Emeka Ezeugo

‘ফোরলানরা এক চুলও এগোতে পারেননি ভারতীয় ফুটবলকে’

আড়াই দশক পর কলকাতায় ফিরে এখনও সেই আগের মতোই সচ্ছল নাইজেরীয় বিশ্বকাপার এমেকা ইজোগু। খেলোয়াড় জীবনে কলকাতায় কাটানো বছরগুলি যেন এখনও চোখের সামনে ভাসে এই বিশ্বকাপারের। শুক্রবার ঘুরে দেখলেন খেলোয়াড় জীবনের তিন বড় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডান। এরই ফাঁকে আনন্দবাজারের সঙ্গে জমাটি আড্ডায় মেতে উঠলেন এমেকা।খেলোয়াড় জীবনে কলকাতায় কাটানো বছরগুলি যেন এখনও চোখের সামনে ভাসে এই বিশ্বকাপারের। শুক্রবার ঘুরে দেখলেন খেলোয়াড় জীবনের তিন বড় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডান।

Advertisement

কৌশিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ১৭:৪৯
Share:

ইস্টবেঙ্গল ক্যাফেটেরিয়ায় এমেকা ইজোগু।—নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্ন: দীর্ঘ দিন পর ফিরলেন কলকাতায়। কেমন লাগছে?

Advertisement

এমেকা: এক কথায় অসাধারণ! কলকাতা বরাবরই আমার হৃদয়ের খুব কাছে। খেলোয়াড় জীবনে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা সবসময় আমাকে মাথায় করে রেখেছিলেন। সেই সব স্মৃতি আজও টাটকা।

প্রশ্ন: এমেকা বলতেই সমর্থকদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুলের সেই অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যানকে। কিন্তু আপনার চুলের অনেকটাই পরিবর্তন দেখছি। কোনও বিশেষ কারণ আছে নাকি?

Advertisement

এমেকা: (হাসি) সে বহু যুগ আগের কথা। যখন খেলতাম তখন আমার ঝাঁকড়া চুল ছিল। কিন্তু খেলা ছাড়ার পর সেই চুল আর রাখিনি। এখন এটাই আমার স্টাইল।

প্রশ্ন: এত দিন পর ভারতে এলেন। ঘুরে দেখলেন কলকাতার তিন বড় ক্লাবেই। কোনও পরিবর্তন চোখে পড়লো?

এমেকা: সত্যি বলতে এক চুলও এগোয়নি ভারতীয় ফুটবল। সেই আগের মতোই গতানুগতিক ভাবে চলছে ক্লাবগুলো। যেখানে সারা বিশ্ব ফুটবলে উন্নতির জন্য মরিয়া, সেখানে ভারতে উন্নত মানের একটা অ্যাকাডেমিও নেই।

সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে কিংবদন্তি এমেকা।—নিজস্ব চিত্র।

প্রশ্ন: ১৫ বছর হয়ে গেল আই লিগ(অধুনা জাতীয় লিগ) আসেনি লাল-হলুদ ক্লাব তাঁবুতে। বারবার জাতীয় স্তরে কী কারণে ব্যর্থ হচ্ছে লাল-হলুদ?

এমেকা: শুধু ইস্টবেঙ্গলই নয়, মোহনবাগান-মহামেডানও সেই ভাবে জাতীয় স্তরে সাফল্য পাচ্ছে না। কলকাতার কর্তারা আমেরিকা, ইউরোপ-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনেও কোচ তুলে এনে বসিয়ে দিয়েছে দলের মাথায়। কিন্তু তাঁরা এখানকার ফুটবল কালচারটাই জানেন না। বিদেশি কোচ আনলেই সাফল্য যে আসবে তা কিন্তু নয়! সাফল্য পেতে হলে এমন কোচকে নিয়োগ করতে হবে যে ভারতীয় ফুটবলের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। যে ফুটবলারদের বোঝে তাদের ভাষাকে বোঝে।

প্রশ্ন: কলকাতার ক্লাবগুলির কাছে সব থেকে বড় সমস্যা স্পনসর জোগাড় করা। বহু চেষ্টাতেও বড় স্পনসর আনতে ব্যর্থ হচ্ছে ক্লাবগুলি। ঐতিহ্যশালী ক্লাবগুলির প্রতি কী আগ্রহ হারাচ্ছেন স্পনসররা?

এমেকা: দেখুন এখন সকলেই টাকা ঢালে মুনাফার জন্য। কেউ চোখ বন্ধ করে টাকা ঢালতে চায় না। আমি ইস্টবেঙ্গলে এসে অবাক হচ্ছি। এখানে আমার একটা ছবিও নেই। এই ক্লাব থেকে আমি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছি। অলিম্পিকেও প্রতিনিধিত্ব করেছি। খেলেছি বিশ্বকাপেও। ইউরোপে যে ক্লাবগুলিতে আমি খেলেছি, সেই ক্লাব কর্তারা এখনও স্পনসরশিপের জন্য অতীতে সেই ক্লাবে আমার খেলে যাওয়ার ইতিহাসকে ব্যবহার করেন। এখানকার ক্লাবগুলিও যদি আমাকে এখানে ব্যবহার করতে পারে তা হলে মনে হয় না স্পনসর পেতে সমস্যা হবে। যে কোনও স্পনসরই চান এমন ক্লাবে টাকা ঢালতে যেখানে বিশ্বকাপাররা খেলে গিয়েছেন।

প্রশ্ন: ভারতীয় ফুটবলে আইএসএল-এর অন্তর্ভুক্তির পর আনেলকা, ফোরলান, দেল পিয়েরোর মতো ফুটবলাররা খেলে গিয়েছেন ভারতে। আইএসএল কী ভারতীয় ফুটবলকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে?

এমেকা: কোনও ভাবেই নয়! ফোরলান, দেল পিয়েরোরা নিজেদের কেরিয়ারে শেষের দিকে খেলে গিয়েছেন ভারতে। কিন্তু ভারতীয় ফুটবল এতে কী ভাবে লাভবান হতে পারে! ভারতে ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে উন্নতমানের অ্যাকাডেমি করতে হবে, তৃনমূল স্তর থেকে ফুটবলার তুলে আনতে হবে। এ ছাড়া বড় নাম এনে কোনও লাভ নেই।

নেহরু গোল্ড কাপের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার হাতে এমেকা।—ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: ভারতে খেলে যাওয়া অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মানা হয় মজিদ বাসকরকে। এখনও মজিদের ক্রেজ আছে সমর্থকদের মধ্যে। মজিদ নিয়ে কী বলবেন?

উত্তর: মজিদের সেরা সময়ে ওর খেলা আমি দেখিনি। তবে মজিদের মতো ফুটবলার খুব কম এসেছে ভারতে। বিরল প্রতিভা। আমার সঙ্গে যখন ওর পরিচয় হয় তখন ও পুরোপুরি নেশার গ্রাসে। অনেক চেষ্টা করেছিলাম ফুটবলের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে ওকে, কিন্তু পারিনি।

প্রশ্ন: ভারতে খেলা আপনার ফুটবল কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত কোনটা?

এমেকা: বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্ত আছে। ইস্টবেঙ্গলে প্রথম মরসুমেই টপ স্কোরার হয়েছিলাম। এ ছাড়া মহামেডানের জার্সিতেও অনেক সাফল্য পেয়েছি।

প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডান তিনটি ক্লাবই ঘুরে দেখলেন। কোনও বিশেষ অনুভুতি?

এমেকা: পুরনো দিনগুলো যেন বারেবারে ফিরে পাচ্ছি। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি সশরীরে কলকাতায় এসে আমার পুরনো ক্লাবগুলো ঘুরে দেখলাম। কেমন একটা ঘোর লেগে আছে। মনে হচ্ছে যেন সেই ফুটবলার জীবনেই বিচরণ করছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন