সম্মান: বিমানবন্দরে ফুলের মুকুট পরিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হল ঝুলন গোস্বামীকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বিমানবন্দর থেকে বেরোতেই তিনি যেন কিছুটা অবাক। অভিব্যক্তিটাই তাঁর বদলে গেল সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি, সিএবি কর্তা, জুনিয়র ক্রিকেটারদের ভিড় দেখে। তাঁকে অভিনন্দন জানাতে এসেছেন সকলে!
সপ্তাহ দুয়েক আগেই মহিলাদের ওয়ান ডে-তে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে বিশ্বশিখরে বসেছেন। ধোনি-কোহালিদের মতো তিনিও এখন ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা। বাংলার গর্ব। মাথায় ফুলের মুকুট, গলায় গোলাপের মালা, হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে এ দিন যখন বেরোলেন বিমানবন্দর থেকে, তখন বেশ চনমনে দেখাচ্ছিল তাঁকে।
ঘরে ফিরে পাওয়া উষ্ণতায় খুশি হওয়ার পাশাপাশি ক্লান্তও দেখাচ্ছিল নতুন বিশ্বরেকর্ডের অধিকারীকে। প্রায় ৩৫ ঘণ্টার দীর্ঘ বিমানযাত্রা করে ফিরলেন কলকাতায়। পোচেসত্রুম থেকে জোহানেসবার্গ, নাইরোবি, মুম্বই হয়ে কলকাতা। তবু সাংবাদিকদের অনুরোধে বিমানবন্দরেই দাঁড়ালেন কিছুক্ষণের জন্য। বললেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে দেখে যে, আমাকে অভিনন্দন জানাতে এত মানুষ এসেছেন। সিএবি কর্তারা এসেছেন সংবর্ধনা জানাতে।’’ দুই যুগ্মসচিব অভিষেক ডালমিয়া, সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিশ্বরূপ দে-সহ বঙ্গ ক্রিকেটের আরও কয়েক জন কর্তা এসেছিলেন তাঁকে বরণ করতে।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে হইচই, তাঁর মধ্যে নিজের রেকর্ড নিয়ে আলোড়ন কোথায়! পনেরো বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনে ১৮৫ ওয়ান ডে উইকেট নেওয়ার যে নজির গড়েছেন সম্প্রতি, তা নিয়ে নিজেই উদাসীন চাকদহ এক্সপ্রেস। তাঁর মুখে বরং দলের কথাই বেশি। মেয়েদের প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক বললেন, ‘‘রেকর্ডটা করে তো ভাল লেগেছেই। কিন্তু তার চেয়ে অনেক খুশি হয়েছি, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্টের ট্রফিটা জিতে আনতে পারায়।’’ যোগ করলেন, ‘‘রেকর্ড করার জন্য তো ক্রিকেট খেলিনি। এত পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব কোনও দিন করিনি। তা ছাড়া ক্রিকেটের মতো টিমগেমে ব্যক্তিগত রেকর্ডগুলো খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই আমার এই প্রাপ্তিটা নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বসিত হইনি। ভাল লেগেছে, এই যা।’’
আরও পড়ুন: আইপিএল থাকলে আগেই বিশ্বকাপ জিততাম: সচিন
সামনেই ২৪ জুন থেকে মেয়েদের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে। তার আগে এই শিখর ছোঁয়াটা অবশ্য তাঁর দরকার ছিল বলে জানালেন ঝুলন। বললেন, ‘‘চেয়েছিলাম বিশ্বকাপের আগেই রেকর্ডটা সেরে ফেলতে। তবে এটা নিয়ে সব সময় ভেবে নিজের উপর চাপ বাড়াতে চাইছিলাম না। ছ’মাস আগে পর্যন্তও ভাবতাম, কবে ওই মাইলস্টোনটা ছুঁতে পারব। কিন্তু দেখলাম বেশি ভাবলে চাপ বেড়ে যাচ্ছে। তাই ভাবাটাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। সে দিন যখন উইকেটটা পেলাম, তখন আমার সতীর্থরাই জানাল যে, নজিরটা ছুঁয়ে ফেলেছি।’’
ঘুরেফিরে দলের সাফল্যের কথাতেই চলে আসছিলেন বারবার। বললেন, ‘‘আমরা ওখানে খুব ভাল খেলেছি, এটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ওদের এই প্রথম সিরিজ জিতলাম আমরা। ওখানে উইকেট মোটেই সোজা ছিল না। শক্ত, বাউন্সি উইকেট ছিল। বিশ্বকাপে আরও কঠিন লড়াই। ওখানেই বোঝা যাবে, আমরা সত্যিই কতটা ভাল অবস্থায় আছি। এটা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সিরিজ ছিল। তবে আমরা ভাল খেলেছি এই সিরিজে, সেটা মনোবল বাড়াবে।’’
ঝুলন গাড়িতে ওঠার সময় দেখা গেল জুনিয়র মেয়ে ক্রিকেটাররা প্রিয় ‘ঝুলনদি’-কে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। ‘দাদা’র পর এবার ‘দিদি’ও এসে গিয়েছে বঙ্গ ক্রিকেটে!