কথায় বলে ওস্তাদের মার শেষ রাতে। এই ক্রিকেটাররাই বোধ হয় তার আদর্শ উদাহরণ। কিছু দিন আগে অ্যাশেজে বেন স্টোকসের ১৩৫ নটআউট চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে ক্রিকেট মহলে। অনেকেই বলছেন, চতুর্থ ইনিংসে এটাই সেরা ব্যাটিং। সত্যিই কি তাই? দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু ইনিংস, যেগুলো স্টোকসের এই ইনিংসকে কড়া টক্কর দিতে পারে।
এই তালিকায় সব চেয়ে টাটকা স্মৃতি বেন স্টোকসের ১৩৫ রানের ইনিংস। প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে অলআউট হওয়া ইংল্যান্ডের সামনে ৩৫৯ রানের টার্গেট রাখে অজিরা। সবাই ধরেই নিয়েছিল, টিম পেনদের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানকে সঙ্গী করে অজিদের জেতা ম্যাচ নিজেদের দিকে ঘুড়িয়ে দেন বেন স্টোকস। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস খেললেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক টেস্ট দলের প্রতি খুব বেশি লোকের আস্থা নেই। কিন্তু এই দলেরই একটি কীর্তি ভুলতে পারবেনা ক্রিকেট বিশ্ব। এ বছরের শুরুতে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল তারা। প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায় করুনারত্নেরা। চতুর্থ ইনিংসে ৩০৪ রানের টার্গেট রাখে প্রোটিয়ারা।
স্টেন, রাবাডা সমৃদ্ধ আফ্রিকান পেস অ্যাটাক নিয়ে দু’প্লেসিরা ধরেই নিয়েছিলেন জিতে যাবেন। কিন্তু বাধ সাধলেন কুশল পেরেরা। ৪৮ রান করে ধনঞ্জয় ডি সিলভাযখন আউট হলেন, তখনও বাকি ছিল ৯৮ রান। হাতে ছিল ৪ উইকেট। এর পর ২২৬/৯ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে প্রায় একা ম্যাচ জিতিয়ে দেন পেরেরা। ২০০ বলে অপরাজিত ১৫৩ করেন তিনি। শেষ উইকেটে যোগ হয় ৭৮ রান।
২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কায় সফররত পাকিস্তান দলের সামনে চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৭ রানের টার্গেট রাখেন ম্যাথিউজরা। যদিও সেই রান তোলার জন্য দেড় দিন সময় পেয়েছিলেন মিসবারা। ১৩ রানের মধ্যে আহমেদ শেহজাদ ও আজহার আলি ফিরে গেলেও শান মাসুদ এবং ইউনিস খান সেখান থেকে খেলা ধরেন। ইউনিস খানের ২৭১ বলে ১৭১ রানের অপরাজিত ইনিংস পাকিস্তানকে পৌঁছে দেয় জয়ের সরণীতে।
চতুর্থ ইনিংসে সাড়ে তিনশো-র ওপরে রান করার ইনিংস বললেই ভারতীয় সমর্থকের মনে পড়ে যায় ২০০৮ সালে চেন্নাই-এ ভারত ও ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচ। কেভিন পিটারসনের দল ৩৮৭ রানের টার্গেট রাখে ভারতের সামনে। অ্যান্ডারসন, সোয়ানদের বোলিং আক্রমণ নির্বিষ হয়ে পড়ে সচিনদের সামনে। গম্ভীর, সহবাগরা ভাল শুরু করে ফিরে গেলেও ১০৩ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে জেতান সচিন।
২০০৮-এর শেষ দিকে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। হেডেন, পন্টিং, ক্লার্ক সমৃদ্ধ অজিরা সফররত দলের বিরুদ্ধে চতুর্থ ইনিংসে লক্ষ্য রাখে ৪১৪ রানের। শুরুতেই ম্যাকেঞ্জিকে হারানোর পর একে একে আমলা, কালিসও ফিরে যান। এরপরেই ক্রিজে আসেন এবি ডি’ভিলিয়ার্স। প্রথম ইনিংসে ৬৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৬ বলে ১০৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে দলকে জেতান তিনি।
কলম্বোতে ২০০৬ সালে আরও এক শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের কথা উঠে আসবে চতুর্থ ইনিংসের নায়ক হিসেবে। তিনি শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়বর্ধনে। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ৩৫২ রানের লক্ষ্য টপকাতে তিনি জয়সূর্য ছাড়া কাউকে সে দিন পাশে পাননি। এনটিনি, পোলকদের পেস আক্রমণ সামলে ১২৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। বাকি কাজ সারেন মালিঙ্গা এবং মাহরুফ।
২০০৩ সালের অস্ট্রেলিয়াকে ভয় পেতনা এমন দল খুব কমই আছে। সেই দলের দেওয়া ৪১৮ রানের বিশাল টার্গেট পার করে ক্যারিবিয়ান দল। ম্যাকগ্রা, লি, গিলেসপিদের সামলে এই রান তোলার আসল কারিগর শিবনারায়ণ চন্দ্রপল। তাঁর ১০৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস ক্যারিবিয়ানদের সাহায্য করে এই বিপুল রানের টার্গেট পার করতে। যদিও সেই ম্যাচে তিনি সঙ্গী পান লারা, সারওয়ানদের।
আরও চার বছর পিছিয়ে গেলে পাওয়া যাবে ১৯৯৯ সালে এক মহাকাব্যিক অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বৈরথ। যেখানে একক নায়ক হয়ে ওঠেন ব্রায়ন লারা। ৩০৮ রানের লক্ষ্য রাখে অজিরা। ওয়ার্ন, গিলেসপি, ম্যাকগ্রারা একে একে নয় ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানকে ফেরালেও টলাতে পারেননি লারাকে। কোর্টনি ওয়ালশকে শেষ বেলায় সঙ্গী করে ১৫৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতান তিনি।
সেই বছর শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয় পাকিস্তানের। নিজেদের হার থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক অমূল্য উদাহরণ হয়ে থাকে সেই ম্যাচটি। এবারে অজিদের সামনে ৩৬৯ রানের লক্ষ্য রাখে পাকিস্তান। ল্যাঙ্গার এবং গিলক্রিস্ট সেই বিশাল টার্গেট টপকে যান চার উইকেট বাকি থাকতেই। ১৪৯ রানের অনন্য ইনিংস খেলেন গিলি। আক্রম, আখতার, মুস্তাকদের অবলীলায় খেলেন তিনি।
ভারতের চতুর্থ ইনিংসের রাজা বোধ হয় একজনই। তিনি ভিভিএস লক্ষ্মণ। আর বিপক্ষ যখন অস্ট্রেলিয়া বাড়তি অক্সিজেন তো তিনি পাবেনই। ২০১০ সালে মোহালিতে মুখোমুখি হয় এই দুই দল। ভারতের সামনে লক্ষ্য রাখে ২১৬ রানের।
লক্ষ্য কম হলেও সচিন, দ্রাবিড়দের উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে দলকে বিপদমুক্ত করেন লক্ষ্মণ। শেষ বেলায় সঙ্গী হন ইশান্ত। ৭৩ রানের এক মহা মূল্যবান ইনিংস উপহার দেন লক্ষ্মণ। ভারত যেতে এক উইকেট বাকি থাকতে।