Sports News

রাশিয়া থেকেই অবসর? সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না মেসি

মেসি নিজে নিস্তার পাচ্ছেন না এমন চর্চা থেকে। আর্জেন্তিনার জার্সিতে কাপ-যুদ্ধই নিজেকে প্রমাণের শেষ মঞ্চ কি না, প্রশ্ন এড়াতে পারছেন না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মস্কো শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ১৮:৪২
Share:

মেসি। ছবি:এএফপি।

একবার ভেঙেছেন অবসর। বিদায় জানিয়েও ফিরেছেন। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর কি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে চিরতরে বিদায় জানাবেন বাঁ পায়ের আধুনিক জাদুকর? জল্পনা চলছেই। আর সেই জল্পনা আরও উস্কে দিলেন স্বয়ং মেসি-ই। অবসর সংক্রান্ত প্রশ্ন শুনে ‘হ্যাঁ’ যেমন বলেননি, তেমন উড়িয়েও দেননি তার সম্ভাবনা।

Advertisement

রক্ষণভাগকে চিরে দেওয়া থ্রু। সবুজ ঘাসে আলপনা এঁকে দেওয়ার মতে ড্রিবলিং। মেসি মানেই পায়ে বল নিয়ে কবিতা। শিল্পের ফুল ফোটানো। পায়ের সূক্ষ্ম মোচড়ে জাল বোনা। যাতে সম্মোহিত আট থেকে আশি। কিন্তু, জিনিয়াস মানেই সাফল্যের নিশ্চয়তা নয়। যতই আবেশ আনুন, মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখুন, নীল-সাদা জার্সিতে বড় কোনও ট্রফি তাঁর ড্রয়িংরুমের শোভা বাড়ায়নি। দেশের হয়ে শ্রেষ্ঠত্বের কোনও স্বীকৃতি না-মেলাই কি তাঁর ভবিতব্য? কে জানে!

মেসি নিজে নিস্তার পাচ্ছেন না এমন চর্চা থেকে। আর্জেন্তিনার জার্সিতে কাপ-যুদ্ধই নিজেকে প্রমাণের শেষ মঞ্চ কি না, প্রশ্ন এড়াতে পারছেন না। স্পেনীয় সংবাদপত্রে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তাঁর উত্তর, “জানি না কী হবে। আমরা কেমন খেলি, তার ওপর সব কিছু নির্ভর করছে। যাই হোক না-কেন, ফাইনালে ওঠাও সহজ নয়। এটারও প্রশংসা হওয়া উচিত। মানছি, চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেক বেশি জরুরি। তবে সেখানে ওঠার রাস্তাও দুর্গম, এটা ভুললে চলবে না।”

Advertisement

আরও পড়ুন
মেসি-ভক্ত সুনীল নয়া কীর্তি গড়ে নির্লিপ্তই

দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনা চলে তাঁর। যদিও অনেক এগিয়ে পূর্বসূরি। মারাদোনার বিশ্বকাপ আছে, মেসির নেই। ১৮৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে দিয়েগো চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন আর্জেন্তিনাকে। ইতালিতে পরের বিশ্বকাপেও ফাইনালে তুলেছিলেন দলকে। তবে শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি। মেসিও চার বছর আগে ব্রাজিলে রানার্স হওয়ার তিতকুটে স্বাদ অনুভব করেছিলেন। একক স্কিলের ঝলকানিতে দলকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। জাতীয় দলের হয়ে মেসির ট্রফি-ভাগ্য একেবারেই ভাল নয়। বিশ্বকাপ ফাইনালে তো হেরেইছেন। তার পর টানা দুই বার হেরেছেন কোপা আমেরিকার ফাইনালে। আর সেটাও একই প্রতিপক্ষ চিলির কাছে। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় কোপা ফাইনালে পরাজয়ের পর মেসি হতাশায়, যন্ত্রণায় অবসরই নিয়ে ফেলেছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে। তবে ছ’মাসের মধ্যে তিনি অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাঁর ভক্তরা।

সমালোচকরা বলেন, ক্লাবের হয়েই মেসির যত সাফল্য। নীল-সাদা জার্সি গায়ে চাপালেই দিশেহারা দেখায় তাঁকে। অবসরের সিদ্ধান্তের সময় তো আর্জেন্তিনার মিডিয়ায় মারাত্মক সমালোচনা হয়েছিল। মেসি স্বীকারও করেন যে, টানা তিনবার ফাইনালে হেরে যাওয়াটা হজম করতে পারেননি। সেই জন্যই আর্জেন্তিনার হয়ে আর কখনও না-খেলার সিদ্ধান্ত। যাতে মিশেছিল আবেগ আর অভিমান।

রাশিয়া বিশ্বকাপ তাই ৩০ বছর বয়সীর শেষ সুযোগ অমরত্বের দাবিদার হয়ে ওঠার। বলা হয়, বিশ্বকাপই কোথাও গিয়ে হয়ে ওঠে শেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। ক্লাবের হয়ে যত সফলই হোন না কেন, বিশ্বকাপ না-থাকলে পেলে-মারাদোনার সঙ্গে এক সারিতে বসা যায় না। বিশ্বকাপে মেসি তাই শুধু দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণের চাপ নিয়েই নামছেন না, নিজস্ব পাওনাগণ্ডা বুঝে নেওয়ার তাগিদও সঙ্গী।

অবশ্য অধিনায়ক না-থাকলে রাশিয়ার টিকিটই অধরা থাকত আর্জেন্তিনার। যোগ্যতা অর্জনের পর্বেই ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। অনন্ত চাপের মুখে প্লে-অফে মেসির হ্যাটট্রিকই আনে রাশিয়ার টিকিট। আর এ বার শুরু হতে চলেছে আসল পরীক্ষা।

দশ নম্বর জার্সির মালিককে নিয়ে তাই ফের স্বপ্ন দেখা শুরু। ঈশ্বরদত্ত প্রতিভার অধিকারী পারবেন তো কাপ হাতে হাসি মুখে দাঁড়াতে!

আরও পড়ুন
অস্ট্রিয়ার কড়া ট্যাকল সামলে নায়ক নেমারই

আর তিনি যে ভাবে সব সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন, জল্পনা চরমে উঠছে। বলাবলি হচ্ছে, আর্জেন্তিনা সাফল্য পাক বা হতাশ করুক, মেসি অবসরের রাস্তা খোলা রাখলেন। তাঁর এহেন মন্তব্যে ধরা পড়ছে অভিমানও। কোনও বড় ট্রফি না জিতলেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৬৪ গোল করে ফেলেছেন একগাল দাড়ির যুবক। তিনিই দেশের সর্বাধিক গোলদাতা। জিতেছেন পাঁচ বার ব্যালন ডি ওর। কিন্তু তার পরেও আলবিসেলেস্তে-র ব্যর্থতায় তাঁকেই হতে হয় বিদ্রুপের শিকার। আহত হন তিনি। রক্তাক্ত হন ভিতরে ভিতরে।

কে জানে, হয়তো সে জন্যেই ফাইনালে ওঠাকে হেলাফেলা না করার বার্তা। বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকেই বিদায়ের ইঙ্গিতের নেপথ্যেও হয়তো অভিমান। শুধু তো বিপক্ষ নয়, মেসির প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে নিন্দুকরাও পড়ছেন যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন