এআইটিএকে পার্টনার নিয়ে জিতলেন লিয়েন্ডারই

রোহন বোপান্না-সাকেত মিনেনি জুড়ি হেরে গেল এআইটিএ-লিয়েন্ডার পেজ জুড়ির বিরুদ্ধে! শনিবার রাজধানীতে ভারতীয় টেনিসের নজিরবিহীন অভিনব ‘ম্যাচ’ শেষে বোপান্নাকে লিখিত বিবৃতি দিতে হল, ‘‘আমি এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আর রিওতে খেলার দিকে তাকিয়ে আছি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৮:৫৩
Share:

রোহন বোপান্না-সাকেত মিনেনি জুড়ি হেরে গেল এআইটিএ-লিয়েন্ডার পেজ জুড়ির বিরুদ্ধে!

Advertisement

শনিবার রাজধানীতে ভারতীয় টেনিসের নজিরবিহীন অভিনব ‘ম্যাচ’ শেষে বোপান্নাকে লিখিত বিবৃতি দিতে হল, ‘‘আমি এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। আর রিওতে খেলার দিকে তাকিয়ে আছি।’’

লিয়েন্ডার আবার জাতীয় টেনিস ফেডারেশনকে পার্টনার নিয়ে জেতার পরে তাঁর আঠারো গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের মতোই সঙ্গীকে কৃতজ্ঞতা দিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি (৭) বার অলিম্পিক্স খেলা ভারতীয় ক্রীড়াবিদ হওয়ার নজির গড়ার সুযোগ পেয়ে লিয়েন্ডার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘জাতীয় পতাকার জন্য খেলা বরাবর আমার কাছে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এআইটিএ সেই সুযোগ দেওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ। জনগণের আমার উপর উপচে পড়া ভালবাসার কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। জনগণের নিঃস্বার্থ সমর্থন আমার গোটা খেলোয়াড়জীবনের শক্তির মিনার। দু’হাজার ষোলো অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান পাওয়াটা আমার কাছে স্বপ্নপূরণ হওয়া।’’

Advertisement

দল নির্বাচনের মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে বোপান্না রিওতে লিয়েন্ডারকে ডাবলস পার্টনার না চেয়ে তাঁর চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭৯ ধাপ পিছনে থাকা সাকেত মিনেনিকে সঙ্গী চাওয়ায় প্রবল নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর চাপ সৃষ্টি হয়েছিল এআইটিএর উপর। সানিয়া মির্জাও ঘুরিয়ে ফেডারেশনকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, মিক্সড ডাবলসে তিনি লিয়েন্ডারকে নিয়ে খেলতে চান না। চার বছর আগের লন্ডন গেমসে এআইটিএ সানিয়াকে লিয়েন্ডারকে নিয়ে খেলতে কার্যত বাধ্য করায় এ বার অলিম্পিক্সে তাঁর দাবি যে মেনে নেওয়া হবে তা একপ্রকার জানাই ছিল ভারতীয় টেনিস ওয়াকিবহাল মহলের। তা ছাড়া সানিয়া এখন বিশ্বের এক নম্বর ডাবলস প্লেয়ার। তাঁর পছন্দকে তাই মর্যাদা দেওয়ারও একটা স্বাভাবিক ব্যাপার থাকে। তাই সানিয়ার দাবি মতো মিক্সডে বোপান্নাকে তাঁর পার্টনার বেছে জাতীয় নির্বাচক কমিটি এ দিন আসল ‘উইনার’টা মারল পুরুষ ডাবলসে। যেখানে বোপান্নার আর্জি নাকচ করে দিয়ে এআইটিএ লিয়েন্ডারকে তাঁর পার্টনার নির্বাচিত করল। যার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন শহরের টেনিস মহাতারকাকে।

দিল্লিতে এ দিন ঘণ্টাদেড়েকের নির্বাচনী বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এআইটিএর শীর্ষকর্তা অনিল খন্না বলেন, ‘‘রোহন বোপান্নার আপত্তি নিয়ে আজকের সভায় আমরা খোলাখুলি আলোচনা করেছি। ও মিনেনির সঙ্গে রিওতে জুটি বাঁধতে চাইলেও চিঠিতে কোথাও লেখেনি তাকে ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে অলিম্পিক্সে জুটি বাঁধবে না। দেশের জন্য বোপান্না সব সময় খেলতে প্রস্তুত। বোপান্নার পরে আমাদের দেশে লিয়েন্ডারের ডাবলস র‌্যাঙ্কিংই সবচেয়ে ভাল। সাকেত সেখানে পাঁচ নম্বরে। তা ছাড়া লিয়েন্ডারের আঠারোটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়, ছ’টা অলিম্পিক্সের অভিজ্ঞতা, অবদান কোনওটাই উপেক্ষা করার নয়।’’

লিয়েন্ডার-পন্থী ফেডারেশনের অনড় মনোভাবের বিরুদ্ধে এর পরে কি বিদ্রোহ করবেন বোপান্না, বকলমে লিয়েন্ডার বিরোধী শিবির? সন্ধের দিকে এক প্রভাবশালী এআইটিএ কর্তা বললেন, ‘‘কোনও চান্স নেই। আমরা গাছটাই উপড়ে ফেলে দিয়েছি। এ বার অলিম্পিক্স টেনিসে কোনও দ্বিতীয় ডাবলস টিম পাঠানোর নিয়ম নেই। রিও যেতে বোপান্না রাজি না হলে ওর পরের র‌্যাঙ্কিং যার সে যাবে লিয়েন্ডারের পার্টনার হয়ে।’’

বোপান্নার আজকের বিবৃতিতেও যেন সন্ধির সাদা পতাকা ওড়ানোর ইঙ্গিত। ‘‘লিয়েন্ডারকে আমি বিরাট শ্রদ্ধা করি। ওর সাফল্যকে সম্মান করি।’’ সঙ্গে অবশ্য এ দিনও তিনি বলেছেন, ‘‘কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না আমাদের খেলার স্টাইল ডাবলসের মতো টিমগেমে একে অন্যের পরিপূরক বলে। যেটা বরং আমার বিচারে সাকেত আর আমার জুটির মধ্যে আছে। তবে এআইটিএর নির্বাচক কমিটি আমার ব্যাখ্যাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার পরে অলিম্পিক্স টিম বেছেছে। আমি ওদের সিদ্ধান্তকে সম্মান দিচ্ছি।’’

এআইটিএ যদিও বুঝতে পারছে, রিওর কোর্টে তারা এমন এক ডাবলস টিম নামাচ্ছে, যাদের দু’জন একে অন্যের পছন্দের মানুষ নয়! এবং তার ড্যামেজ কন্ট্রোলেও নেমে পড়েছেন দেশের টেনিস কর্তারা। এ দিনের নির্বাচনী সভায় পরের মাসে ভারতের ডেভিস কাপ ম্যাচের দল বাছারও কথা ছিল। কিন্তু এই প্রথম চূড়ান্ত দল না বেছে লিয়েন্ডার-বোপান্না সমেত সাতজন প্লেয়ার বাছেন নির্বাচকেরা। বলা হয়েছে, চণ্ডীগড়ে টাই-এর ড্রয়ের আগে চূড়ান্ত চারজনকে বাছা হবে। তার আগে দিন পাঁচেক প্র্যাকটিস করবেন সব প্লেয়ার।

আসলে লক্ষ্য— এই মওকায় লিয়েন্ডার-বোপান্না জুটিকে একসঙ্গে রেখে যতটা সম্ভব কাছাকাছি আনা যায়! তবে পরের কথা পরে। আপাতত গেম, সেট, অ্যান্ড ম্যাচ টু লিয়েন্ডার পেজ। এমনকী টেনিস কোর্টের বাইরে অন্য কোর্টেও!

শনিবারই বোম্বে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, রিহা পিল্লাই যেন লিয়েন্ডারের সঙ্গে যতটা সম্ভব বেশি সময় কাটিয়ে দু’জনের মধ্যে তৈরি হওয়া মনোমালিন্য সমাধানের চেষ্টা করেন। কারণ তাঁদের দু’জনের দশ বছরের এক কন্যা সন্তান আছে। তার সঠিক ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মা-বাবার একসঙ্গে থাকা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন