চ্যাম্পিয়ন: বিশ্ব ভারোত্তোলনে সোনা জিতলেন চানু। ফাইল চিত্র
দু’দশক পরে ভারোত্তোলনের বিশ্বমঞ্চে আবার ভারতের পতাকা উড়ল। ২২ বছর পরে আবার এক ভারতীয় মেয়ে ভারোত্তোলনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সোনা আনলেন দেশের জন্য।
শেষবার এনেছিলেন কর্ণম মালেশ্বরী। ১৯৯৫ সালে। এ বার আনলেন সাইখম মীরাবাই চানু। বুধবার রাতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনাহেইমে। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে, দেশের পতাকার দিকে তাকিয়ে আর চোখের জল সামলাতে পারেননি চানু। সোনার পদক গলার ঝোলানোর সময় কেঁদেই ফেলেন।
রিও অলিম্পিক্সের ব্যর্থতা তাঁকে যে এত দিন যন্ত্রণা দিয়ে এসেছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে চানুর কথায়। সোনা জেতার পরে তিনি বলেছেন, ‘‘রিও অলিম্পিক্সে পদক জিততে না পেরে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। রিও-তে আমি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম। আর তার জন্য আজও দুঃখ হয়।’’ রিওতে যে তিনি নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন, তা আগেও বলেছেন চানু। এ বার বলছেন, ‘‘এই পদকটা সেই যন্ত্রণার স্মৃতি ভুলিয়ে দিল।’’
আরও পড়ুন: কুম্বলের হয়ে লড়েছিলেন সৌরভ
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের ৪৮ কেজি বিভাগে চানু স্ন্যাচে ৮৫ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৯ কেজি তুলে চ্যাম্পিয়ন হন। মোট ওজন তোলেন ১৯৪ কেজি। যা জাতীয় রেকর্ড। ২৩ বছরের মণিপুরের মেয়ে এরই মধ্যে তাঁর পরবর্তী লক্ষ্যও ঠিক করে ফেলেছেন। শপথ নিচ্ছেন নতুন লড়াইয়ের, ‘‘আমি নিজের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে পরের বছর কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়ান গেমসে পদক জয়ের জন্য ঝাঁপাব। তার পরে আমার লক্ষ্য থাকবে টোকিও অলিম্পিক্স থেকেও পদক আনা।’’
মালেশ্বরীর পরে ভারতীয় ভারোত্তোলনকে স্বপ্ন দেখান এই চানু। ১৯৯৪, ১৯৯৫ সালে পরপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সোনা জিতেছিলেন মালেশ্বরী। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিক্সে জেতেন ব্রোঞ্জ পদক। ২০০৭ সাল থেকে ভারোত্তোলন শুরু করেন চানু। তাঁকে রোজ ৬০ কিলোমিটার যাতায়াত করতে হতো ইম্ফলের ট্রেনিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য। রিও অলিম্পিক্সের সময় চানু আশা দেখিয়েছিলেন পদক জেতার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশ করেন তিনি। মূল রাউন্ডে থাকা ১২ জন প্রতিযোগীর দু’জন সে দিন নিজেদের ইভেন্ট শেষ করতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন চানু।
হয়তো সে জন্যই এই পদকটার মূল্য সোনার চেয়েও বেশি মণিপুরের মেয়ের কাছে। ‘‘সোনা জেতার পরে আমি খুব কান্নাকাটি করেছি। আসলে ভারতের পতাকা উড়তে দেখে আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম,’’ বলেছেন চানু। তাঁর ভাল লাগছে, দেশের বিভিন্ন মহল থেকে অভিনন্দনবার্তা পেয়ে। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাকে এখন সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আমার খুব গর্ব হচ্ছে। আমার এখন লক্ষ্য থাকবে দেশকে আরও পদক এনে দেওয়া।’’ চানুর সাফল্যের পরে একের পর এক অভিনন্দনবার্তা এসেছে দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং ক্রীড়াজগতের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে।