চাই ড্র: প্রার্থনা সুভাষের। ছবি: উৎপল সরকার
মোহনবাগান-৩ (বোয়া-২, বলবন্ত)
সাদার্ন সমিতি-১ (স্ট্যানলি)
মঙ্গলবার অঘটনের আশায় মাঠে আসবেন?
লিগের শেষ ম্যাচে সাদার্নকে ৩-১ হারিয়ে উঠে মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী বলে গেলেন, “দুটো বড় ম্যাচে হারের মাসুল গুনতে হল। লিগ নিয়ে আমরা কোনও আশাও করছি না, ভরসাও করছি না। অলৌকিক কিছু হলে খবর পেয়ে যাব।” বাগান টিডি সুভাষ ভৌমিকও ফুটবলারদের বলে দিয়েছেন সামনের দিকে তাকাতে।
মঙ্গলবার যদি ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জ অগ্রগামী ম্যাচ ড্র না হয়, তা হলে ফের সেই ট্রফিহীন পরিবেশ বাগানে। চার মরসুম ট্রফিহীন ক্লাব কোনও ‘সবুজ বুট’ও কি দেখতে পায়নি?
কী এই ‘সবুজ বুট’? ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশের হেড কনস্টেবল ছিলেন সেওয়াং পালজোড়। যাঁর নিথর অবিকৃত দেহ আজও রয়ে গিয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫০০ মিটার উঁচুতে। এভারেস্টে ওঠার পথে। ছিয়ানব্বইতে এভারেস্ট বিজয় সেরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ি ফেরা হয়নি পালজোড়ের। কিন্তু তাঁর পায়ের ‘সবুজ বুট’ আজও এভারেস্টে ওঠার পথে শেষতম পথ-নির্দেশিকা। যা দেখলে অভিযাত্রীরা বোঝেন, ৮৫০০ মিটার চলে এসেছি। আর ৩৪৮ মিটার এগোলেই শৃঙ্গজয়!
লিগ সুভাষের দল শেষ পর্যন্ত জিতবে কি না তা মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। কিন্তু তাঁর দলের খেলা অনেক ‘সবুজ বুট’ দেখিয়েছে। ফলে সিকিম গভর্নর্স কিংবা ডুরান্ড কাপ থেকে ট্রফি-খরাও ঘুচতে পারে বাগানে।
সবুজ বুট-১) বলবন্ত-বোয়া-কাতসুমি ত্রিভুজ: বাগানের স্বদেশী গোলমেশিন বলবন্ত এ দিনও গোল করলেন। বোয়ার প্রথম গোলেও তাঁর অবদান। পঞ্জাব দা পুত্তরের গোলক্ষুধা দুর্নিবার। বল স্ক্রিনিংও চমৎকার। তাঁর চোরা গতি সাদার্নের বিরুদ্ধেও দেখা গেল। এর সঙ্গে বোয়ার দ্রুত জায়গা নেওয়ার দক্ষতা আর কাতসুমির গতিও একটা দুর্দান্ত কম্বিনেশন।
সবুজ বুট-২) উজ্জ্বল ও পঙ্কজের উইং প্লে: নামে এই দু’জন বোয়া-কাতসুমির মতো ভারি না হলেও তাঁদের ত্রিভুজকে সক্রিয় রাখতে দুই বাঙালি উজ্জ্বল এবং পঙ্কজের অবদান কম নয়। উজ্জ্বলের গতি এবং পঙ্কজের একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে ড্রিবল করার দক্ষতা চোখ টানছে।
সবুজ বুট-৩) গোলকিপার দেবজিৎ: বাঙালি গোলকিপার নিয়ে শ্বাস ওঠার দিনে উত্তরপাড়ার এই ছেলে তাজা অক্সিজেন। ব্যাক ফোরের পিছনে সারাক্ষণ কথা বলে রক্ষণকে সতর্ক রাখে। রিফ্লেক্স, অনুমানক্ষমতা, আউটিং দুর্দান্ত। এ দিনও তিনটি অনবদ্য সেভ করে জাত চেনালেন।
সবুজ বুট-৪) টিম স্পিরিট:পরপর দু’টো বড় ম্যাচ হারের পর সুভাষের এই রিজার্ভ বেঞ্চই কিন্তু টানা পাঁচ ম্যাচ জেতাল। রবিবার জ্বরের জন্য অনুশীলনে না আসা সুখেন দে যেমন কাঁপতে কাঁপতে এসেও ম্যাচ খেলে গেলেন। বোয়ার দ্বিতীয় গোল শ্যামনগরের এই ছেলের ওভারল্যাপ থেকেই।
তা হলে সামনে কি দুর্যোগ নেই? আছে। সেগুলো এ রকম: ১) ব্যাক ফোরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। কভারিংও ঠিকঠাক হচ্ছে না। ২) দুই স্টপার প্রতীক এবং জনি বারবার একই সরলরেখায় চলে আসছেন ট্যাকল কিংবা রক্ষণে উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে। ৩) শেহনাজ এখনও ছন্দ পাচ্ছেন না। ব্যাক ফোর আর মিডফিল্ডের মধ্যেও আক্রমণের সময় অনেকটা ব্যবধান থাকছে। ৪) ডেড বল থেকে বিপক্ষ আক্রমণ করলে বাগান বক্সে ম্যান মার্কিং ঠিকমতো হচ্ছে না। যার সুযোগেই এ দিন স্ট্যানলির গোল।
২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মতোই বোয়া-কাতসুমিরাও মঙ্গলবারের ম্যাচ থেকে অলৌকিক কিছু আশা করছেন। আশা যে মরতে মরতেও মরে না। সেই আশা নিয়েই তাঁরা মঙ্গলবার টিভির সুইচ অন করবেন।
কলকাতা লিগ আসুক না আসুক, বাগানে এ বার ট্রফির ফুল ফুটবেই।
মোহনবাগান: দেবজিৎ, সোনম, জনি, প্রতীক, সুখেন, উজ্জ্বল (লালকমল), শেহনাজ (বিক্রমজিৎ), কাতসুমি, পঙ্কজ, বোয়া (তীর্থঙ্কর), বলবন্ত।