আমিই পারি।
পরীক্ষায় পাস করলেন লিওনেল আন্দ্রেজ মেসি। শুধু পাস করলেন বললে বোধহয় তাঁকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হয় না। একশোয় একশো, বা তার থেকে হয়ত কিছুটা বেশি পেয়েই ‘পরীক্ষা’য় পাস করলেন ফুটবলের বরপুত্র। আর ফুটবলবিশ্বকে আশ্বস্ত করে রাশিয়া বিশ্বকাপকে মেসি-মুক্ত হওয়া থেকে বাঁচালেন তিনি। মেসির হ্যাটট্রিকে সওয়ার হয়ে মরণবাঁচন ম্যাচে ইকুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কনফার্ম করল আর্জেন্তিনা।
আরও পড়ুন: বার্সার ছয়ে একাই চার গোল করে নায়ক মেসি
হারলে বিশ্বকাপ যাত্রা প্রায় অসম্ভব, এই অবস্থায় একেবারেই প্রতিকূল পরিবেশে জীবনের ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল আর্জেন্তিনা। বা বলা ভাল মেসি। এমন একটা জায়গায়, যেখানে গত ১৬ বছরে একটাও ম্যাচ জেতেনি আর্জেন্তিনা। ৯ হাজার ফুট উচ্চতার কুইটোর সেই মাঠে শ্বাসকষ্টে ভোগেন বেশির ভাগ ফুটবলারই। বলিভিয়ায় প্রায় এমনই এক মাঠে এক সপ্তাহ আগে খেলার মাঝে অক্সিজেন মাস্কের সাহায্য নিতে হয়েছিল নেমারকে। গ্রুপে ষষ্ঠ স্থানে থাকা আর্জেন্তিনাকে সরাসরি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে গেলে প্রথম চার দলের মধ্যে শেষ করতে হতো। অথবা পঞ্চম দল হয়ে তারা প্লে-অফ খেলে রাশিয়ার টিকিট পেতে পারত। কিন্তু দু’টোর জন্যই ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে জেতাটা ছিল অত্যন্ত জরুরি। এমনিতেই চাপের ম্যাচ, তার উপর কুইটোয় মেসির দেশের রেকর্ড। সব মিলিয়ে ভারতীয় সময়ে বুধবার ভোরের ম্যাচ নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কায় ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু সেই শঙ্কা কাটালেন মেসি। তাঁর হ্যাটট্রিকের সুবাদে ব্রাজিল, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া সঙ্গে গ্রুপের তৃতীয় দল হিসাবে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করল আর্জেন্তিনা। গ্রুপ থেকে ছিটকে গেল চিলে। আর পঞ্চম দল হিসাবে প্লে অফের সুযোগ পেল পেরু।
স্বপ্নের সেই গোলের ঠিক আগে।
স্কোরলাইন দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নেই যে, হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে ম্যাচের প্রথম গোলটা করেছিল ইকুয়েডরই। মাত্র ৩৮ সেকেন্ডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন রবার্তো অরডোনেজ। এর পরেই যেন জ্বলে ওঠেন মেসি। ১১ মিনিটে দি’মারিয়ার পাস থেকে সমতা ফেরান। মিনিট সাতেক পর ফের এই জুটির কল্যাণেই আসে দ্বিতীয় গোল। মেসি যে সত্যিই ‘ভিন গ্রহের ফুটবলার’ তার প্রমাণ মিলল ম্যাচের ৬২ মিনিটে। ইকুয়েডর বক্স থেকে প্রায় ৪০ গজ দূরে বল পেয়ে একাধিক ডিফেন্ডারকে মাটি দেখিয়ে গোল করেন মেসি। শুধু এই ম্যাচ নয়, গোটা যোগ্যতা অর্জন পর্বের সব ম্যাচ ধরলেও যা আক্ষরিক অর্থেই স্বপ্নের গোল।
এ দিন অবশ্য একটা ছোট রেকর্ডও করে ফেললেন মেসি। বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের কনমেবল গ্রুপ থেকে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তাঁর ক্লাব সতীর্থ সুয়ারেজের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে এক নম্বরে চলে এলেন তিনি।
ছবি: এএফপি।