মিতালির জন্য বাড়িতে নিরামিষ

মিতালির বাড়িতে তখন আত্মীয়দের ঢল নেমেছে। রেল কমর্চারী মামা প্রকাশ বাড়ির সবাইকে নিয়ে চলে এসেছেন ভাগ্নীকে বিমানবন্দরে বরণ করার জন্য। মা লীলা এবং বাবা দোরাই সবাইকে নিয়ে ভারত অধিনায়ক মেয়েকে ঘরের আনার জন্য তৈরি হচ্ছেন।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:০৪
Share:

তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখরের সঙ্গে মিতালি। ছবি: পিটিআই।

সাই নগর ব্যাঙ্ক কলোনির ২৮ নম্বর বাড়ি। যে বাড়ির মেয়েকে দিন কয়েক আগেই সানিয়া মির্জা বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ইনক্রেডিবল অ্যাম্বাসেডর’ তিনি যে তাঁর পাড়াতেই এত অপরিচিত হবেন কে জানত!

Advertisement

শুক্রবার দুপুর একটা। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন এই বাড়ির মেয়ে মিতালি রাজ। পাঁচ দিন আগেই কার্গিল থেকে ক্যানিং যাঁর দলের বিশ্বজয়ের জন্য প্রার্থনায় বসেছিল। এ দিন সেই মিতালির প্রতিবেশীই দিলেন চমকটা। মিতালি রাজের বাড়ি কোনটা জানতে চাইতেই তাঁর বাড়ি লাগোয়া প্রতিবেশী এস দেবরাজ-এর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কে মিতালি? পাশের বাড়ির মেয়েটা? ক্রিকেট খেলে জানতাম। কিন্তু বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়ক ছিল জানতাম না তো।’’ সব জানার পর বললেন, ‘‘আসলে ও কখন আসে, কখন যায়, সেটাই জানি না। বছর দু’য়েক আগে এক বার মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিলাম। তখন এক বার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে।’’

মিতালির বাড়িতে তখন আত্মীয়দের ঢল নেমেছে। রেল কমর্চারী মামা প্রকাশ বাড়ির সবাইকে নিয়ে চলে এসেছেন ভাগ্নীকে বিমানবন্দরে বরণ করার জন্য। মা লীলা এবং বাবা দোরাই সবাইকে নিয়ে ভারত অধিনায়ক মেয়েকে ঘরের আনার জন্য তৈরি হচ্ছেন। কলকাতার সাংবাদিক শুনেই বলে দিলেন, ‘‘বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিন কলকাতা থেকে অনেক শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছি। কলকাতাকে আপনার মাধ্যমেই ধন্যবাদ জানিয়ে দিলাম।’’

Advertisement

লীলার দুঃখ বৃহস্পতিবারই মেয়ে লন্ডন থেকে ঘরে চলে আসত। কিন্তু নয়াদিল্লিতে সংবর্ধনার জন্য থেকে যাওয়ায় আর মেয়ের প্রিয় চিকেন ভর্তা খাওয়ানো গেল না। বললেন, ‘‘শুক্র ও শনি দু’দিন মিতালি নিরামিষ খায়। তাই রবিবারের আগে আর ঘরে চিকেন ভর্তা রান্না করে খাওয়াতে পারব না। তবে মুলো দিয়ে ডাল ও খেতে দারুণ ভালবাসে। সঙ্গে পালক-পনির। আজ মেয়ের জন্য এটাই রান্না করলাম।’’ পাশে তখন এসে জুটেছে মিতালির চার বছরের ভাইঝি অনঘা। পিসি বাড়ি আসবে বলে এ দিন স্কুলেই যায়নি সে। বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লিতে পিসির সঙ্গে কথা হয়েছে ছোট্ট অনঘার।

মেয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারেনি বলে হতাশ দোরাই রাজও। বললেন, ‘‘দু’টো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলল আপনাদের শহরের ঝুলন আর আমার মেয়ে। কিন্তু দু’টোতেই রানার্স হয়ে ফিরতে হল ওদের। এর চেয়ে হতাশার আর কী হতে পারে। মেয়ে তো ফাইনালের পর আর আমার সঙ্গে ফোনে কথাই বলেনি। যা যোগাযোগ সব ওই হোয়াটসঅ্যাপে। ওর মনের চাপা কষ্টটা বুঝতে পারছি।’’ একটু থেমে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে হকির মীররঞ্জন নেগির মতো আমার মেয়েও একদিন কোচ হিসেবেই বিশ্বকাপটা এনে দেবে।’’

উঠে আসার আগে জানতে চাওয়া হয়েছিল পাড়ায় প্রতিবেশীও এতটা অচেনা মিতালির কাছে! এ বার দোরাইয়ের সঙ্গে মুখ খুললেন বাবা দোরাই এবং মা লীলাও। বললেন, ‘‘দু’মাস পরে বাড়ি ফিরছে মেয়েটা। সব সময় তো হায়দরাবাদের বাইরেই থাকে খেলার জন্য। লোকে ওকে রোজ দেখবে কী ভীবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন