—ফাইল চিত্র।
দুই দলের অনুশীলনের পোশাক একই রকম। তাই দূর থেকে ওঁদের একসঙ্গে দেখলে মনে হওয়ার উপায় নেই ওঁরা দু’জন দুই দলে। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা যুজবেন্দ্র চহাল ও কুলদীপ যাদবকে অবশ্য একই দলের হয়ে মাঠে নামতে দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু রবিবার ইডেনে দেখা যাবে সম্পূর্ণ অন্য ছবি। ভারতীয় ক্রিকেটের দুই সেরা ‘রিস্টস্পিনার’ (কব্জির মোচড়ে স্পিন করেন যাঁরা) একে অপরের বিরুদ্ধে নামবেন কাল।
কে কাকে ছাপিয়ে যাবেন, সে চিন্তায় ক্রিকেটপ্রেমীরা পড়তে পারেন। সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে চর্চাও চলছে। শুক্রবার ইডেনে নাইটদের কোচ জাক কালিসের সাংবাদিক বৈঠকেও এই প্রসঙ্গ উঠল। যার উত্তরে কালিস বলে দিলেন, ‘‘এই ধরনের ক্রিকেটে রিস্টস্পিনারদের ভূমিকা তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওদের বল বোঝা প্রায়ই খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আরসিবি-র যেমন চহাল আছে, আমাদেরও তো দু’জন রয়েছে (কুলদীপ যাদব ও পীযূষ চাওলা)। লড়াইটা জমে যাবে।’’
দুই তারকা স্পিনারের অবশ্য এ সব নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদের আড্ডার মেজাজ দেখে তা আন্দাজ করে নিতে অসুবিধা হল না। ক্লাব হাউজ-এর সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ গল্পে মেতে উঠলেন ‘কুল-চা’ জুটি। রবিবার যে তাঁদের দ্বৈরথ, কে বলবে?
কেকেআর-আরসিবি লড়াইয়ের দু’দিন আগে ইডেনে তেমন বারুদের গন্ধ পাওয়া গেল না। যাবে কী করে? আসল যোদ্ধারাই যে এখনও ময়দানে নামেননি। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে কলকাতায় পৌঁছলেন বিরাট কোহালি, এবি ডিভিলিয়ার্স, কোরি অ্যান্ডারসন, কুইন্টন ডি’কক-রা। শনিবার বিকেলে তাঁরা মাঠে পা রাখার পরেই বোধহয় আসল যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নেবে ইডেন। তার আগে পর্যন্ত কুলদীপদের মতোই সৌহার্দ্যের পরিবেশ চারদিকে।
কেকেআরের অন্দরমহলে অবশ্য কিছুটা উত্তাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত। কালিসের যেমন বিপক্ষের অধিনায়ক বিরাট কোহালির কথা শুনেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। বলে দিলেন, ‘‘ওদের দলে একটাই ব্যাটসম্যান আছে নাকি যে, ওর জন্য আলাদা পরিকল্পনা করে রাখব? ওদের সব ব্যাটসম্যানের জন্যই আমাদের ছক তৈরি রয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে সেগুলো ঠিক কাজে লাগানো হবে।’’ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম, ডিভিলিয়ার্স, অ্যান্ডারসন ও কোহালি— এঁদের একসঙ্গে সামলানোটা যে বড় লড়াই, তা স্বীকার করে নিয়ে কালিস বললেন, ‘‘আরসিবি ভাল দল। শুরুটা ভাল হলে দলের ক্রিকেটাররা তাদের দায়িত্ব দ্রুত বুঝে নিতে পারে। ওদের বিরুদ্ধে আমাদের ভাল খেলার নজির আছে। এ বারও ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে আমাদের।’’ বড় রান তোলার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেল আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন-কেও। থ্রো ডাউন নিয়ে বড় শটের অনুশীলন করলেন দু’জনেই।
অন্য দিকে, নতুন বলের সঙ্গী টম কুরানকে সঙ্গে পেয়ে বেশ উত্তেজিত অস্ট্রেলীয় পেস তারকা মিচেল জনসন। শুক্রবার নেটে তাঁকে বেশ চনমনে লাগল। নাইটদের ফেসবুক পেজে জনসনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘ভারতে এর আগে অনেক বার বোলিং করেছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। আইপিএলের যা তীব্রতা, তাতে বলের গতি, সুইং কোনওটাই কমানো চলবে না। ইডেনের উইকেটে বোধহয় বাউন্স ও গতি আছে। পেসারদের পক্ষে এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?’’
সামনের দিকে ঝুঁকে একটু অন্য রকমের রান-আপ নিয়ে বল করা কুরানের সঙ্গে এ দিন অনেকক্ষণ কথা বলেন জনসন। ভারতের দুই পেসার কমলেশ নগরকোটি, শিবম মাভিকেও বেশ পছন্দ জনসনের। বললেন, ‘‘ছেলেগুলো খুবই প্রতিভাবান। ওদের শেখার আগ্রহও যথেষ্ট। উন্নতি করবে ওরা।’’ তবে কুরান-কে নিয়ে তাঁর পড়ে থাকা দেখে মনে হল, ইংল্যান্ডের এই তরুণের সঙ্গেই নতুন বল নিয়ে বোলিং শুরু করতে চাইছেন। কালিসও যে সেটাই চান, সেই ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, ‘‘কুরানের কাছ থেকে উত্তেজক কিছু দেখার আশায় আছি। মিচেল স্টার্কের জায়গায় ওকে বড় দায়িত্ব নিতে হবে।’’
গতবার ইডেনে ৪৯ রানে ধ্বংস হওয়ার বদলা নিতে আসছেন যাঁরা, তাঁদের রুখতে তো গতির ঝড় তুলতেই হবে জনসনদের।