রাসেলের বিরাট ঝড়ে উড়ে গেল কোহালির ব্যাঙ্গালোর

শুক্রবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রাসেলের ১৩ বলে ৪৮ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগছিল, ছেলেটা কি এই গ্রহের? নাকি অন্য কোনও ব্রহ্মাণ্ড থেকে আসা ক্রিকেটার?

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

সৌজন্য: রাসেলের সঙ্গে হাত মেলালেন কোহালি। পিটিআই

পবন নেগির বলে শুভমান গিল জয়ের রানটা তুলে দিতেই প্যাভিলিয়নের দিকে দৌড় দিয়েছিল আন্দ্রে রাসেল।

Advertisement

শুক্রবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে রাসেলের ১৩ বলে ৪৮ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগছিল, ছেলেটা কি এই গ্রহের? নাকি অন্য কোনও ব্রহ্মাণ্ড থেকে আসা ক্রিকেটার?

এ দিন ওর ১৩ বলের ইনিংসে রান নেওয়ার পরিসংখ্যান এ রকম— ০, ১, ০, ০, ৬, ৬, ৬, ১, ৬ ,৬, ৬, ৪, ৬। স্ট্রাইক রেট ৩৬৯.২৩! এ রকম অবিশ্বাস্য ব্যাটিং দেখতেই তো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে আসেন দর্শকরা। বেঙ্গালুরুতে কেকেআর বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ম্যাচটা যাঁরা দেখতে এসেছিলেন, তাঁরা কিন্তু পুরোদস্তুর ক্রিকেট-বিনোদন উপভোগ করেই মাঠ ছাড়লেন। প্রথমে, বিরাট কোহালি ও এ বি ডিভিলিয়ার্সের যুগলবন্দিতে আরসিবির ২০৫-৩। তার পরে ব্যাট করতে নেমে ক্রিস লিন (৩১ বলে ৪৩ রান) ও রাসেলের দাপটে পাঁচ বল বাকি থাকতেই পাঁচ উইকেটে কেকেআরের জয় এ বছরের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন। একা রাসেলই এ দিন কেড়ে নিল বিরাট কোহালির মুখের হাসি। জয়টা বিরাটের হাতের মুঠো থেকে কলকাতার জন্য ছিনিয়ে নিল পেশিবহুল এই ক্যারিবিয়ানের পাওয়ার হিটিং। তা এতটাই শক্তিশালী যে মহম্মদ সিরাজের বিমার ব্যাটের উপরের দিকে লেগেও ছয় হয়ে গেল।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শেষ সাত ওভারে ৯২ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার নজির আইপিএলে এ পর্যন্ত ঘটল পাঁচ বার। যার চারটিতেই বোলিং দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। পুরনো অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এই পরিস্থিতিতে তীরে এসে তরী ডুবল কোহালিদের।

আরও পড়ুন: ১৩ বলে ৪৮ নয়, কার্যত ৯ বলে ৪৭ করেছেন রাসেল!

কেন?

আমার মতে, প্রথম দল গঠনে ত্রুটি। আর ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করা। ব্যাপারটা উদাহরণ দিয়ে বললে আরও স্পষ্ট হবে। পবন নেগি যখন ওর প্রথম দু’ওভারে ছয় রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছে। তখনই ওকে চার ওভার করানো উচিত ছিল। বিরাট সেটা করায়নি। বল পড়ে দ্রুত ব্যাটে আসছে। এই উইকেটে সেটাই দরকার ছিল। মইন আলিকে দলে নেওয়া হলেও বল করানো হল না। কেন? কেনই বা ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো স্পিনার বসে রয়েছে তা বোধগম্য নয়। প্রশ্ন জাগছে ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে যে বিরাট এত সফল, সে কী ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? নাকি কেউ তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে? সে যা-ই হোক, এই আরসিবি-কে দেখে মনে হচ্ছে দলটা মারাত্মক চাপে পড়ে গিয়েছে। তাই এত ক্যাচ পড়ছে। বোলার পরপর দু’টো কোমরের উপর বল করতে গিয়ে ওভার বাতিল হচ্ছে।

সতেরো ওভারের শেষ বলে নবদীপ সাইনির বলে কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক (১৫ বলে ১৯ রান) যখন আউট হয়ে ফিরছে, তখন জিততে গেলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দরকার ছিল ১৮ বলে ৫৩ রান। আরসিবি সমর্থকরা সকলেই ধরে নিয়েছিলেন টানা চার ম্যাচে হারের পরে অবশেষে প্রত্যাশিত জয় আসতে চলেছে। তার পরেই মাঠে রাসেল ঝড়। আর সেই জাদুতেই ম্যাচের রং বদলে জয় কেকেআর শিবিরে।

তবে ব্যাটসম্যান বিরাটকে দেখে আমি আজ মুগ্ধ। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর টানা চারটে ম্যাচ হারার পরে, কেউ কেউ তাদের অধিনায়ক কোহালির ছন্দে না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেউ কেউ বলেছিলেন, অধিনায়কত্ব বদল করার কথাও। তাঁরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন, বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেটারকে নিয়ে কথাগুলো হচ্ছে। এ দিন যেন সেই কারণেই ব্যাট হাতে জবাব দিতে নেমেছিল বিরাট। ৪৯ বলে ৮৪ রান করার মাঝে দু’টি ছক্কা ও ন’টি চার-সহযোগে কেকেআর বোলিং আক্রমণকে উড়িয়ে দিয়েছিল আরসিবি অধিনায়ক। আর বিরাটকে এ ভাবে ছন্দে দেখতে পেয়েই যেন নিজের খেলাটা ফিরে পায় আরসিবির আর এক তারকা ব্যাটসম্যান এ বি ডি ভিলিয়ার্স। ৩২ বলে ৬৩ রানের ঝটিকা ইনিংস খেলার মাঝে ডিভিলিয়ার্সও মেরেছিল পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কা।

এই নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ হারল বিরাটের আরসিবি। ২০১৪তে প্রথমে টানা পাঁচ ম্যাচ হেরেও প্লে অফে গিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এখন দেখার, এই জায়গা থেকে বিরাট-ডিভিলিয়ার্সদের দল সেই নজির ছুঁতে পারে কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন