নায়ক: মিনার্ভার সাফল্যের নেপথ্যে চেম্পলং (বাঁ দিকে) ও চেঞ্চো।
আই লিগ টেবলের শীর্ষে। অথচ দলগঠনে খরচের তালিকায় সব চেয়ে নীচে! মাত্র দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি দল মিনার্ভা এফসি-ই যেন খেতাবি দৌড়ে অশ্বমেধের ঘোড়া।
ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে মিনার্ভার উত্থানের কাহিনিও চমকে দেওয়ার মতো। দলের মালিক রঞ্জিৎ বাজাজ স্বপ্ন দেখতেন পেশাদার ফুটবলার হওয়ার। পঞ্জাবের হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে খেলেছেন। কিন্তু পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল। চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে খেলতে বুধবার বিকেলেই গোয়া পৌঁছে ফোনে রঞ্জিৎ শোনালেন আশ্চর্য কাহিনি, ‘‘পেশাদার ফুটবলার হতে না পারার হতাশা তো ছিলই। তার উপর জেসিটি দল তুলে নিল। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করলাম— আমরাই একটা ক্লাব গড়ব। জেসিটি-র অভাব পূরণ করব।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘পঞ্জাবে প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারের অভাব নেই। অথচ আই লিগে পঞ্জাবের কোনও ক্লাব নেই। তাই প্রথম থেকেই লক্ষ্য ছিল, স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়ব। কিন্তু কখনওই বেশি খরচ করব না।’’
ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান এই মরসুমে দল গড়তে খরচ করছে প্রায় দশ কোটি করে। আই লিগের খেতাবি দৌড় থেকে ইতিমধ্যেই ছিটকে গিয়েছে মোহনবাগান। অঙ্কের বিচারে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা বেঁচে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল ও নেরোকা এফসি-র। তবে দু’টো ক্লাবকেই বাকি সব ম্যাচ জিততে হবে। শেষ ছ’টি ম্যাচ জিতলে ডুডু ওমাগবেমি, কাতসুমি ইউসা-রা ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করবেন। আর নেরোকার পয়েন্ট হবে ৩৯। সে ক্ষেত্রে মিনার্ভাকে অন্তত দু’টো ম্যাচ হারতে হবে। অথবা চারটি ম্যাচে ড্র করতে হবে।
এই মুহূর্তে ১১ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে আই লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা মিনার্ভার বাকি আর সাতটি ম্যাচ। যার মধ্যে পাঁচটি লুধিয়ানায় ঘরের মাঠেই খেলবেন চেঞ্চো গেলসেন-রা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মণিপুরের নেরোকা এফসি-র পয়েন্ট ১৩ ম্যাচে ২৪। ইস্টবেঙ্গল ১২ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে। সে ক্ষেত্রে শেষ সাতটি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি জিতলেই ৪১ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে পঞ্জাবের দলটি। মিনার্ভার কোচ থেকে ফুটবলার, কেউ-ই এই যুক্তি মানতে রাজি নন। বলছেন, ‘‘কখন কী হয় কেউ বলতে পারে না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য অন্তত পাঁচটি ম্যাচ জিতে সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া। কারণ, অঘটন ঘটতে সময় লাগে না।’’
চেঞ্চো গেলসেন-রা যে রকম ফর্মে আছে, তাতে অবশ্য সেই সম্ভাবনা দেখছেন না আই এম বিজয়ন। ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার বলছিলেন, ‘‘মিনার্ভা চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে, সেটাই হবে অঘটন। ওরা যে রকম ফর্মে আছে, তাতে খুব বেশি হলে একটা ম্যাচ হারতে পারে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘মিনার্ভার সব চেয়ে বড় সুবিধে, ঘরের মাঠে পাঁচটি ম্যাচ খেলবে।’’ বিজয়নের সঙ্গে অবশ্য একমত নন আর এক প্রাক্তন তারকা সুব্রত ভট্টাচার্য। তিনি বললেন, ‘‘ফুটবল অনিশ্চয়তার খেলা। যে কোনও সময় লিগের অঙ্ক বদলে যেতে পারে।’’
মাত্র দেড় কোটি টাকায় দল গড়ে এই অবিশ্বাস্য সাফল্যের রহস্য কী? মিনার্ভা কর্ণধারের ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের এর চেয়ে বেশি খরচের সামর্থ নেই। প্রথম থেকেই আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম, তারকাদের পিছনে ছুটব না। নিজেদের অ্যাকাডেমির ফুটবলারদের সিনিয়র দলে নেব। আর এ রকম কোনও বিদেশি ফুটবলার নেব না, যারা একটা ম্যাচে দারুণ খেলবে। অথচ চোটের কারণে তিন-চারটে ম্যাচ বাইরে বসে থাকবে।’’
মিনার্ভার বিদেশি নির্বাচনের পদ্ধতি কলকাতার দুই প্রধানের কাছেই শিক্ষণীয়। রঞ্জিতের কথায়, ‘‘বিভিন্ন এজেন্টের কাছ থেকে ১৩৮০ জন বিদেশি ফুটবলারের বায়োডেটা নিয়েছিলাম। তার মধ্য থেকে ৬০ জনকে নির্বাচিত করে আর্থিক প্রস্তাব পাঠাই। ১৫ জন প্রস্তাবে রাজি হয়। যদিও ফিটনেস টেস্ট দিতে এসেছিল আট-নয় জন। তাদের মধ্য থেকে চার জনকে বেছে নেওয়া হয়।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘তবে চেঞ্চোকে নেওয়ার জন্য গত দু’বছর ধরে চেষ্টা করে অবশেষে সফল হয়েছি।’’
সুব্রত ও বিজয়ন মনে করেন, মিনার্ভার বিদেশি ফুটবলাররাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। সুব্রত বললেন, ‘‘মিনার্ভার বিদেশিরা কেউ-ই চিমা ওকোরি, এমেকা এজুগো বা মজিদ বিসকারের মানের নয়। তবে ওরা মাঠে নেমে কাজের কাজটা করছে।’’
কলকাতার দুই প্রধানের কর্তারা কি শুনলেন?