ব্যাটিংই করত ভারত, নিজের সিদ্ধান্তে প্রশ্নের মুখে জো রুট

টসে হারার পরে মাইকেল হোল্ডিংকে ইন্টারভিউতে কোহালি বলেন, তিনি টসে জিতলে ব্যাটই করতেন। ভারত অধিনায়কের এমন মন্তব্য শুনে বিশেষ করে ইংরেজ সাংবাদিকেরা হাসাহাসি করতে থাকেন।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

নটিংহ্যাম শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০৪
Share:

রুট কি ঠিক সিদ্ধান্ত নিলেন? ছবি: রয়টার্স।

ট্রেন্ট ব্রিজে ভারতীয় দলের হাতে কি বিশেষ উপহার তুলে দিলেন জো রুট? প্রথম দিনের শেষে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। ভারত তিনশোর উপরে রান তুলে দেওয়ায় অনেকেই এখন ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করতে চাইছেন, রুট কি ঠিক সিদ্ধান্ত নিলেন?

Advertisement

টসে হারার পরে মাইকেল হোল্ডিংকে ইন্টারভিউতে কোহালি বলেন, তিনি টসে জিতলে ব্যাটই করতেন। ভারত অধিনায়কের এমন মন্তব্য শুনে বিশেষ করে ইংরেজ সাংবাদিকেরা হাসাহাসি করতে থাকেন। তাঁরা নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিলেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ান্ডারার্সে বিপজ্জনক পিচে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোহালি। ভারতীয় দল ব্যাটিং করতে নামার আগে অনেক বিশেষজ্ঞই সেই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ওয়ান্ডারার্স টেস্ট ব্যুমেরাং হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। তাদের তৈরি করা বিপজ্জনক পিচে ভারতই জেতে।

এখানেও কোহালির মন্তব্য নিয়ে হাসাহাসি হলেও এটা ঠিক যে, টসে জিতলে ব্যাটই করত ভারত। কোহালি গত কালই সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় একটাই কথা ভাবা যেতে পারে। সামনের দিকে কী ভাবে এগনো যায়। আর সামনের দিকে এগনোর জন্য টসে জিতলে ব্যাটিংয়ের কথাই ভেবে রেখেছিল ভারত। ম্যাচের আগের রাতে টিম মিটিংয়ে যে আলোচনা হয় তাতে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল নিজেদের প্রতি বিশ্বাস দেখানো। সেই কারণেই কোহালি টসে হারার পরেও বলেন যে, তিনি জিতলে ব্যাটই করতেন।

Advertisement

ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সব চেয়ে ডাকাবুকো চরিত্রদের এক জন কোহালি। অন্যরা যখন বলেন, চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে চান, তিনি বলেন— চ্যালেঞ্জকে জড়িয়ে ধরতে চাই। তাঁর দর্শনটাই হচ্ছে, প্রতিপক্ষের ডেরায় ঢুকে ওদের দেখিয়ে দিতে হবে আমরা কতটা শক্তিশালী। সেই কারণেই পিছিয়ে পড়েও বিদেশের মাটিতে ইতিবাচক মনোভাব ছাড়তে নারাজ তিনি। ০-২ পিছিয়ে থাকা অবস্থাতেও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তিনি বলে দিতে পারেন, ‘‘আমরা একটা জিনিস নিয়েই ভাবছি— জেতা। এ ছাড়া কোনও রাস্তা নেই আমাদের সামনে। সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে গেলে এটাই একমাত্র পথ।’’ চোখে পড়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে, সিরিজ বাঁচিয়ে রাখা বলতে তিনি ড্রয়ের কথা বলছেন না। জেতার কথা ভাবছেন। হেড কোচ রবি শাস্ত্রীও সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলেছেন, ‘‘যা ঘটে ঘটুক, আমরা জেতার জন্য খেলব। এই দলের মধ্যে কোনও নেতিবাচক হাড় নেই।’’ এই যুগে প্রত্যেক দল তাদের নিজেদের দেশেই শুধু ভাল। কোহালি ব্যতিক্রম হতে চান। তাঁর স্বপ্ন, পৃথিবীর সর্বত্র ভাল দল হওয়া। সেই লক্ষ্যে খুব উল্লেখযোগ্য স্টেশন ইংল্যান্ড। যদি ট্রেন্ট ব্রিজে প্রত্যাঘাত করে সিরিজে ফিরে আসতে পারে ভারত, অধিনায়ক হবেন সব চেয়ে তৃপ্ত মানুষ।

ট্রেন্ট ব্রিজের প্রথম দিনকে কী ভাবে দেখছে দল? ‘‘কাজ সবে শুরু হয়েছে। এখনও অনেক রাস্তা বাকি,’’ সাবধানী গলায় বললেন এক জন। কোহালি-রাহানের পার্টনারশিপের পরে ঋষভ পন্থের ব্যাটিং দেখে প্রভাবিত সকলে। আশা করা হচ্ছে, অশ্বিনকে সঙ্গে নিয়ে ঋষভ আরও কিছু রান যোগ করে নিতে পারবেন। ঘরোয়া আলোচনায় ভারতীয় দলের অনেকে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, নিজেদের একশো নয়, দলের তিনশো চাই। কাঙ্ক্ষিত সেই তিনশো হয়ে গিয়েছে। এর পর যা রান হবে, সেটা বোনাস। যদি বোলাররা ওয়ান্ডারার্সের মতো পাল্টা প্রত্যাঘাত করতে পারেন, তা হলে আশাবাদী হওয়াই যায়।

তখন কে বলতে পারে, পাল্টা চাপে পড়ে যাবেন না ইংল্যান্ড অধিনায়কই? ট্রেন্ট ব্রিজে প্রথম দিনের শেষেই চর্চায় তাঁর বল করার সিদ্ধান্ত। গ্রেম সোয়ান নটিংহ্যামের ঘরের ছেলে। এখানে প্রচুর ম্যাচ খেলেছেন। তিনিও বলছিলেন, ‘‘জানি না ঠিক সিদ্ধান্ত নিল কি না রুট। ও বোধ হয় ভেবেছিল, ভারত মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।’’ রুট বোধ হয় আশা করেননি, কোহালি-রাহানেরা যেমন বিচক্ষণতার সঙ্গে বল ছাড়বেন, তেমনই জায়গা পেলেই শট খেলবেন। কুমার সঙ্গকারা বলছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ডে খেলার মন্ত্র হচ্ছে, দেরিতে খেলো। সোজা খেলে রক্ষণ সামলাও। রান করো আড়াআড়ি খেলে। ভারত আজ ঠিক সেটাই করেছে।’’

সফরে প্রথম বার ভারতের জন্য প্রশংসা। ইংল্যান্ডের জন্য প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন