রোহিতরা ফাইনালে, ধোনিদের সামনে আরও এক পরীক্ষা

মাহির কৌশল বুমেরাং দুই তরুণের শাসনে

মুম্বইকে যে দুই তরুণ এ দিন ফাইনালে তুলে দিল, তাদের নাম রাহুল চাহার এবং সূর্যকুমার যাদব। পাশাপাশি অবশ্য আরও দু’জনের কথা বলতে হবে।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০৪:১৯
Share:

উল্লাস: সুরেশ রায়নাকে ফিরিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বাস রোহিত শর্মাদের। মঙ্গলবার চিদম্বরম স্টেডিয়ামে। আইপিএল

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কি এখন আফসোস করছে? মন্থর, ঘূর্ণি পিচে তিন স্পিনার খেলিয়ে চেন্নাইকে নিজের দুর্গ বানিয়ে ফেলেছিল সিএসকে অধিনায়ক। কিন্তু সেই দুর্গে হানা দিয়ে দুই তরুণ ক্রিকেটার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে এ বারের আইপিএল ফাইনালে তুলে দিল।

Advertisement

বুমেরাং হয়ে গেল মাহির ছক। চেন্নাই সুপার কিংসকে এখন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলতে হবে বিশাখাপত্তনমে দিল্লি-হায়দরাবাদ ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে। জিতলে ফাইনাল, না হলে এ বারের মতো আইপিএল শেষ।

মুম্বইকে যে দুই তরুণ এ দিন ফাইনালে তুলে দিল, তাদের নাম রাহুল চাহার এবং সূর্যকুমার যাদব। পাশাপাশি অবশ্য আরও দু’জনের কথা বলতে হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: হারের হ্যাটট্রিক, মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে বার বার কেন আটকে যাচ্ছেন ধোনিরা?

মুম্বই অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং ওদের কোচ মাহেলা জয়বর্ধনে। রোহিত দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিল। ঘূর্ণি পিচে ঠিকঠাক বোলিং পরিবর্তন থেকে ব্যাটিং অর্ডার সাজানো, সব কিছুইতেই পুরো নম্বর দিতে হবে মুম্বই অধিনায়ককে। প্রথম এগারোও খুব ভাল বেছেছিল। এর পিছনে কোচ জয়বর্ধনের ভূমিকাও আছে বলে আমি মনে করি।

টস জিতে ঘূর্ণি পিচে ধোনিরা আটকে যায় চার উইকেটে ১৩১ রানে। সৌজন্যে লেগস্পিনার রাহুলের চার ওভারে ১৪ রানে দু’উইকেট। তার পরে ঠান্ডা মাথায় সূর্যকুমারের ব্যাটিং। এই সূর্যকুমারই কয়েক বছর আগে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলে গিয়েছে। এই পিচে তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে কী ভাবে খেলতে হয়, দেখিয়ে দিল সূর্য। ওকে মুম্বই ধারাবাহিক ভাবে প্রথম দিকে ব্যাট করতে নামিয়েছে। রোহিতের পুরো ভরসা ছিল সূর্যের উপরে। সূর্য সেই আস্থার মর্যাদা দিল ৫৪ বলে অপরাজিত ৭১ রান করে।

পিচ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়াত অধিনায়ক রিচি বেনোকে নিয়ে একটা কাহিনি মনে পড়ে যাচ্ছে। টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামার আগে প্রতিটা কেন্দ্রের পিচ প্রস্তুতকারকের কাছে গিয়ে বেনো তাদের হাতে পাঁচ ডলার করে তুলে দিতেন। আর বলতেন, ‘তোমার চেয়ে পিচ আর কে ভাল বুঝবে। কী মনে হয়, কী হবে এই পিচে।’ ধোনির অবশ্য সে সব করার দরকার নেই। এ বারের আইপিএলের প্রথম ম্যাচ থেকে চিদম্বরম স্টেডিয়ামের পিচ একই রকম ব্যবহার করে আসছে। প্রথম থেকেই বল ঘুরছে।

আর এই পিচের ফায়দা নিয়ে ধোনিদের চাপে ফেলে গেল রাহুল। ওর একটা ডেলিভারি দেখে অনেক দিন আগের একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সেই ১৯৮৫ সালে মেলবোর্নে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব ক্রিকেটে ভারত বনাম পাকিস্তানের ফাইনাল। ব্যাটসম্যান জাভেদ মিয়াঁদাদ। বোলার লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণন। লেগস্পিনার শিবার বলটা লেগস্টাম্পে পড়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসা মিয়াঁদাদের ব্যাটকে পরাস্ত করে উইকেটকিপার সদানন্দ বিশ্বনাথের হাতে চলে যায়। বিশ্বনাথ স্টাম্প করতে ভুল করেনি।

এ দিন রাহুলের বলটাও লেগস্টাম্পে পড়ে ঘুরে অফস্টাম্পের হাত খানেক বাইরে দিয়ে বেরিয়ে গেল। মুরলী বিজয় স্টেপ আউট করে বোকা বনে যায়। কুইন্টন ডি’কক অনেকটা সময় পেয়েছিল স্টাম্প করার। স্মৃতি যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করে, তা হলে বলব, এই বলটা সে দিনের শিবার বলের চেয়েও বেশি ঘুরেছে।

সেই ২০১০ সালের পর থেকে মুম্বইকে নিজেদের মাঠে হারাতে পারেনি চেন্নাই। এ দিনও পারল না। কাগজে কলমে চেন্নাইয়ের স্পিন আক্রমণ মুম্বইয়ের চেয়ে ভাল। ইমরান তাহির, হরভজন সিংহ, রবীন্দ্র জাডেজা। উল্টো দিকে রাহুল, ক্রুণাল পাণ্ড্য আর জয়ন্ত যাদব। ধোনি হয়তো ভেবেছিল, এই স্পিন আক্রমণ সামলে দেবে সিএসকে ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু পিচ এবং পরিবেশকে খুব ভাল কাজে লাগিয়ে বাজিমাত করে দিল মুম্বইয়ের স্পিন ত্রয়ী। পাশাপাশি মুম্বইয়ের ভারসাম্য খুব ভাল। যে কোনও পরিস্থিতিতে খেলতে পারে।

রোহিতও খুব ভাল ব্যবহার করল বোলারদের। রাহুলকে নিয়ে এল পাওয়ার প্লে-তেই। উইকেটও পেল এই লেগস্পিনার। অফস্পিনার জয়ন্তকে সম্ভবত দলে রাখা হয়েছিল চেন্নাইয়ের দু’জন ব্যাটসম্যানের কথা ভেবে। শুরুতে সুরেশ রায়না, পরে রবীন্দ্র জাডেজা। জাডেজাকে এ দিন নামতে হয়নি। কিন্তু রায়নাকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিল জয়ন্ত। যার ফলে চেন্নাই বড় রান তুলতে পারেনি।

টিভি-তে একটা চমকপ্রদ তথ্য দেখলাম। এই পিচে রাহুলের লেগস্পিন চার ডিগ্রি করে ঘুরেছে। এক জন স্পিনার যদি চার ডিগ্রি করে বল ঘোরায়, তা হলে যে কোনও ব্যাটসম্যানের পক্ষে তাকে খেলা রীতিমতো কঠিন হয়ে যায়।

রাহুলকে সামলে পরের দিকে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় নেমেছিল ধোনি এবং অম্বাতি রায়ডু। ধোনি ২৯ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত রইল, রায়ডু ৩৭ বলে ৪২ করে। তবে শেষ ওভারের প্রথম বলেই আউট হয়ে গিয়েছিল ধোনি। যশপ্রীত বুমরার ফুলটস মারতে গিয়ে ধোনির হাত থেকে ব্যাটটা ছিটকে যায়। বল চলে যায় পয়েন্টের হাতে। কিন্তু তার পরেই দেখা গেল, বুমরার বলটা ‘নো’। অনেকেরই এখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বুমরার সেই নো বলটার কথা মনে পড়তে পারে। এখানে অবশ্য বুমরাকে খেসারত দিতে হয়নি। কিন্তু ভারতের সেরা বোলারকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিশ্বকাপে কোনও ভাবে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন