা শোনালেন এর পরে। দাবি করলেন, ‘‘স্যামের বোলিং আর হ্যাটট্রিক নিয়ে যতই মাতামাতি করুন, ও কিন্তু আসলে অনেক ভাল ব্যাটসম্যান। ওর বোলিংয়ের চেয়েও ব্যাটের হাত অনেক ভাল।’’ ফের প্রশ্ন করায় এতটুকু না দমে গিয়ে বলতে থাকলেন, ‘‘আমি কত লোককে একই কথা বলেছি। কেউ শুনতে চায় না। ওরে ভাই, ও আট নম্বর ব্যাটসম্যান নয়। স্যামের যা ব্যাটের হাত, প্রথম ছয়ের মধ্যে ব্যাট করা অবশ্যই উচিত।’’ তাঁকে বলা গেল, সোমবারের রুদ্ধশ্বাস আইপিএল ম্যাচে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের হয়ে ব্যাটিং ওপেন করেছিলেন স্যাম। তাতেও খুব একটা উচ্ছ্বসিত শোনাল না ল্যাম্বের গলা। বললেন, ‘‘আমি জানি। কিন্তু সেটা তো ভাগ্যের জোরে। ক্রিস গেলের চোট ছিল বলে খেলেনি। সেই জায়গায় ওকে তুলে আনা হয়েছিল ওপেনে। তবে আমি বলছি, নিয়মিত ভাবেই ওর উপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া উচিত। আমি মজা করছি না। এই ছেলেটা কিন্তু ব্যাট করতে জানে।’’ মজা করছেন না বোঝাতে এর পর তথ্য পেশ করলেন ল্যাম্ব। ‘‘বাচ্চা ছেলে হিসেবে জিম্বাবোয়েতে স্কুল ক্রিকেট খেলার সময়ে অনেক রেকর্ড ভেঙেছে। সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি করছিল তখন থেকেই।’’ বাবা কেভিনের অবদান? বল ছুড়ে ছুড়ে তিনিই অনুশীলন করাতেন স্যামকে। নিজের খেলার মাঠে নিয়ে যেতেন বাচ্চাদের। ম্যাচের পরে বাবার কাছ থেকে ব্যাট, বল নিয়ে চলত তাদের ক্রিকেট অভিযান।

কেভিন বেঁচে থাকাকালীনই ল্যাম্ব বার বার বলতেন, ছেলেদের ইংল্যান্ডে নিয়ে আসার জন্য। যাতে তাঁরা ভাল ক্রিকেটার হতে পারেন। কেভিন মারা যাওয়ার পরে বড় ছেলে টম ইংল্যান্ডে চলে আসেন। স্যাম এবং বেন তাঁদের মায়ের সঙ্গে ছিল জিম্বাবোয়েতেই। ল্যাম্বই তাঁদের জোর করে নিয়ে আসেন। ওয়েলিংটন কলেজে ভর্তি করেন স্যামকে। সেখানেই ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠা আইপিএলে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে হ্যাটট্রিক করা নায়কের। এখনও সেই দিনগুলো মনে আছে ল্যাম্বের, ‘‘ওয়েলিংটনে এসেও সেঞ্চুরি করছিল ও। খুব অল্প বয়সে যে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্তরে পৌঁছে গিয়েছে, সেটাই সব চেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার।’’

ইয়ান বোথাম, কপিল দেব, রিচার্ড হ্যাডলি, ইমরান খানদের প্রজন্মে ক্রিকেট খেলা ল্যাম্ব মনে করছেন, স্যাম কারেনের মধ্যে বড় অলরাউন্ডার হওয়ার মশলা রয়েছে। ‘‘সেটা কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজেই ও প্রমাণ করে দিয়েছে। আমার মনে হয়, কোহালিও মুগ্ধ হয়েছিল ওর প্রতিভা দেখে।’’ ২০ বছর ৩০৩ দিনের স্যাম কারেনের সব চেয়ে বড় গুণ কী? ‘‘আমার মনে হয়, ও খুব কঠোর, হার-না-মানা এক প্রতিদ্বন্দ্বী। যে সব সময় ভাল করতে চায়। রান করতে চায়, উইকেট তুলতে চায়।’’

সত্যিই, কেভিন কারেন যদি দেখে যেতে পারতেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement