প্রস্তুতি:ফুরফুরে মেজাজে সনি।— নিজস্ব চিত্র।
খালিদ জামিলের ধমক খেয়ে বল পায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন হেনরি কিসেক্কা।
‘‘আমি বারবার বলছি ওয়ান টাচ খেলতে। সঙ্গে থাকবে গতি। তুমি বল পায়ে রাখছ কেন? গতি বাড়াও।’’
কর্নার থেকে বল তুললেন সনি নর্দে। সেই বলে হেড করতে যাওয়ার জন্য প্রতিপক্ষের বক্সে যাচ্ছিলেন স্টপার কিম কিমা। খালিদ তাঁকে চিৎকার করে বললেন, ‘‘কে তোমাকে উপরে উঠতে বলেছে! ওখানে যাবে কিংসলে।’’
খেলা চলতে চলতেই দু’পাশের দুটি উইং বদল হচ্ছিল বারবার। কখনও আজহারউদ্দিন মল্লিক, কখনও শেখ ফৈয়াজ আবার কখনও পিন্টু মাহাতো।
মাঝমাঠে যখন ইউতা কিনোয়াকির সঙ্গে ওমর এলহুসেইনি। তখন সামনে শুধুই দিপান্দা ডিকা। আবার ইউতা বা ওমরের মধ্যে এক জন যখন মাঠে থাকছেন, তখন ফর্মেশন বদলে যাচ্ছে ৪-৪-২ এ। সামনে ডিকার সঙ্গে হেনরি।
আই লিগ ডার্বি শুরুর তিন দিন আগে সবুজ-মেরুন অনুশীলনের এগুলো টুকরো টুকরো ছবি। যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে বৃহস্পতিবার বিকেলের অনুশীলন থেকে স্পষ্ট, পুরনো দলের বিরুদ্ধে জেতার জন্য মরিয়া খালিদ, প্রথম একাদশ তৈরির পাশাপাশি প্ল্যান বি-ও তৈরি রাখছেন। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, আই লিগ শুরু হওয়ার পরে টানা দুটো ডার্বিতে কখনও জেতেনি ইস্টবেঙ্গল। এই চমকপ্রদ তথ্য হয়তো কেউ দিয়েছেন নানা কুসংস্কারে বিশ্বাসী মোহনবাগান কোচকে। সে জন্যই খালিদ জীবনের প্রথম ডার্বি জয়ের স্বাদ পেতে এত মরিয়া।
দেড় বছর পরে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে নামছেন সনি। শুধু তা-ই নয়, বহু দিন পর এই ম্যাচে কোনও চোট-আঘাতের কাঁটা নেই। আর সে জন্যই আইজলকে আই লিগ দেওয়া কোচ দল নিয়ে যোগ-বিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। দরজায় নিরাপত্তারক্ষী দাঁড় করিয়ে পড়শি ক্লাবের স্প্যানিশ কোচ যখন গোপনে সাইয়ের মাঠে অনুশীলন করছেন, তখন খালিদের ‘ক্লাস’ খোলামেলা। খালিদ বলে দিচ্ছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল শক্তিশালী দল। স্বদেশী ও বিদেশিরা খুব ভাল। কিন্তু ডিকা এবং হেনরির মতো দু’জন ভাল স্ট্রাইকার থাকাটা মোহনবাগানকে কিছুটা হলেও সুবিধে দেবে।’’
আই লিগের প্রথম পর্বে খেলেননি সনি। চোটের জন্য বসে ছিলেন। মোহনবাগান ২-৩ গোলে ম্যাচ হেরেছিল। সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে হাইতি মিডিয়ো নামায় পালতোলা নৌকার সওয়ারিরা বাড়তি সুবিধা পাবেন বলাই যায়। সনি খেলছেন, অথচ মোহনবাগান ডার্বি হেরেছে গত তিন বছর সেটা হয়নি। এ বার কী হবে?
বুধবার ছুটির পর বৃহস্পতিবার সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টার অনুশীলন হল মোহনবাগানে। তার মধ্যেই দফায় দফায় আলোচনা। খালিদের অনুশীলন দেখে মনে হল, ডার্বি না জেতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হাতে থাকা সব অস্ত্রই তিনি সুচারুভাবে প্রয়োগ করতে চান জবি জাস্টিনদের উপর। বলছিলেন, ‘‘আগে কী হয়েছে মনে রাখতে চাই না। রবিবার পজিটিভ রেজাল্ট চাই। দলে কোনও চোট আঘাত নেই। এটাই আমার পজিটিভ দিক।’’
তবে পুরো অনুশীলনে সবুজ মেরুন কোচের সব চেয়ে বেশি নজর ছিল রক্ষণের দিকে। শেষ দু’ম্যাচে গোল খায়নি মোহনবাগান। শঙ্করলাল চক্রবর্তীর আমলে ১১ ম্যাচে ১৪ গোল খেয়েছিল মোহনবাগান। সেই দল কী ভাবে বদলে গেল? খালিদ বলে দিলেন, ‘‘ফাঁকফোঁকরগুলো ভরাটের চেষ্টা করছি। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও সেটাই বজায় রাখতে চাই। আর সে জন্যই এ দিন স্টপারে কিংসলে ও কিম কিমাকে রেখে দুই সাইডব্যাক বারবার বদলালেন খালিদ। আরিজিৎ বাগুই, গুরজিন্দর কুমার, অভিষেক আম্বেকরদের বারবার বোঝালেন, ইস্টবেঙ্গলের উইং কী ভাবে কার্যকর হয়। আলেসান্দ্রোর দলে ডার্বিতে যাঁরা খেলবেন তাঁদের মধ্যে অন্তত চার জন খালিদের সঙ্গে গত বছর ড্রেসিংরুমে সময় কাটাতেন। লালরাম চুলোভারা বিপক্ষে থাকাটা কি বাড়তি সুবিধে? খালিদসুলভ জবাব দিলেন খালিদ। বললেন, ‘‘সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই আছে। সুবিধে এদের আমি চিনি, অসুবিধে ওরাও আমাকে চেনে।’’
মোহনবাগানের খেতাব জেতার সুযোগ নেই। আপাতত ডার্বি জিতে যতটা সম্ভব ভদ্রস্থ জায়গায় যাওয়াই লক্ষ্য সনিদের। কর্তারাও আর এই দল নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। অনুশীলন ছেড়ে তাঁরা এ দিন বিকেলে কর্মসমিতির সভায় বসেছিলেন ক্লাব তাঁবুতে। সেখানে সিদ্ধান্ত হল, পরের মরসুমে মোহনবাগান খেলবে আইএসএলে। তিন সদস্যের কমিটি তৈরি হল স্পনসর খোঁজা ও বাকি কাজ করার জন্য। তার আগে অবশ্য চার পদাধিকারীর কাছে থাকা শেয়ার ফিরিয়ে দেওয়া হল ক্লাবকে। স্পনসর আনার জন্য যা দরকারই।