IPL

ঝড়ের রাতে ডিভিলিয়ার্সের ৪২ বলে ৭৫-এর কাছে ১ রানে হারল হেটমায়ারের ২৫ বলে ৫৩

হর্ষল পটেল ও মহম্মদ সিরাজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন বুকে সাহস নিয়ে বোলিং করলে এমন পাটা পিচেও জেতা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২১ ০০:১২
Share:

বিস্ফোরক মেজাজে অর্ধ শতরানের পর এবি ডিভিলিয়ার্স। ছবি - টুইটার

রুদ্ধশ্বাস বললেও কম বলা হয়। ইনিংসের প্রথম অর্ধ এবি ডিভিলিয়ার্সের হয়ে থাকলে দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিল শিমরন হেটমায়ারঋষভ পন্থের অদম্য লড়াই। সবাই বলে টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের খেলা। তবে মঙ্গলবার আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে হর্ষল পটেলমহম্মদ সিরাজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন বুকে সাহস নিয়ে বোলিং করলে এমন পাটা পিচেও জেতা যায়।

Advertisement

কারণ ১ রানে জয় হলেও যে সেটা জয়। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে এই জয়ের ফলে বিরাট কোহলীর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর যেন ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারল’। এই রোমাঞ্চকর জয়ের ফলে ডিভিলিয়ার্সের বিস্ফোরক ইনিংস যেমন মর্যাদা পেল, ঠিক তেমনই ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে চলে গেল বিরাটের আরসিবি।

সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে এমনিতে ডিভিলিয়ার্সের কোনও মিল নেই। তেমনই আমদাবাদের সঙ্গে কোনও মিল নেই মরু শহর শারজার। দুটো শহরের দুরত্ব ১,৭৫৬ কিলো মিটার। তবে ১৫ মিনিটের ‘মরু ঝড়’ দুটো শহর ও দুই ক্রিকেটারকে যেন এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিল।

Advertisement

শুধু মার্কাস স্টোইনিস নয়, দিল্লিকেই চুপ করিয়ে দিলেন মহম্মদ সিরাজ। ছবি - টুইটার।

১৯৯৮ সালের ২২ মার্চ শারজার আকাশে মরু ঝড় ওঠার আগে বাইশ গজে ঝড় তুলেছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। অস্ট্রেলিয়া সেই ম্যাচ ২৬ রানে জিতলেও সচিন করেন ১৩১ বলে ১৪৭ রান। ফলে ফাইনালের টিকিট পেয়েছিল আজহারউদ্দিনের ভারত। আর এদিন ঠিক তেমন মেজাজেই ঝড় তুললেন ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’। দিল্লির বোলারদের দাপটে আরসিবি-র ওপেনিং থেকে মিডল অর্ডারে ভাঙন ধরলেও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ক্রিকেটার যেন বিপক্ষের বোলিংকে একেবারে দুরমুশ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই ক্রিজে এসেছিলেন।

গত বছর আইপিএল-এর তাঁর সঙ্গে ব্যাট-বলের কোনও যোগাযোগ ছিল না। তবে এ বারের আইপিএল-এ তাঁকে দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। দলের প্রয়োজন হলেই দিব্যি ব্যাট হাতে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। করছেন প্রতি ম্যাচে কিপিং। তাই এই লোকটা যদি ফের দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠে নামেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

ডিভিলিয়ার্স যখন ব্যাট হাতে নামলেন তখন দল ৬১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে একেবারে ধুঁকছে। আবেশ খান, ইশান্ত শর্মা, অমিত মিশ্র, কাগিসো রাবাদা ও অক্ষর পটেল বিরাটের সাধের ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এবি নেমেই পাল্টা মার শুরু করলেন। রজত পতিদারের ৩১ রান ছাড়া অন্য দিক থেকে সাহায্য না পেলেও একাই রুদ্রমূর্তি ধারণ করে ৪২ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত রইলেন। মারলেন ৩টি চার ও ৫টি ছয়। এমন মারকুটে ব্যাটিং করে আইপিএল-এর ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ৫০০০ রান করে নজির গড়লেন এবি। এই রান করতে নিলেন ১৬১ ইনিংস। খেললেন মাত্র ৩২৮৮ বল। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭১ রান তুলল আরসিবি।

অদম্য লড়াই। কিন্তু জলে গেল শিমরন হেটমায়ারের অপরাজিত অর্ধ শতরান। ছবি - টুইটার।

আমদাবাদে ঝড়ের পর ব্যাট করতে নামলেও দিল্লির শুরুটাও ভাল হয়নি। শিখর ধওয়ন ও পৃথ্বী শ গত কয়েক ম্যাচে বিপক্ষের ঘুম কেড়ে নিলেও এ বার কিন্তু তেমনটা হল না। গত মরসুমে দিল্লির হয়ে ভাল খেললেও হর্ষল পটেলকে ছেড়ে দিয়েছিল পন্থের দল। সেই হর্ষল এ বারের আইপিএল-এ যেন বিপ্লব ঘটাচ্ছেন। পৃথ্বীকে আউট করার পর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা মার্কাস স্টোইনিসকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিলেন। ফলে ৯২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকছিল দিল্লি।

তবে শিমরন হেটমায়ার ও পন্থ মোটেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। পঞ্চম উইকেটে জুড়লেন ৯২ রান। একটা সময় তো হেটমায়ার ঝড় তুলে দিল্লিকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন। প্রকৃত অধিনায়কের মতো তাঁকে সঙ্গত দিচ্ছিলেন পন্থ। তবে শেষ রক্ষা হল না। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৪ রান দরকার হলেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রথম চার বলে মাত্র ৪ রান দিলেন সিরাজ। তাঁর পরপর ইয়র্কারে ঘুরে গেল ম্যাচ। তাই শেষ দুই বলে পন্থের কাছে দুটো চার খেলেও দলকে ১ রানে জিতিয়ে বিরাটের মুখে হাসি ফোটালেন এই জোরে বোলার। কারণ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭০ রানে থামতে বাধ্য হল দিল্লি। হেটমায়ার ২৫ বলে ৫৩ ও পন্থ ৪৮ বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকলেও মন খারাপ করে মাঠ ছাড়লেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন