যুগলবন্দি: পোর্তোর বিরুদ্ধে লিভারপুলের জয়ের দুই কারিগর ফিরমিনহো ও কেইটা। এএফপি
লিভারপুল ২ • পোর্তো ০
পোর্তোর বিরুদ্ধে ২ মিনিটে নাবি কেইটা গোল করে লিভারপুলকে এগিয়ে দেওয়ার পরে খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখাননি য়ুর্গেন ক্লপ। শূন্যে বার দু’য়েক ঘুসি চালিয়েই বসে পড়েন রিজার্ভ বেঞ্চে। গত মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে এই পোর্তোর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলেও জিততে না পারার যন্ত্রণা এখনও কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে তাঁর মনে। তাই সংযম। ২৬ মিনিটে রবের্তো ফিরমিনহোর গোল করতেই চেনা মেজাজে ক্লপ। লাফিয়ে উঠে দু’হাত শূন্যে ছুড়ে দিলেন। যদিও ব্রাজিল তারকার এই গোল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পোর্তো সমর্থকদের দাবি, গোল করার সময় অফসাইডে ছিলেন তিনি।
অ্যানফিল্ডে মঙ্গলবার রাতে পোর্তোকে হারানোর ব্যাপারে ক্লপের সংশয় ছিল। কিন্তু ফুটবল বিশেষজ্ঞেরা নিশ্চিত ছিলেন লিভারপুলের জয় নিয়ে। শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নিয়ে নেন কেইটা, সাদিয়ো মানে, জর্ডান হেন্ডারসনেরারা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭১ শতাংশ বলের দখল ছিল লিভারপুলের। নিজেদের মধ্যে ৬৬৯টি পাস খেলছেন মহম্মদ সালাহরা। যার মধ্যে ঠিক পাস ছিল ৫৬৫টি। অর্থাৎ, ৮৪ শতাংশ নির্ভুল পাস খেলেছেন লিভারপুলের ফুটবলারেরা। পোর্তোর ফুটবলারেরা মোট পাস খেলেছেন ৩৬৮টি। যার মধ্যে নির্ভুল পাস ছিল ২৬৩টি (৭১ শতাংশ)। শুধু তাই নয়। পোর্তোর ডিফেন্ডারেরা ২২ বার বল বিপন্মুক্ত করেছে। ভিরজির ফান দিক, দেয়ান লভরেনদের ১৭ বার বল বিপন্মুক্ত করতে হয়েছে। তবুও ক্লপ পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন! ম্যানেজার হিসেবে ৪০০তম জয়ের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথম পর্বের এই জয়ের ফলে আমরা খুশি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা একটু লক্ষ্যহীন ফুটবল খেলছিলাম। আমি অবশ্য সমালোচনা করছি না।’’
পোর্তোর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয়ের পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে ওঠার পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে লিভারপুল। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, অঘটন না ঘটলে মহম্মদ সালাহদের সেমিফাইনাল খেলা কেউ আটকাতে পারবে না। লিভারপুল ম্যানেজার যদিও সতর্ক। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের সেমিফাইনালে খেলা এখনও নিশ্চিত নয়। মনে রাখতে হবে দ্বিতীয় পর্বের খেলা বাকি আছে। ওদের ঘরের মাঠে গিয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে।’’ একই মত ফিরমিনহোর। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা মাত্র একধাপ এগিয়েছি। এখনও অনেক দূর যেতে হবে।’’ নিজেদের মাঠে পোর্তো যে লিভারপুলের স্বপ্নভঙ্গ করতে মরিয়া তা ম্যাচের পরেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন ম্যানেজার সের্জিয়ো কনসেসাও। তাঁর কথায়, ‘‘সব কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। মনে রাখতে হবে অর্ধেক পথ এখনও বাকি আছে। ঘরের মাঠে যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারি, তার জন্য আমরা নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার জন্য তৈরি।’’
ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে টানা ২১টি ম্যাচে অপরাজিত থাকল লিভারপুল। জয় ১৫টি। ড্র ছ’টি ম্যাচে। ১২টি ম্যাচে কোনও গোল খাননি মহম্মদ সালাহরা। কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের দলের বিরুদ্ধে পোর্তোর জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। ২০টি ম্যাচের মধ্যে তারা হেরেছে ১৭টিতে। ড্র করেছে মাত্র তিনটি ম্যাচে। মঙ্গলবার রাতেও ছবিটা বদলাল না। নেপথ্যে হেন্ডারসন ও কেউটার দুরন্ত পারফরম্যান্স। ম্যাচের শুরুতে ফরাসি তারকার শট পোর্তো
ইংল্যান্ড জাতীয় দলের মিডফিল্ডার হেন্ডারসনই ম্যাচের সেরা হন। উচ্ছ্বসিত ক্লপ বলেছেন, ‘‘হেন্ডারসনের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। প্রায় সাড়ে তিন বছর ওকে ভুল জায়গায় খেলিয়েছিলাম। ও অসাধারণ খেলেছে এই ম্যাচে।’’ হেন্ডারসন অবশ্য ক্লপের ক্ষমা প্রার্থনা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, ‘‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা কয়েকটা গোল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সে ভাবে সুযোগ তৈরি করতে পারিনি। আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে।’’
পোর্তোর বিরুদ্ধে জয় শুধু নয়, লিভারপুল শিবিরে স্বস্তি কেউ চোট না পাওয়ায়। অ্যানফিল্ডে রবিবারই যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চেলসির বিরুদ্ধে ম্যাচ!