শহরে টিম ইন্ডিয়া। সোমবার বিমানবন্দরে রায়না। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজের জন্য ভারতীয় দলটা ভাল হয়েছে। কোনও জাতীয় দল নির্বাচনের অবশ্যম্ভাবী দু’টো শর্ত ঠিক ওই সময় কে দারুণ ফর্মে আছে। আর দলটা কোথায়, কী রকম পরিবেশে খেলছে, তার উপযোগী প্লেয়ার বাছা। বিশেষ করে নতুন মুখ নির্বাচনের ক্ষেত্রে শর্ত দু’টো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অস্ট্রেলিয়ার জন্য ওপেনার কেএল রাহুল আর লেগ স্পিনার কর্ণ সিংহের নির্বাচন সেই দু’টো শর্তই পালন করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান উইকেটে এক জন রিস্ট স্পিনারের সব সময় এক জন ফিঙ্গার স্পিনারের চেয়ে বেশি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া কর্ণ ঠিক অর্থোডক্স লেগ স্পিনার নয়। অনেকটা কুম্বলে টাইপ। মানে ওর বলটাও হাওয়ায় একটু বেশিই তাড়াতাড়ি যায়। বাউন্সও বেশি। অনেকে বলতে পারেন, অস্ট্রেলিয়ায় তিন জন স্পিনার নিয়ে যাওয়ার কী দরকার? খেলবে তো এক জন। কিন্তু সিডনি বা অ্যাডিলেডে দু’জন স্পিনার খেলতেই পারে। সে ক্ষেত্রে কর্ণ ম্যাচ উইনার হয়ে উঠতে পারে। আমার মতে বিশ্ব ক্রিকেটে ওর মতো এক জন মোটামুটি অপরিচিত লেগ স্পিনার অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের এক্স ফ্যাক্টর।
রাহুলকে গত দু’মরসুম ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সামনে থেকে দেখার পর বলতে পারি, ও এর আগে অস্ট্রেলিয়ার পিচে না খেললেও ও রকম বাড়তি বাউন্সে ব্যাট করার সঠিক টেকনিক ওর খেলায় আছে। ফ্রন্টফুট-ব্যাকফুট দু’টোতেই স্বচ্ছন্দ। তবে ব্যাকফুটে বেশি ভাল। যেটা অস্ট্রেলিয়ায় বেশি দরকার পড়ে। সবচেয়ে বড় কথা, রাহুল প্রতিটা বল খেলার জন্য বাড়তি সময় পায়। সে জন্যও ওকে বাউন্সি উইকেটে অসহায় দেখানোর সম্ভাবনা কম। তা ছাড়া, এই মুহূর্তে ঘরোয়া ম্যাচে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করছে। ধারাবাহিক ভাবে। এই সময়ই এক জন তরুণকে সুযোগ দিয়ে নির্বাচকেরা ভালই করেছে।
বাকিরা প্রায় সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরীক্ষিত এবং সফলও। তবে তার মধ্যেই রায়নার টেস্ট দলেও থাকা নিয়ে কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন তুলবেন। কিন্তু রায়না ইংল্যান্ডে ওয়ান ডে সিরিজ থেকে টানা বড় বড় রান করে চলেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, শর্ট বলে ও এখন কেবল খুব ভাল পুল-ই মারছে না, যে বলগুলো ছাড়ছে তাতেও ক্রিজে ওর শরীরের পজিশন শর্ট বল সামলানোর প্রশ্নে একেবারে সঠিক হচ্ছে।
সফরে ধোনির প্রথম টেস্ট না খেলা নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সিরিজের প্রথম টেস্টে ধোনির না খেলাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? এটা ঠিক, বিরাট কোহলির উপর একটা বাড়তি চাপ পড়বে। কিন্তু সেই চাপ সামলানোর জন্য মানসিক প্রস্তুতির সময়টা বিরাট কোহলি পেয়ে যাচ্ছে। এটা যদি টেস্টের দু’এক দিন আগে হত, তা হলে বিরাটের কাজটা সত্যিই কঠিন হয়ে যেত।
বরং আমি একটা অন্য ব্যাপার ভাবছি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দু’টো নিয়মরক্ষার ওয়ান ডে-তেও মনোজ তিওয়ারি সুযোগ না পাওয়ায় আমার যতটা বেশি খারাপ লাগছে, তেমনই অস্ট্রেলিয়া সফরে সহবাগকে রেখে নির্বাচকেরা একটা ‘গ্যাম্বেল’ খেললে আমি খুশিই হতাম। বীরু শেষ ছয় মাস ঘরোয়া ম্যাচে বল করছে। ওর অফস্পিন অস্ট্রেলিয়ায় কাজে লাগালে ভারতের প্রথম এগারোয় আরও বিকল্প তৈরি হত। সহবাগ খেললে এক জন ওপেনারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি স্পিনারও থাকত। সে ক্ষেত্রে চার জন পেসার খেলিয়েও মিডল অর্ডারে এক জন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানোর সুযোগ পাওয়া যেত।
ডনের দেশে ভাল করার জন্য এটুকু ফাটকা বোধহয় খেলাই যেত!
কোহলির জন্য আমি খুব খুশি। ভাল প্লেয়ার। ব্যাটিংটা আনন্দ দেয়। যা করছ, করে যাও... নিজেকে বদলিও না। নিজের মতোই থাকো।
টুইটারে ভিভ রিচার্ডস