মিনার্ভা ম্যাচের আগে পুরনো মেজাজে খালিদ

সকাল সাড়ে আটটায় ক্লাব তাঁবুতে ঢুকে সভার পর সভা, অনুশীলন এবং ফের দীর্ঘ আলোচনা। দুপুর একটায় ক্লাব বেরোনোর সময় দিপান্দা ডিকা, হেনরিদের মুখে আশা এবং আশঙ্কার লুকোচুরি। কর্তাদের মতোই।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩১
Share:

মহড়া: মিনার্ভা ম্যাচের প্রস্তুতিতে সনিকে নিয়ে খালিদ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

খলিদ জামিল, আপনি কি দশ মাস আগের মতোই আছেন?

Advertisement

অপ্রিয় প্রশ্নটা শুনে মুখটা সামান্য পাংশুটে করেও সামলে নেন মোহনবাগানের নতুন কোচ, ‘‘আমি কখনও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। তবে মানুষ মাত্রেই ভুল করে। আর আমি যদি তা করে থাকি, সেটা শোধরাবার চেষ্টা করব।’’ লাল-হলুদ জমানায় গত মরসুমে ড্রেসিংরুমের সেই উদ্ধত মানসিকতার খালিদ কি বদলেছেন?

সকাল সাড়ে আটটায় ক্লাব তাঁবুতে ঢুকে সভার পর সভা, অনুশীলন এবং ফের দীর্ঘ আলোচনা। দুপুর একটায় ক্লাব বেরোনোর সময় দিপান্দা ডিকা, হেনরিদের মুখে আশা এবং আশঙ্কার লুকোচুরি। কর্তাদের মতোই।

Advertisement

ছয় বছর আগে সুভাষ ভৌমিকের সহকারী হয়ে এসেছিলেন শঙ্করলাল চক্রবর্তী। সুভাষের জায়গায় সঞ্জয় সেন এসেছিলেন পরে। তিনি পদত্যাগ করলেও শঙ্করলাল থেকে গিয়েছিলেন পদে অদলবদল করে। রিয়াল কাশ্মীরের কাছে ম্যাচ হেরে শঙ্করলালও সরে গিয়েছেন। সেই অর্থে বহু দিন পর মোহনবাগানে কার্যত কোচ বদল। কিন্তু কী আশ্চর্য, এমন আবহে খালিদের জন্য কোনও আবাহনের ব্যবস্থাই ছিল না ক্লাব তাঁবুতে! রীতি মেনে কর্তারা তো কোনও উত্তরীয় পরানইনি, কোনও পুস্পস্তবকও তুলে দেননি নতুন কোচের হাতে। গোলাপ তো দূরের কথা, কোনও সমর্থক একটা গাঁদার মালাও আনেননি পড়শি ক্লাব থেকে গত মরসুমে বিতাড়িত কোচের জন্য।

কিছুটা অনাহূতের মতোই সকাল সাতটায় ক্লাব তাঁবুতে হাজির সবুজ- মেরুনের নতুন হেডমাস্টার। তখনও মালিরা ঝাড়পোছ শেষ করতে পারেননি তাঁবুর। সোমবার রাতে ক’জন ফুটবলারের বাড়ি গিয়েছিলেন খালিদ। এ দিন সকালে তাঁবুতে এসেই সোজা মাঠে ঢুকে কয়েক পাক দিয়ে নেন। তার পর দুই বারপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন মিনিট দশেক। সকাল সাড়ে আটটায় সনি নর্দে, শিল্টন পাল, কিংসলে ওবুমেনেমরা আসার পর একে একে ডেকে, শুরু হয় আলোচনা। সহ-সচিব ও অন্য কর্তারাও এসে পড়েন। দশটায় মাঠে নেমে পড়েন সনিদের নতুন কোচ। সকাল দশটা দশে তাঁর নিজস্ব ‘শাস্ত্র’ মেনে নামে পুরো দল। ঘণ্টাখানেকের অনুশীলন শেষে সাংবাদিক সম্মেলন। তার পর ফের আলোচনা। দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত তাঁবু ছেড়ে বেরোননি খালিদ। অনুশীলনে বলার মতো দু’টো ঘটনা ঘটল। এক) শুরুর আগে হাসি-ঠাট্টায় মাতলেন ফুটবলারদের সঙ্গে। দুই) ফিজিয়ো এবং সহকারী কোচেদের সাহায্য না নিয়েই সব অনুশীলন নিজের হাতে তুলে নেওয়া। যা করতেন ইস্টবেঙ্গলেও। শোনা যাচ্ছে, তাঁর একমাত্র বিশ্বস্ত সহচর খালিদ সিদ্দিকিকে সহকারী হিসাবে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।

মোহনবাগান বনাম মিনার্ভা পঞ্জাবের খেলা। খেতাবের প্রশ্নে যে ম্যাচের গুরুত্ব প্রায় নেই-ই। তবুও শুধু খালিদের সেই বিখ্যাত ‘তুকতাক’ এবং তিনি বদলেছেন কি না, সেটা দেখার জন্যই মঙ্গলবার সকালে সবুজ মেরুন তাঁবুতে উপচে পড়েছিল মিডিয়া। কলকাতার ক্লাবে খালিদের দ্বিতীয় ইনিংস দেখার পর মনে হল, তিনি ‘উল্টে দেখুন পাল্টে গেছি’ একেবারেই হননি। বরং কিছুটা নিজেকে একটা মোড়কে মুড়ে আজ বুধবার নামতে চলেছেন গত বারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে। তাঁর অনুশীলন দেখে মনে হল লেফ্টব্যাক, স্টপার এবং মাঝমাঠে দু’একটা বদল হয়তো করবেন। বলেও দিলেন, ‘‘বড় বদল হবে না। এই ম্যাচটা নিয়েই ভাবছি। মিনার্ভা ভাল দল। পরিশ্রম করতে হবে।’’ তাঁর সুবিধা, নতুন ক্লাবে এসে প্রথম ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষকে পাচ্ছেন। কারণ মিনার্ভা ভাঙাচোরা দল। মাত্র দু’জন বিদেশি।

খালিদের সাংবাদিক সম্মেলন মানেই ‘আচ্ছে হ্যায়’, ‘কৌসিস করেগা’ ইত্যাদির বাইরে কিছু পাওয়া যায় না। এ দিনও প্রায় সেই রাস্তায় হাঁটলেন। তবে বলার মতো যা, তা হল ওঁর একটি বক্তব্য, ‘‘কোচিং করার জন্য মরিয়া ছিলাম। নতুন বছরের উপহার পেয়েছি। আমার কাছে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ।’’ সংযোজন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে যাইনি।’’

বরং অনেক স্পষ্ট কথা শোনা গেল মিনার্ভার আইরিশ কোচ পল মুনস্টারের মুখে, ‘‘কোচ বদল হলে যে কোনও দলের ফুটবলাররাই বাড়তি উদ্যম নিয়ে চেষ্টা করে। মোহনবাগান সেই সুবিধা পাবে।’’ পাশাপাশি মন্তব্য, ‘‘ওদের আক্রমণ খুব শক্তিশালী।’’ চোট-আঘাত কাটিয়ে মোহনবাগানে ছয় বিদেশিই সুস্থ। এটা তো বাড়তি সুবিধা, তাই না? খালিদ অবশ্য কথাটা মানেন না। নিজেকে বদলাতে চাইলেও তিনি তা পারছেন কই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন