অশ্বিনের এমন ব্যাটিংয়ে কুম্বলের মাথাও দেখছি

রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে লাগাতার ভাল ব্যাটিং করতে দেখে যাঁরা অবাক হচ্ছেন তাঁদের বলি, ও কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবেই ফার্স্ট ক্লাস কেরিয়ার শুরু করেছিল ২০০৬-’০৭-এ অশ্বিনের রঞ্জি ট্রফি অভিষেক।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৯
Share:

অশ্বিন যখন ব্যাটসম্যান।

রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে লাগাতার ভাল ব্যাটিং করতে দেখে যাঁরা অবাক হচ্ছেন তাঁদের বলি, ও কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবেই ফার্স্ট ক্লাস কেরিয়ার শুরু করেছিল।

Advertisement

২০০৬-’০৭-এ অশ্বিনের রঞ্জি ট্রফি অভিষেক। যে জায়গাটায় ও এখন ভারতীয় দলে ব্যাট করছে, সেই ছ’নম্বরেই ব্যাট করত অশ্বিন। কখনও সাত নম্বরেও। তখন ওর কথা প্রায়ই শুনতাম। ঘরোয়া ক্রিকেট আড্ডায় যত বার ওর কথা শুনেছি, তখন অশ্বিন সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিমান অলরাউন্ডার কথাটাই বরাবর বলা হত। পরের সিজনে তো ওর ব্যাটিং গড় ষাটের কাছাকাছিও চলে গিয়েছিল বলে শুনেছিলাম। ভারতীয় দলে আসার আগে একটা রঞ্জি সেঞ্চুরিও ছিল বলে মনে পড়ছে।

পরে যখন আইপিএলে অসাধারণ বোলিং করে ভারতীয় দলে ডাক পেল, তখন থেকেই কেন জানি না অশ্বিনকে সবাই দুর্দান্ত অফ স্পিনার বলতে শুরু করল। আসলে তখন ও বোলিংটাই বেশি ভাল করত। তাই ব্যাটিং স্কিলের কথা আর কেউ মনে রাখেনি সে ভাবে।

Advertisement

এখন অশ্বিনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে, নিজের সেই দক্ষতাকেই আবার নতুন করে আবিষ্কার করল। যার ফলে ওর মধ্যে সেই ব্যাটসম্যান সত্ত্বাটা ফের জেগে উঠেছে।

এর জন্য অশ্বিনের নিজের কৃতিত্ব তো আছেই। কৃতিত্ব দিতে হবে অনিল কুম্বলে আর বিরাট কোহালিকেও। ওকে যে ছ’নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হচ্ছে, এটা একটা বার্তা যে, দলে ব্যাটসম্যান হিসেবে ওকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ছ’নম্বরকে তো আর কোনও ভাবেই টেল এন্ডার বলা যায় না। এমনকী বেশির ভাগ দলে ছ’নম্বর জায়গাটা এক জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের জন্য তোলা থাকে। ব্যাটসম্যান হিসেবে অশ্বিনের উপর কুম্বলে-কোহালির যথেষ্ট ভরসা আছে বলেই পাঁচ ব্যাটসম্যান নিয়ে টেস্টে নামছে ভারত। এবং অশ্বিন কিন্তু বার বার খারাপ জায়গা থেকে দলকে টেনে তুলছে। রবিবার যেমন ভারত ১৫৬-৫ হয়ে গিয়েছিল একটা সময়। সেখান থেকে প্রথমে বিরাট কোহালি এবং পরে জাডেজার সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারতকে ম্যাচে ফেরাল।

অনিল কোচ হিসেবে ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কী ভাবে ধাপে ধাপে এগিয়েছে, কী পরিকল্পনা ছিল ওর, জানি না। তবে এটা জানা না থাকলেও আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না যে, অশ্বিনের ব্যাপারটা এক দিনে হয়নি। শুরু থেকেই অশ্বিনকে এ ভাবে কাজে লাগানোর কথা নিশ্চয়ই ভেবে রেখেছিল অনিল। অনিলের হয়তো মনে ছিল যে অশ্বিন একসময় ব্যাটিংটা ভালই করত।

অশ্বিনের মধ্যের সেই পুরনো ব্যাটসম্যানটাকে ফিরিয়ে আনতে পারলে যে দলের লাভ হবে, কোচের পক্ষে এটা ভাবাই স্বাভাবিক। অশ্বিনের ক্রিকেট ব্রেনটা দারুণ। আমার ধারণা, পরিস্থিতিটা ওকে বোঝাতে অনিলের খুব একটা সময় লাগেনি। আর তার পর থেকেই এই পুরনো ব্যাটিং-ফর্ম ফেরানোর প্রক্রিয়াটা শুরু হয়ে যায়।

এই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই কিন্তু অশ্বিন টেস্টে ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নামছে। তার আগে পর্যন্ত ও আট-ন’নম্বরেই নামত। গত বছর শ্রীলঙ্কায় সাতে নেমেছিল। কিন্তু ছয়ে কখনও নামেনি। অনিল কোচ হয়ে আসার পরেই কিন্তু অশ্বিনের ছ’নম্বরে উঠে আসা। ব্যাটিং অর্ডারে ওকে এই ভাবে ব্যবহার করাটা কিন্তু একটা মাস্টারস্ট্রোক হয়ে উঠছে।

ব্যাটিং টেকনিকেও কিছু পরিবর্তন করেছে অশ্বিন। বিশাখাপত্তনম টেস্টের সময়ই তো কাগজে পড়েছিলাম, ও বলেছিল, স্টান্সটা আরও একটু ওপেন করে নিয়েছে এখন। আগের অশ্বিনের ব্যাটিংয়ের ফুটেজ দেখলেও সেটাই মনে হয়। আমার মনে হচ্ছে, আরও কয়েকটা ছোটখাটো বদল এনেছে ব্যাটিংয়ে। শট বাছাইয়ে আরও সতর্ক হয়েছে। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে যা হয়ে থাকে।

তবে টেকনিকের চেয়েও মানসিকতায় বদলটা কিন্তু এখানে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসায় বাড়তি দায়িত্ব নিতে হচ্ছে ওকে। অশ্বিনের এখন ব্যাট হাতে ক্রিজে আসা মানে ওর কাছ থেকে বেশ কিছু রান আশা করবে দল। সারা দেশও রানের জন্য তাকিয়ে থাকবে। সফল হতে গেলে তাই সঠিক টেম্পারামেন্টটাও চাই।

আসলে অশ্বিন যথেষ্ট ইন্টেলিজেন্ট বলেই দ্রুত নিজেকে বদলে নিতে পারে। মনে হয়, তাই ওকে ছ’নম্বরে বেছে নিয়েছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। এই সিদ্ধান্তটা কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটকে এক দুর্দান্ত অলরাউন্ডার উপহার দিতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন