ঈশানদের জন্য সামনের রাস্তা অনেক কঠিন

নিউজিল্যান্ডে শনিবার ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় দেখার পরে এই দল থেকে আমার সাত জন ক্রিকেটারের কথা মাথায় ঘুরছে। যারা আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা হতেই পারে। এই সাত জনের মধ্যে তিন জন ব্যাটসম্যান।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৪৪
Share:

উৎসব: জয়ের পর আত্মহারা ভারতীয় দল। শনিবার। ছবি: এএফপি।

গোটা বিশ্বের খেলাধূলায় অনূর্ধ্ব-১৯ বয়সটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই বয়সেই পেলের তারকা হয়ে ওঠা। বরিস বেকারের প্রথম বার উইম্বলডন জয়। পাকিস্তানে গিয়ে সচিন তেন্ডুলকরের দাপটের সঙ্গে ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আক্রমকে সামলানো। দিল্লির বিরুদ্ধে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রঞ্জি ফাইনালে খেলতে নামা—এ রকম বহু ঘটনা মনে আসছে।

Advertisement

নিউজিল্যান্ডে শনিবার ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয় দেখার পরে এই দল থেকে আমার সাত জন ক্রিকেটারের কথা মাথায় ঘুরছে। যারা আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা হতেই পারে। এই সাত জনের মধ্যে তিন জন ব্যাটসম্যান। চার জন বোলার। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অধিনায়ক পৃথ্বী শ, শুভমান গিল, মনজ্যোৎ কালরা। আর বোলারদের মধ্যে কমলেশ নাগরকোটি, অভিষেক শর্মা, অনুকূল রায় আর ঈশান পোড়েল-এর মধ্যে ভবিষ্যতে তারকা হওয়ার বারুদ রয়েছে। আগামী দু’বছর রঞ্জি বা দলীপ ট্রফির পারফরম্যান্স এই সাত জনের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডারউইনের থিওরির মতোই সেখানে যে ভাল খেলবে, সেই যোগ্যতম হয়ে ঢুকে পড়বে সিনিয়র ভারতীয় দলে। যারা পারবে না তারা হারিয়ে যাবে।

দশ বছর আগে ভারত যখন এই টুর্নামেন্টে জিতেছিল, সেই দলের বিরাট কোহালি, মণীশ পাণ্ডে, রবীন্দ্র জাডেজা-রা এই ধারাবাহিকতা দেখিয়েই আজ সিনিয়র দলের সদস্য।

Advertisement

এ বারের চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে প্রথমেই আসবে পৃথ্বী শ। মুম্বইয়ের এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করে দিয়েছে। অপেক্ষা করছে, জাতীয় দলে ঢোকার তারিখ ও সাল-এর জন্য। ন’টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে পাঁচটি সেঞ্চুরি। রঞ্জি ও দলীপ অভিষেকেই সচিন তেন্ডুলকরের মতো শতরান করে শুরু করেছে। শনিবার ফাইনালে মাত্র ২৯ রান করলেও দু’টো এমন কভার ড্রাইভ মারল, যা চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো। দুর্দান্ত ফুটওয়ার্ক আর টেকনিক।

এর পরেই আসবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট শুভমান গিল। ৩৭২ রান করেছে গোটা টুর্নামেন্টে। ওর সাহস এবং স্ট্রোক প্লে দেখার মতো। সবাই শুভমান-কে ‘দ্বিতীয় যুবরাজ সিংহ’ বললেও আমার কিন্তু ফাইনালের শতরানকারী মনজ্যোৎ কালরা-কেই যৌবনের যুবরাজ সিংহের মতো লাগল। মনজ্যোৎ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালে দেখলাম চার বা ছক্কা মারার পরের বলেই মিড অফ বা মিড অনে বল ঠেলে দিয়ে সিঙ্গলসের মাধ্যমে স্কোরবোর্ডকে ঠিক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একদম আগের যুবরাজের মতো।

ভারতীয় বোলারদের মধ্যে কমলেশ নাগরকোটি ১৯ বছরের কম বয়সে কী ভাবে ১৪০ কিমির বেশি গতিতে বল করে তার বৈ়জ্ঞানিক ব্যাখ্যা আমি পাই না। পেস বোলিংয়ের সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিং ওকে এগিয়ে রাখবে। বিশেষ করে একদিনের ক্রিকেটে।

বাঁ হাতি অফস্পিনার অনুকূল রায় লুজ বল দেয়-ই না। অ্যাকশনটা ভাল। ঠিকঠাক জায়গায় বলটা রাখে। আর এক বাঁ হাতি স্পিনার অভিষেক শর্মার হাতে অস্ত্র আর্মার। ওর বয়স যত বাড়বে ততই পরিণত হবে।

এ বার আমাদের ঘরের ছেলে ঈশান পোড়েল। ফাইনালে ৩০ রানে দুই উইকেট পেয়েছে। আগ্রাসী মেজাজে গতিটা বড় অস্ত্র বাংলার হয়ে রঞ্জিতে খেলে ফেলা এই জোরে বোলারের। গতির সঙ্গে সিম মুভমেন্টটা যদি রপ্ত করতে পারে, তা হলে ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তবে আগামী দু’তিন বছর ওকে ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করতে হবে। তা হলেই ভারতীয় ‘এ’ দলের দরজা খুলে যাবে ওর সামনে। আর এক বার ভারতীয় ‘এ’ দলের দরজা খুলে গেলে সেখানে ভাল পারফর্ম করে জাতীয় দলে ওর ঢুকে পড়াটা সময়ের অপেক্ষা। তবে ওকে এখনও বোলিং স্কিল, ফিটনেস বাড়াতে হবে। সঙ্গে ধরে রাখতে হবে ফোকাসটাও। না হলে কিন্তু বড় মঞ্চে সুযোগ আসবে না। বাংলা থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েও অনেকে কিন্তু এই ফোকাস ধরে রাখতে না পেরেই জাতীয় দলে ঢোকার দরজা খুলতে পারেনি। এটা ঈশানকে মনে রাখতে হবে বড় মঞ্চে সফল হতে গেলে।

স্কোরকার্ড

অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ ২১৬ (৫০)

ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ ২২০-২ (৩৮.৫)

অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯

এডওয়ার্ডস ক নগরকোটি বো ঈশান ২৮

ম্যাক্স ব্রায়ান্ট ক অভিষেক বো ঈশান ১৪

জেসন সংঘা ক দেশাই বো নগরকোটি ১৩

জনাথান মেরলো ক শিব বো অনুকূল ৭৬

পরম উপ্পল ক ও বো অনুকূল ৩৪

নাথান ম্যাকসুইনি ক ও বো শিব ২৩

সাদারল্যান্ড ক দেশাই বো শিব ৫

ব্যাক্সটার হোল্ট রান আউট (শিব) ১৩

জ্যাক ইভান্স বো নগরকোটি ১

রায়ান হ্যাডলি ক দেশাই বো মাভি ১

লয়েড পোপ ন.আ. ০

অতিরিক্ত

মোট ২১৬ (৫০)

পতন: ৩২-১ (ব্রায়ান্ট, ৫.১), ৫২-২ (এডওয়ার্ডস, ৯.৬), ৫৯-৩ (সংঘা, ১১.৪), ১৩৪-৪ (উপ্পল, ২৮.৫), ১৮৩-৫ (ম্যাকসুইনি, ৩৯.২), ১৯১-৬ (সাদারল্যান্ড, ৪১.৩), ২১২-৭ (মেরলো, ৪৫.৩), ২১৪-৮ (ইভান্স, ৪৬.১), ২১৬-৯ (হোল্ট, ৪৬.৩), ২১৬-১০ (হ্যাডলি, ৪৭.২)।

বোলিং: শিবম মাভি ৮.২-১-৪৬-১, ঈশান ৭-১-৩০-২, শিব ১০-০-৩৬-২ নগরকোটি ৯-০-৪১-২, অভিষেক ৬-০-৩০-০ অনুকূল ৭-০-৩২-২।

ভারত অনূর্ধ্ব-১৯

পৃথ্বী শ বো সাদারল্যান্ড ২৯

মনজ্যোৎ কালরা ন.আ. ১০১

শুভমান গিল বো উপ্পল ৩১

হার্ভিক দেশাই ন.আ. ৪৭

অতিরিক্ত ১২

মোট ২২০-২ (৩৮.৫)

বোলিং: হ্যাডলি ৭-০-৩৭-০ ইভান্স ৫-১-৩০-০, সাদারল্যান্ড ৬.৫-০-৩৬-০, এডওয়ার্ডস ১-০-১৫-০, পোপ ৫-০-৪২-০, মেরলো ৪-০-২১-০, উপ্পল ১০-০-৩৮-০।

৮ উইকেটে জয়ী ভারত

ম্যাচের সেরা মনজ্যোৎ কালরা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন