ব্যক্তিগত নজির নয়, দলের সাফল্যই লক্ষ্য রিয়ানের

আইপিএলের শেষ ম্যাচে সঞ্জু স্যামসনের নজির ভেঙে সবচেয়ে কম বয়সে হাফসেঞ্চুরি করেছে রিয়ান। সাত ম্যাচে ব্যাটিং গড় ৪০। বল হাতে ২ উইকেট।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০৪:৪২
Share:

প্রত্যয়ী: নিজেকে আরও পরিণত করতে চান রিয়ান। নিজস্ব চিত্র

ক্রিকেটার বাবার গলায় ঝুলতে থাকা ব্যাট-বলের লকেট ছিল সদ্যোজাত ছেলের সবচেয়ে পছন্দের জিনিস। তাই মাস ছয়েকের রিয়ানের জন্যেও সোনার ‘ব্যাট-বল লকেট’ তৈরি করে দিয়েছিলেন পরাগ এবং তাঁর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সাঁতারু স্ত্রী মিঠু বড়ুয়া।

Advertisement

ছেলে বড় হয়ে বাবার মাথা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই লকেট গলাছাড়া হয়নি এখনও। ঘটনাচক্রে ছেলেও হাতে তুলে নিয়েছে ব্যাট। আইপিএলে কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে হাফসেঞ্চুরি হাঁকানো রিয়ান বাড়ি ফিরে জানাল, ব্যক্তিগত রেকর্ড নয়, হতে চায় ম্যাচ উইনার।

আইপিএলের শেষ ম্যাচে সঞ্জু স্যামসনের নজির ভেঙে সবচেয়ে কম বয়সে হাফসেঞ্চুরি করেছে রিয়ান। সাত ম্যাচে ব্যাটিং গড় ৪০। বল হাতে ২ উইকেট। আরও দুটো ম্যাচে সামান্য রানের জন্য হাতছাড়া হয়েছে হাফ সেঞ্চুরি। শুধু পারফরম্যান্স নয়, ১৭ বছরের রিয়ান ফুলাম গামোসা আর বিহু নাচের জন্যেও ভাইরাল হয়েছে। অনেকের আগ্রহ তার নাম নিয়েও।

Advertisement

আরও পড়ুন: হারের হ্যাটট্রিক, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে বার বার কেন আটকে যাচ্ছেন ধোনিরা?

ছেলেকে পাশে বসিয়ে বাবা জানালেন নামকরণের ইতিহাস। মা মিঠু চেয়েছিলেন ছেলের নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাক বাবারও নাম। তাই দাসের ‘ডি’ আগে এনে নাম রাখা হয়েছিল ডি রিয়ান পরাগ। কিন্তু অনেকে ভুল করে ‘ড্রিয়ান’ পরাগ নাম লিখছিলেন। তাই ডি সরিয়ে, বাবার নামই ছেলের পদবি করে দেন দাস দম্পতি।

বাড়ি ভর্তি অতিথি, খ্যাতির বিড়ম্বনা, নিজস্বী-আবদারে ক্লান্ত রিয়ান জানায়, আইপিএলে সুযোগ পাওয়া, এতগুলো ম্যাচ খেলতে পারা, রেকর্ড গড়া— সবই সম্ভব হয়েছে জাতীয় অনুর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুবাদে। তাই তার পাখির চোখ, অসমের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে জাতীয় দলের জার্সি। আপাতত কাজ দুটো। রঞ্জিতে ভাল খেলা এবং খেলার চাপে উচ্চ মাধ্যমিকে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তার ব্যবস্থা করা।

আইপিএলের সেরা শিক্ষা কী? রিয়ানের দাবি, ‘‘বিশ্বের তাবড় বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যাট করছি। উইকেট কিপিং করছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ইডেনে ষাট হাজার দর্শকের সামনে খেলছি। বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংয়ের সময়ে উড়ে আসছে চোখা বাক্যবাণ— এ চাপ সামলানো কঠিন। কিন্তু সিনিয়রেরা আমায় চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখতে শিখিয়েছে।’’ বেন স্টোকসের দেওয়া পরামর্শ রিয়ানের মনে ধরেছে সবচেয়ে বেশি। বেন বলেছিলেন, ‘‘ভুলে যাও কোথায়, কাদের বিরুদ্ধে খেলছ। পাড়া বা গলির ম্যাচ খেলতে নামার কথা ভাব। বল আসবে আর তুমি মারবে।’’

রিয়ান বলছে, ‘‘দলকে জেতানোই বড় কথা। শেষ ম্যাচে ৫০ করার পরেও জানতাম না নজির গড়ে ফেলেছি। আমার দল যে এগোতে পারল না, সেই যন্ত্রণাটা থাকছেই। ব্যক্তিগত নজির নয়, প্রকৃত ম্যাচ উইনার হতে চাই।’’

রেলকর্মী বাবা একদা ধোনির সঙ্গে খেলেছিলেন। সেই কথা ধোনি এখনও মনে রেখেছেন দেখে অবাক রিয়ান, ‘‘আগে একবার বিমানবন্দরে ধোনির সঙ্গে নিজস্বী তোলার সুযোগ হয়েছিল। তাতেই কত উত্তেজিত ছিলাম। আর এ বার তিনি উইকেট কিপিং করছেন। ভাবা যায়! মাত্র মিনিট দশেক তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁর থেকে ভবিষ্যতে ক্রিকেট নিয়ে আরও অনেক কিছু শিখতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন