জন্মদিনের সকালে মোহনবাগান ড্রেসিংরুমে ঢুকলে পরের দিনের ম্যাচের জন্য কী টিপস দিতেন চুনী গোস্বামী?
প্রশ্নটা শুনে সবুজ-মেরুনের অন্যতম অন্তরাত্মা আটাত্তরে পা দেওয়ার দিন সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, ‘‘ওদের বলতাম গত শনিবার প্রি-টেস্ট পাশ করেছ। এই শনিবার টেস্ট পরীক্ষাও উতরে যেতে পারলে সামনের শনিবার ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে খোলা মেজাজে নামতে পারবে। কাল সালগাওকরের সঙ্গে শুধু ডিফেন্সটা আঁটোসাঁটো রেখো।’’
টেলিপ্যাথি কি না কে জানে, যোধপুর পার্ক থেকে সাড়ে দশ কিলোমিটার দূরে মোহনবাগান মাঠে তখন সঞ্জয় সেনও পাখি পড়ার মতো তাঁর দলকে বুঝিয়ে চলেছেন, জ্যাকিচন্দদের আক্রমণের ‘বিষক্ষয়’ কী ভাবে বারাসতে করতে হবে। যা বোঝাতে র্যাম্পার্টের দিকের ছাউনিতে বাগান কোচের সামনে তখন ব্ল্যাকবোর্ড। প্রীতম কোটাল থেকে কাতসুমিদের জনে জনে নিয়ে গোয়ানদের ঘরের মাঠে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছকছেন সঞ্জয়। আর বিকেলে জেজেকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তো বাগান কোচ বলেই গেলেন, ‘‘প্রথম ম্যাচ জেতার ছন্দটা ধরে রাখতে হবে। গোল দিয়ে গোল খাওয়া চলবে না।’’
সেই সালগাওকর! এই গোয়ান টিমের বিরুদ্ধেই গত আই লিগে ঠিক দু’নম্বর ম্যাচে আটকে গিয়েছিল সঞ্জয়ের বাগান। সেই জ্যাকিচন্দ! যাঁর বিক্রমে শিলংয়ে গিয়ে দু’গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচও ২-৩ হেরে পাহাড় থেকে মাটিতে নামতে হয়েছিল আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের। তেরো বছরের অধরা আই লিগ খেতাবের সোনালি মরসুমে যেটা ছিল সাময়িক দুঃস্বপ্নের মুহূর্ত। বাগান যদি চ্যাম্পিয়নের তাজ মাথায় নামে এ বার, তা হলে জ্যাকিচন্দের মাথাতেও রয়েছে আই লিগের সেরা ফুটবলারের মুকুট।
একা জ্যাকিচন্দে রক্ষা নেই। সঙ্গে আবার এক ছেড়ে একাধিক দোসর। দেশোয়ালি উইঙ্গার সেত্যাসেন সিংহ, জোড়া স্কটিশ ডাফি-মার্টিন, তৃতীয় বিদেশি ক্যামেরুনের কেলভিন। কিপার করণজিৎ, হাওকিপ, রোকাস, অগাস্টিনের মতো দেশিরা আবার আই লিগে অনেক দিনের পোড়খাওয়া। যাঁদের দলের অস্ত্র— উইং দিয়ে গতিতে বিপক্ষ বক্সে হানা। নয়তো মিডল করিডর দিয়ে ‘ডাফি ম্যাজিক’।
যাকে ‘উল্টে দেখুন, পাল্টে গেছে’ করতে বাগান কোচের দাওয়াই— দুই সাইড ব্যাক প্রীতম, ধনচন্দ্র দৌড় থামাবেন জ্যাকি-সেত্যার। আর ডাফি-কেলভিনদের মিডল করিডরে জোনাল মার্কিংয়ে রাখবেন প্রণয়-সৌভিক। বিপক্ষের আক্রমণের সময় কর্নেল গ্লেন বা তাঁর পার্টনারের কেউ এক জন নেমে এসে মাঝমাঠে ট্র্যাফিক জ্যাম করে দিলেই নাকি ‘মিশন অ্যাকমপ্লিজড’!
বাগান শিবিরে প্রথম ম্যাচের আগে যতটা অস্বস্তি ছিল, সালগাওকর ম্যাচের আগে যেন ততটাই স্বস্তির আবহ। কারণটা অবশ্যই এত দিনে সবার জানা— ডিপ ডিফেন্সে কিংশুকের পাশে অভিষেক ঘটতে চলেছে ব্রাজিলীয় লুসিয়ানোর। যিনি এ দিন এ শহরের আস্তানায় ফেরার সময় বলে গেলেন, ‘‘টিমের জন্য আমরা চার জন (পড়তে হবে ব্যাক ফোর) নিংড়ে দেব।’’
বাগান আক্রমণে কর্নেলের সঙ্গে বলবন্ত-ই। উইংয়ে কাতসুমি, আজহার। বলবন্ত ক্লান্ত হলে তৈরি থাকছেন আইএসএল থেকে জাতীয় দলে গোল করাটা জলভাত করে ফেলা জেজে লালপেখলুয়া। তাঁর আবার এ মরসুমে প্রথম মোহন জার্সিতে নামার আগে হুঙ্কার, ‘‘গত বছর চোটের জন্য ছন্দ পাইনি। এ বার সেরা ফর্মে খেলতে চাই।’’ যা শুনে বাগান কোচের হাইভোল্টেজ হাসি মুখে উত্তর, ‘‘জেজে আসায় অপশন বেড়েছে। বলবন্ত না পারলে ও তৈরি আছে।’’
বাগানের এই ‘এক সে বড়কর এক’ তারকা দেখেই সালগাওকরের নবাগত স্কটিশ কোচ ম্যালকম টমসন বলে ফেললেন, ‘‘ওদের টিমে প্রচুর তারকা। লুসিয়ানো চলে আসায় ডিফেন্সটাও পোক্ত হয়ে গিয়েছে। আমাদের লড়াই কঠিন।’’কিন্তু ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে আনকোরা সাহেব কোচ কী করে বুঝবেন, বিপক্ষ কোচের মনের গহন কোণে শনিবার আরও একটা ‘ম্যাচ’ও যে চলবে! সামনের শনিবারই যে সেই চিরকালের ডার্বি। যে তরিতে ফুরফুরে মেজাজে ওঠার জন্য তিন পয়েন্টের পাড়ানি জোগাড়ও সালগাওকর-বধের সমানই মোক্ষ সঞ্জয়ের কাছে।
লাল-হলুদের সামনে পড়ার আগে আজই যে শেষ স্টেজ রিহার্সাল সবুজ-মেরুনের!
শনিবারে আই লিগ
মোহনবাগান: সালগাওকর (বারাসত, ৪-৩০, টেন অ্যাকশনে সরাসরি), আইজল: বেঙ্গালুরু এফসি (আইজল, ১-০০)।
গোল ও গোল আটকানোর দিকে তাকিয়ে জেজে (উপরে) ও লুসিয়ানো। সঙ্গী গ্লেন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।