গুয়াহাটির গরমে য়খন কাবু গ্রুপের বাকি তিন দল ফ্রান্স, নিউ ক্যালিডোনিয়া এবং হন্ডুরাস। তখন মুখ আলো করে হাসছেন জাপানের ‘মেসি’ তাকেফুসা কুবো। প্রস্তুতি নেওয়ার ফাঁকে নিজের দেশের সাংবাদিকদের কাছে তাঁর স্বস্তির প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভারতের গরমে আগে খেলেছি। প্রস্তুতির জন্য আমরা গোয়াতে ছিলাম এর আগে। তা ছাড়া এই আবহাওয়ার সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত। আর জাপানে তো সদ্য গরম কাল কাটিয়ে এসেছি আমরা। কাজেই কোনও সমস্যা নেই আমাদের। এ বার ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।’’
এগারো বছর বয়স থেকেই জাপানি ফুটবলের বিষ্ময় বালক এই কুবো। লিওনেল মেসির বেড়ে ওঠার আঁতুরঘর বার্সেলোনার ফুটবল স্কুল ‘লা মাসিয়া’ থেকে উত্থান কুবোর। ২০১১ সালে মাত্র এগারো বছর বয়সে বার্সেলোনায় গিয়েছিলেন ইউসা কাতসুমির দেশের এই প্রতিভা যেখানে প্রথম মরসুমেই ৩০ ম্যাচে ৭৪ গোল করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
রবিবার রাতে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে নিজেদের অভিযান শুরু করতে চলেছে জাপান। প্রতিপক্ষ হন্ডুরাস। আর সেই ম্যাচের আগে সূর্যোদয়ের দেশের অধিনায়ক শিমপেই ফুকোকার হুঙ্কার, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হতেই ভারতে এসেছি আমরা। আর তার জন্য সোজা হিসেব—সাতটি ম্যাচ খেলতে হবে। আর সব কটায় জিততে হবে আমাদের। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি আমরা। আর কুবো যদি নিজের ছন্দে খেলতে পারে, তা হলে আমাদের রোখা মুশকিল।’’
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ কভার করতে জাপান থেকে গুয়াহাটিতে এসেছেন প্রায় জনা পনেরো সাংবাদিক। এদের সকলেই বলছেন, এ বারের বিশ্বকাপে ম্যাজিক দেখাবেন তাঁদের ‘মেসি’ তাকেফুসা কুবো।
আরও পড়ুন: ‘নামী বাবার ছেলে হওয়ার চাপ নিতে হয় না আমাকে’
জাপানি এই ফুটবল প্রতিভা আঠারোয় পা দেওয়ার আগেই খেলতে চলেছে দু’টি অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ। এর মধ্যে একটি আবার পনেরো বছর বয়সেই। জাপানি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানা গেল এফসি টোকিও-য় খেলা এই স্ট্রাইকারের এই প্রতিভা এতটাই ঝলমলে যে চলতি বছরেই তাঁকে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে জাপান দলে নেওয়া হয়েছিল। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তাঁর গোল করানো নিয়ে হাজারো আলোচনা জাপানি সাংবাদিকদের মধ্যে।
শনিবার বিকেলে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নামার আগে প্রথামাফিক সাংবাদিক সম্মেলন করলেন জাপান কোচ ইয়োশিরো মোরিয়ামা। একপ্রকার হুমকির মতো করেই তিনি বলছিলেন, বলছিলেন, ‘‘গত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বলে খুব মুষড়ে পড়়েছিল। এ সেই খেদ মেটানোর সুযোগ পাচ্ছে কুবো। ফাঁকা জায়গায় বল পেলে ও কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা জানি আমরা। সঙ্গে এটাও জানি যে বিপক্ষ ওকে কড়া নজরে রাখবে। কিন্তু তাতেও আমাদের রাতের ঘুম যাচ্ছে না। কারণ ওকে বিপক্ষ নজরে রাখলে আমাদের অন্য ফরোয়ার্ডরা ফাঁকা হয়ে যাবে। এ বার কুবোকে নিয়ে মাথা ঘামাক বিপক্ষ। আমাদের সম্পদ আমাদের ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা।’’
তবে এরই মাঝে হন্ডুরাসকে নিয়ে চিহ্নিত জাপান অধিনায়ক শিমপেই। তিনি বলছেন, ‘‘মাঝমাঠে হন্ডুরাস বেশ শক্তিশালী। সেই জায়গায় আঘাত করতে হবে আমাদের। তা ছাড়া ইতিহাস বলছে জাপান সব সময়েই ঝটিকা আক্রমণে বিশ্বাস করে। সেই আক্রমণই হন্ডুরাসের বিরুদ্ধে গড়ে তুলবো আমরা।’’ যা শুনে হন্ডুরাস অধিনায়ক এমিলিও ক্যাম্পোস বলছেন, ‘‘জানি জাপানের বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ফুটবলার রয়েছে। তবে আমরাও কিন্তু খরগোশের মতো দৌড়ে ফুটবলটা খেলে থাকি। দেখি মাঠে নেমে কী হয়।’’
গুয়াহাটি অবশ্য সপ্তাহান্তের রাতে খরগোশের দৌড় দেখার বদলে জাপানি মেসিকে দেখতেই মুখিয়ে। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে আসল মেসি না থাকায় জাপানি মেসি দেখেই ফুটবল-উৎসব যাপন করতে চান তাঁরা।