বিশ্বকাপ শুরুর আগে রাশিয়ায় পাশাপাশি মেসি-রোনাল্ডোর ছবি বিক্রি করছেন এক শিল্পী। —রয়টার্স
রোনাল্ডো ‘ফলো’ করেন মেসিকে। পেনাল্টি মিস থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়, সবই ‘ফলো’ করার ফল।
হারের পর মেসি এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে রোনাল্ডোকে লিখেছেন, ‘‘তাড়াতাড়ি চলে আয়, তোর জন্য ওয়েট করছি।’’ রোনাল্ডো আবার উত্তর দিয়েছেন, তুই ভিতরে ঢুকে ‘ক্যান্ডি ক্রাশ’ খেলতে শুরু কর, আমি আসছি।’’
প্রথমটা কোনও ফুটবল বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ নয়। কোনও ক্রীড়া সাংবাদিকের এক্সক্লুসিভ ব্রেকিং নিউজ নয় দ্বিতীয়টিও। বরং দু’টিই ফুটবলপ্রেমী আম জনতার ‘ক্রিয়েটিভিটি’, যা আছড়ে পড়েছে ফেসবুক-টুইটারের দেওয়ালে বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে।
আরও পড়ুন: ছক বদলাবে স্পেন? দেখে নিন সম্ভাব্য একাদশ
নক আউটের প্রথম দিনেই ঘণ্টা দু’য়েকের ব্যবধানে দুই মহাতারকার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর এমনই সব সরস পোস্টে ছেয়েছে ফেসবুক-টুইটার। মেসি এবং রোনাল্ডো ফ্যানেদের ক্ষোভ-হতাশা ঝরে পড়েছে সেই পোস্ট, মিম, কমেন্টস-এ। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও চলছে জোর তর্ক-বিতর্ক-বিতণ্ডা। এল এম টেন নাকি সি আর সেভেন, কে বড় সে সব তথ্য পরিসংখ্যান আপাতত শিকেয়। দুই শিবিরেই হতাশা। কেউ লিখছেন, ‘‘চার বছর পর আবার বিশ্বকাপ হবে। কিন্তু দেখা যাবে না দুই কিংবদন্তীকে।”
আর এই দুই তারকার বাইরে যাঁরা অন্য দলের ফ্যান, তাঁরাই বেশি রসিকতা করছেন। যুক্তি, তথ্য, উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, মেসির পথেই পেনাল্টি মিস করলেন রোনাল্ডো। তারপর বিদায়ী ম্যাচে দু’জনের কেউ গোল করলেন না। গোল করার মরিয়া চেষ্টাও দেখা গেল না। এবং একই ভাবে হেরে বিদায় নিলেন রাশিয়া থেকে।
আরও পড়ুন: যে যে কারণে ফ্রান্সের কাছে হারল আর্জেন্টিনা
বিমানবন্দরের কাল্পনিক কথোপকথনও ওই ‘গোষ্ঠী’ই তৈরি করেছে বলেই মত নেটিজেনদের। সুপার ইম্পোজ করা একটি ছবি ছড়িয়েছে সোশ্যাল দুনিয়ায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দরে রানওয়েতে দাঁড়িয়ে একটি বিমান। তার নিচে দু’টি ছাগল। একটি ডোরাকাটা, একটি একরঙা। নিচে লেখা ‘বিশ্বকাপের বর্তমান অবস্থা।’ দু’টি ছাগল কে কে, তার উত্তর দেওয়ার জন্য কোনও পুরস্কার নেই।
ব্রাজিল সমর্থকদের বড় অংশই অবশ্য একটু মেপে খেলতে চাইছেন। কিছুটা সাবধানী। কারণ সোমবারই নামছেন তাঁদের তথা বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা তারকা নেইমার। তাঁর পরিণতিও মেসি-রোনাল্ডোর মতো হলে তখন আর মুখ লুকনোর জায়গা থাকবে না— এই ভেবেই হয়তো আর বেশি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে যাচ্ছেন না তাঁরা।
মেসি পেনাল্টি মিস করার পর তাঁকে নিয়ে কম খিল্লি হয়নি। স্টেডিয়ামের একপ্রান্ত জোড়া গোলপোস্ট বানিয়ে লেখা হয়েছে, মেসি-রোনাল্ডোর পেনাল্টি ‘মিস’-এর সমস্যার সমাধান। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি ছড়িয়েছিল, এক ব্যক্তি রাস্তায় অকাতরে ঘুমোচ্ছেন। ঘটনাচক্রে তাঁর গায়ে আর্জেন্টিনার দশ নম্বর জার্সি এবং মেসি লেখা। লেখা হয়েছিল, ‘পেনাল্টি মিস করার পর মেসির অবস্থা’। আবার আর্জেন্টিনার জার্সি পরা অচৈতন্য এক ব্যক্তির মাথায় জল ঢালার ছবিও ছড়িয়েছিল। ফের সেগুলি ঘুরে ফিরে আসছে ইনবক্সে, দেওয়ালে।
নেমারের অতি নাটকীয়তা এবং সামান্যতেই পড়ে যাওয়ার ‘রোগ’-এর দাওয়াইও বাতলে দিয়েছে আজকের সোশ্যাল মিডিয়া। প্রযুক্তির কারিকুরিতে কেউ শিশুদের ওয়াকারের মধ্যে নেইমারের ছবি দিয়ে লিখেছেন, পড়ে যাওয়ার সমস্যার সমাধান। কেউ বা দু’পাশে গাড়ির চাকার ‘সাপোর্ট’ নিয়ে নেইমার কী ভাবে খেলতে পারেন, তার পরামর্শ দিয়ে চলেছেন। চিৎপুরের যাত্রাপালার পোস্টারে নেমারের ছবি ঢুকিয়েও চলছে নাটকীয়তার শ্লেষ। তবু বিশ্বকাপে ট্রেন্ডিং তো এখন তিনিই।
রাশিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন দুই মহাতারকা। যতই পেনাল্টি মিস হোক, ফুটবল বিশ্বযুদ্ধের বাকি দিনগুলিতে দুই কিংবদন্তীকে মিস করবেনই ফুটবল প্রেমীরা। তার সঙ্গে মিস করবেন এই সব সোশ্যাল ‘ক্রিয়েটিভিটি’ও।
(এই ছবিগুলিই ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়)।