অভিনন্দন: নায়ক কুলদীপকে সতীর্থের আলিঙ্গন। পিটিআই
শনিবারের ধর্মশালায় ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করলেন কে? স্কোরবোর্ড বলছে, অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা ভারতের প্রথম চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব। কিন্তু অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমের একটা অংশের দাবি, উইকেটটা আসলে শেন ওয়ার্নের!
দিনের নায়ক কুলদীপও স্বীকার করে নিচ্ছেন, অস্ট্রেলীয় ওপেনারের আউট হওয়ার পিছনে অবদান রয়েছে ওয়ার্নের। দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এসে তরুণ বাঁ-হাতি স্পিনার বলেছেন, ‘‘আমার প্রথম উইকেটটা দেখলেন? ওয়ার্নারকে কী ভাবে আউট করলাম? ওটা কিন্তু চায়নাম্যান ছিল না। ফ্লিপার ছিল। যেটা আমি ওয়ার্নের কাছ থেকেই শিখেছি। ওয়ার্নের কাছ থেকে শেখা ডেলিভারিতে ওয়ার্নের দেশের ব্যাটসম্যানকে আউট করছি, এটা একটা দারুণ অনুভূতি।’’
অসাধারণ, রহস্যময়, জাদুকরী, প্রতিভাবান, নতুন তারকা। শনিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অভিষেকে চার উইকেট নেওয়া কুলদীপকে এই ভাবেই কুর্নিশ করছে ক্রিকেট দুনিয়া। টেস্ট চলাকালীন সচিন তেন্ডুলকরের টুইট, ‘‘কুলদীপকে দেখে দারুণ লাগল। ওর বৈচিত্র খুব ভাল। যে ভাবে ও শুরু করল, সেটাও দারুণ। চালিয়ে যাও, এই ম্যাচটা তোমার হতে পারে।’’ টুইটারে সহবাগ লিখেছেন, ‘‘এই চিনের মালের লম্বা গ্যারান্টি আছে।’’
কলকাতা নাইট রাইডার্সের ২২ বছরের এই স্পিনারকে পুণে টেস্টের সময় ওয়ার্নের কাছে নিয়ে যান অনিল কুম্বলে। যা নিয়ে কুলদীপ বলছেন, ‘‘আমি ছোটবেলা থেকেই ওয়ার্নের বোলিং দেখেছি। তবে সবই ভিডিওয়। ওকে সামনে থেকে দেখতে পাওয়াটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ছিল। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমার নায়কের সঙ্গে কথা বলছি। ভবিষ্যতেও আমাকে সাহায্য করবেন বলে কথা দিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: স্মিথ এখন নতুন ‘ডন’
শনিবার ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন কুলদীপ। কিন্তু যে বলে তিনি অস্ট্রেলীয় ওপেনারকে ফেরালেন, সেটা তাঁর করাই হতো না ছোটবেলার কোচের কথা না শুনলে। ক্রিকেট জীবনের একেবারে শুরুতে ফাস্ট বোলার হতে চেয়েছিলেন কুলদীপ। ওয়াসিম আক্রমকে ‘গুরু’ বলে মানতেন। কিন্তু ৪-৫ মাস পেস বল করার পরে কোচ কপিল পাণ্ডে পরামর্শ দেন, স্পিনটা করতে। সেখান থেকেই জন্ম এই চায়নাম্যান বোলারের।
ভারতীয় টেস্ট দলের প্রথম চায়নাম্যান বোলার বলছিলেন, ‘‘আমি যখন ছোটবেলায় বল করা শুরু করেছিলাম, তখন আমার স্বাভাবিক বোলিং অ্যাকশনটাই চায়নাম্যান ছিল। তখন জানতাই না চায়নাম্যান কী। বা এ রকম কোনও বল হয় কি না।’’
প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথকে বল করার অভিজ্ঞতা কেমন? কুলদীপ বলছেন, ‘‘স্মিথকে বল করতে আমার কোনও সমস্যাই হয়নি। ও আমাকে আক্রমণ করার রাস্তায় যায়নি। হতে পারে স্মিথ আমার বিরুদ্ধে কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। উল্টো দিকে উইকেট পড়ছিল বলে হয়তো ও একটু সতর্ক ছিল।’’
উত্তরপ্রদেশের উন্নাও গ্রামের ছেলে। বাবা ইঁট ভাটার মালিক। পরে কুলদীপের ক্রিকেট ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁর পরিবার চলে আসে কানপুরে। ভারতীয় স্কোয়াডে থাকলেও প্রথম একাদশে ঢোকা হচ্ছিল না কুলদীপের। যা নিয়ে কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন ছিল তাঁর কোচ কপিল পাণ্ডে। কুলদীপই বলছিলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত কোচ বার বার বলে এসেছেন, তুই যখন খেলবি অনেক উইকেট পাবি। কিন্তু আমি সুযোগ পাচ্ছিলাম না দেখে, স্যার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলেন। আমিই তখন বলেছিলাম, আমি ঠিক সুযোগ পাব। কারণ নেটে আমার বোলিং দেখে বিরাট ভাই আর অনিল স্যার আমাকে সেই কথাই বলেছিলেন।’’
ধর্মশালার প্রথম দিনটা ভারতের নবাগত তরুণের ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাঁর জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবে দেশ।