অদম্য মেরির বিশ্বজয়ের ডাবল হ্যাটট্রিক, টোকিয়োর স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিলাম আমরা

এ রকম রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পরে টোকিয়ো অলিম্পিক্সেও পদকের আশা করাই যায় মেরির কাছে। জানি, তার জন্য যোগ্যতামান পেরোতে হবে। কিন্তু যে বিধ্বংসী মেজাজে ৩৫ বছর বয়সেও মেরির ‘হুল’ বিঁধছে বিপক্ষকে, তাতে এই আশা অমূলক নয়।

Advertisement

আলি কামার

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৮
Share:

অনন্য: ষষ্ঠ সোনায় উজ্জ্বল মেরি কম। সাফল্যের আনন্দে চোখে জল। শনিবার নয়াদিল্লিতে। এপি

ইউক্রেনের হানা ওখোতাকে ৫-০ হারিয়ে মেরি কম যখন জাতীয় পতাকা দু’হাতে তুলে কাঁদছিলেন, তখন আমার মনে পড়ছিল চার বছর আগের এক ঘটনা।

Advertisement

২০১৪ গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় মহিলা দলে সুযোগ পায়নি মেরি। দল থেকে বাদ পড়ে সে দিনও এ ভাবেই কাঁদছিল মেয়েটা। আমি তখন জাতীয় নির্বাচক।

একই সঙ্গে মনে হচ্ছিল, এ রকম রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পরে টোকিয়ো অলিম্পিক্সেও পদকের আশা করাই যায় মেরির কাছে। জানি, তার জন্য যোগ্যতামান পেরোতে হবে। কিন্তু যে বিধ্বংসী মেজাজে ৩৫ বছর বয়সেও মেরির ‘হুল’ বিঁধছে বিপক্ষকে, তাতে এই আশা অমূলক নয়।

Advertisement

লন্ডন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী ও সেই সময় পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরিকে নিয়ে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার অভিনীত বায়োপিক তত দিনে দেখে ফেলেছে গোটা ভারত। সমালোচকরা বলছেন, মেরি শেষ। যা শুনে অবসর নিয়েও ফিরে আসে মেরি।

আরও পড়ুন: ভল্ট-রানির ব্রোঞ্জ, লক্ষ্য ফিরল অলিম্পিক্সের

এর কয়েক দিন পরেই হঠাৎ মেরির ফোন। ‘‘স্যর, শিবিরে টেকনিক্যাল লোক কম। তুমি কোচ হয়ে আমাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য কর। সমালোচকদের জবাব দিতে চাই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে।’’ আজ যখন ষষ্ঠবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেরি জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলেন, তখন ওই সকালটা মনে পড়ছিল।

দু’বছর আগে হরিদ্বারে জাতীয় বক্সিং দেখতে গিয়েছিলাম। ফের মেরির আর্জি, ‘‘স্যর, আমাদের কোচ হয়ে এসো। তোমাকে দরকার।’’ এ বার আর না করিনি। মেরিই বক্সিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার কাছে দরবার করে আমাকে মহিলাদের কোচ করে নিয়ে আসে। মেরি কমের মতো এ রকম ইচ্ছাশক্তি ও ইস্পাতকঠিন মানসিকতা আমি বহু পুরুষ বক্সারের মধ্যেও দেখিনি। শনিবার রাজধানীতে মেরি দেখাল, অসম্ভব কথাটা ওর অভিধানে নেই। বয়স পঁয়ত্রিশ। তিন সন্তানের মা। রাজ্যসভার সদস্য। সব একার হাতে সামলে ও আজ বিশ্বজয়ী। এই বয়সেও মেরির প্রতিআক্রমণ, আগ্রাসী মনোভাব, ফুটওয়ার্ক আমাকে মুগ্ধ করে।

আরও পড়ুন: সিডনির নিষ্প্রাণ পিচে আজ ব্যাটসম্যানদের হাতে ভাগ্য

দু’বছর আগে যখন কোচ হয়ে ভারতীয় শিবিরে যোগ দিলাম, তখন ফিটনেসে সমস্যা ছিল মেরির। আমি আর ছোটেলাল যাদব (আর এক কোচ) দূরপাল্লার দৌড়, ছোট ছোট স্প্রিন্ট, প্রতিদিন তিরিশ মিনিট করে স্কিপিং করিয়ে তা বাড়াতে শুরু করি। রিফ্লেক্স ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে তার পরে ওকে আমন্ত্রণী প্রতিযোগিতাগুলোতে পাঠাতে শুরু করি। গত নভেম্বরে মেরি এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরতে বুঝলাম ঠিক রাস্তায় এগোচ্ছি আমরা।

চলতি বছরের শুরুতে ফের মেরিকে নিয়ে বসলাম আমি আর ছোটেলাল। বললাম, কমবয়সীদের মতো অহেতুক ঘুসি চালাস না। বদলে ‘স্কোরিং পাঞ্চ’ কর। তার জন্য শুরু হল বিশেষ অনুশীলন। সকাল সাড়ে ন’টা থেকে বেলা বারোটা। ফের বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধে সাতটা। কিন্তু মেরি সকাল সাতটাতেই তৈরি হয়ে চলে আসত অনুশীলনে। নিজের উদ্যোগে দু’ঘণ্টা অতিরিক্ত অনুশীলন করত। বুঝতাম, জবাব দেওয়ার তাগিদটা কী রকম তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ওকে।

শনিবার বিকেলে বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসেবে ষষ্ঠ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে শিশুর সারল্য নিয়ে রিং থেকে নেমে এসে লাফাচ্ছিল মেরি। গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম তখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মেরি কিন্তু সবার আগে আমাদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ততক্ষণে টুইট করেছেন, ‘বিশ্ব মঞ্চে তোমার সাফল্য প্রেরণা দেয়। এটা বিশেষ জয়।’ টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছেন, ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌর, সচিন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র সহবাগরা। সচিনের টুইটটা দেখালাম মেরিকে নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘লিটল মাস্টার লিখেছেন, ‘বিশ্বের সেরা বক্সার। মেরি তুমি দেশের সব অ্যাথলিটের প্রেরণা।’ মেরির চোখ দিয়ে তখন আনন্দাশ্রুর ধারা বইছে।

আজ ফের বিশ্বসেরা মেরি। ওঁর এই পুর্নজন্ম কাছ থেকে দেখলাম। মেরির পদকের সঙ্গে এটাও প্রাপ্তি আমার কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন