মুখোমুখি: ইডেনে কলকাতার স্পিন ত্রয়ী নারাইন, পীযূষ ও কুলদীপ। ফের কি নাইটদের ছোবল দেওয়ার অপেক্ষায় রোহিত? ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আইপিএলে দু’টি দলের ভাগ্য নির্ধারণকারী দু’টি ম্যাচ। একটি হয়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের ঘরের মাঠে। রোহিত শর্মারা জিতেছেন। ফিরতি পর্ব আজ নাইটদের ঘরের মাঠে। আইপিএল টেবলে এখন সাপ-লুডো খেলা চলছে। ইডেনে যারা জিতবে মই বেয়ে উপরে উঠবে। যারা হারবে, সাপের মুখে পড়বে। বুধবারের মহারণে নাইটদের কাঁটা কী? মুম্বইয়ের চমক কে? ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন কারা? খোঁজার চেষ্টা হল—
নারাইন কোথায় ব্যাট করবেন: কেকেআরের ব্যাটিং ভীষণ ভাবেই তাদের দুই ওপেনারের ওপর নির্ভরশীল। ক্রিকেটীয় দিক থেকে দারুণ জুটি সুনীল নারাইন এবং ক্রিস লিন। একে তো বাঁ হাতি ও ডান হাতির যুগলবন্দি। বোলারদের সারাক্ষণ লাইন-লেংথে তারতম্য ঘটাতে হচ্ছে। তার ওপর দু’জনের শক্তি দু’রকম। নারাইন স্পিন ঠ্যাঙাতে পারেন, লিন পেসারদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক পেসার আনলে নারাইন রান নিয়ে স্ট্রাইক দিয়ে দেবেন লিনকে। আবার স্পিনার আক্রমণে এলে লিন বেশি বল খেলতে দেবেন নারাইনকে। সমস্যা হল, বেশির ভাগ দলই এখন ধরে ফেলেছে কী ভাবে দু’জনকে আটকাতে হবে। লিনকে রিস্টস্পিনার (যাঁরা কব্জির ব্যবহারে স্পিন করান যেমন যুজবেন্দ্র চহাল বা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মায়াঙ্ক মার্কণ্ডে) দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। নারাইনকে তেমনই ফাস্ট বোলার দিয়ে শরীর তাক করে গতিসম্পন্ন, শর্ট বল করা হয়। আজ মুম্বইও অবধারিত ভাবে এই ফর্মুলা প্রয়োগ করবে। ম্যাক্লেনাঘানের শর্ট বল থেকে রক্ষা করতে কেকেআর নারাইনকে পরে পাঠিয়ে রবিন উথাপ্পাকে দিয়ে ওপেন করায় কি না, সেটাই দেখার।
অস্ত্র স্পিন, পেস-সহায়ক পিচ: ইডেন এখন আর স্পিনারদের স্বর্গ নেই। পেস বোলাররা বেশি সাহায্য পাচ্ছেন। কেকেআরের বোলিং আবার স্পিন-নির্ভর। সুনীল নারাইন, পীযূষ চাওলা, কুলদীপ যাদবকে নিয়ে শাহরুখ খানের দলের স্পিন আক্রমণ সম্ভবত আইপিএলের সেরা। মিচেল স্টার্ককে নিলামে চড়া দামে কিনলেও চোটের জন্য তাঁকে পায়নি নাইটরা। মিচেল জনসন অনেক রান দিয়ে ফেলছেন। তাঁকে পুরো চার ওভার বল করানো যাচ্ছে না। ওয়াংখেড়েতে ওপেনিং জুটিতে ৯১ রান তুলে ফেললেন এভিন লুইস এবং প্রাক্তন নাইট সূর্যকুমার যাদব। নাইটদের বিদেশি পেস বোলিং বলে কিছু নেই। টানছেন এখন দেশিরাই। সেরা অস্ত্র অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের হয়ে নজর কাড়া শিবম মাভি। কেকেআর প্রার্থনা করবে, আঙুলের চোট সারিয়ে আজ যেন খেলতে পারেন মাভি।
মাঝে মন্থর, শেষেও উদ্বেগ: কেকেআরের ব্যাটিংয়ে মাঝের দিকে ঝড় তোলার কেউ নেই। শেষের দিকেও বড় স্ট্রোক নেওয়া ব্যাটসম্যানের অভাব। রবিন উথাপ্পা ভাল শুরু করেও লম্বা ইনিংস খেলতে পারছেন না। নীতীশ রানা ছন্দ হারিয়ে ফেলছেন ২০-৩০ বল খেলার পরে। ওয়াংখেড়েতে শেষের ওভারগুলিতে যশপ্রীত বুমরা এবং হার্দিক পাণ্ড্য আটকে দেন দীনেশ কার্তিক এবং আন্দ্রে রাসেলকে। এই দু’জনই কেকেআরের ‘ফিনিশার’। তাঁদের ভোঁতা করতে পারলেই কেল্লা ফতে!
নতুন আবিষ্কার মার্কণ্ডে: মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হাতে একটা আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ আছে। তার নাম ‘এম আই ওপেন ক্যাম্প’। প্রত্যেক বছর আইপিএল শুরুর মাস ছয়েক আগে তারা আয়োজন করে এই বিশেষ শিবিরের। ‘ওপেন’ কারণ যে কোনও অখ্যাত, উঠতি ক্রিকেটারও যোগ দিতে পারেন। সারা বছর ধরে বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ঘুরে বেড়ান মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রতিভা অন্বেষণকারী কোচের দল। নিঃশব্দে বিভিন্ন শহরে হানা দিয়ে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেন তাঁরা আর তুলে আনেন নতুন সব রত্ন। অতীতে মুম্বইয়ের এই প্রকল্প উপহার দিয়েছে হার্দিক পাণ্ড্য এবং যশপ্রীত বুমরার মতো প্রতিভা। এ বারের চমক মায়াঙ্ক মার্কণ্ডে। বুধবারের ইডেনে কেকেআরের প্রতিপক্ষ মুম্বইয়ের এই প্রতিভা অন্বেষণকারী কোচেরাও। যে তালিকায় আছেন রাহুল সঙ্ঘভি, কিরণ মোরেরা। পঞ্জাবে একটি অনূর্ধ্ব-২৩ প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়ে যাঁরা কুড়ি বছরের লেগস্পিনার মর্কণ্ডকে আবিষ্কার করেন। তারপর ঘষামাজা করে প্রথম ম্যাচ থেকেই তাঁকে আইপিএলের মঞ্চে ছেড়ে দেন তাঁরা। আর মায়াঙ্ক শুরুই করেন প্রথম ম্যাচে তিন উইকেট এবং অসাধারণ গুগলিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে বোকা বানিয়ে আউট করা দিয়ে। ফাস্ট বোলার থেকে স্পিনারে পরিণত হওয়ায় বলে গতি বেশি। গুগলি ধরতে পারছেন না ব্যাটসম্যানেরা। কলকাতার সামনে আজ সুযোগ সুদর্শন লেগস্পিনারকে দেখার। ইডেনে প্রতিভার চকমকি পাথরে ঠোকাঠুকি হয়ে ফের জ্বলতেই পারে তারুণ্যের মশাল। মুম্বইয়ের মার্কণ্ডে, পাণ্ড্য ভাইরা। কেকেআরে শুভমন গিল, শিবম মাভিরা।
ফুরিয়ে আসা পোলার্ড: বিরাট কোনও পটপরিবর্তন না হলে ইডেনেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নীল জার্সিতে দেখা যাবে না কায়রন পোলার্ডকে। শোনা গেল, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা খেলার জন্য ছটফট করছেন। দলের সঙ্গে খুব মন দিয়ে অনুশীলন করছেন। কিন্তু এখনই সুযোগ পাওয়া কঠিন কারণ দল পরিচালন সমিতি বেশি আস্থা রাখছে ডুমিনির ওপর। বলে না, জীবন ভাঙা-গড়ার ক্রিকেট! আজ যে রাজা, কাল সে-ই হয়তো সুযোগের প্রার্থনায় বসে থাকা ফকির!