ম্যাচ ড্র করে লিগের রাস্তা কঠিন করল মহমেডান

প্রেস বক্সে বসে যা দেখে উঠে দাঁড়ালেন মহমেডানের দশ নম্বর ডিকার বান্ধবী জর্জেটও। বললেন, ‘‘সভাপতির আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ডিকা আঘাত পেয়েছে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৪
Share:

দুরন্ত: মহমেডানের আক্রমণ রুখছেন কাস্টমস গোলরক্ষক প্রিয়ন্ত। মঙ্গলবার বারাসতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মহমেডান ১ : কাস্টমস ১

Advertisement

বিরতির ঠিক আগে রামধনুর মতো বাঁক খাওয়ানো ফ্রিকিকে গোল করে দু’হাত নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের সামনে এনে তিনি ছুটলেন সাইডলাইনের দিকে।

মহমেডানের গোলদাতা দিপান্দা ডিকার পাশে এসে তখন জুটেছেন সাদা-কালো শিবিরের শেখ ফৈয়জ, দীপেন্দু দোয়ারিরা। প্রয়াত মহমেডান সভাপতি সুলতান আহমেদকে শ্রদ্ধা জানাতে গোটা দল সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে এর পরেই সেরে নিল প্রার্থনা।

Advertisement

প্রেস বক্সে বসে যা দেখে উঠে দাঁড়ালেন মহমেডানের দশ নম্বর ডিকার বান্ধবী জর্জেটও। বললেন, ‘‘সভাপতির আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিক ভাবে ডিকা আঘাত পেয়েছে। মাঠে আসার সময় বলেছিল আজ গোল করে শ্রদ্ধা জানাবে।’’

এ দিন গোল করার সুবাদে ছয় গোল হয়ে গেল ডিকার। ছুঁয়ে ফেললেন এখনও পর্যন্ত কলকাতা লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা মোহনবাগানের কামো স্টিফেন বায়ি-কে। কিন্তু এ দিন কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে অবনমনের আওতায় চলে যাওয়া দল কাস্টমসের সঙ্গে ড্র করে সেই ডিকার মুখেই যেন অমাবস্যার অন্ধকার।

থমথমে মুখে ডিকা বলছিলেন, ‘‘এগিয়ে গিয়েও না জিততে পারলে হতাশ তো লাগবেই। ফুটবলে অনেক কিছুই হয়। আমরা লড়ে যাব শেষ দিন পর্যন্ত।’’

আরও পড়ুন: ‘হাজার গোল করলে আমার সমান হবে’

প্রয়াত সভাপতিকে শ্রদ্ধা জানাতে এ দিন মাঠে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে হাজির ছিলেন প্রায় হাজার সাতেক মহমেডান সমর্থক। ম্যাচ শুরুর আগে দু’মিনিট নীরবতা পালনও করা হয়। কিন্তু তার পরেও জিতে মাঠ ছাড়তে পারল না বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের দল।

ম্যাচের পর কাস্টমস রিজার্ভ বেঞ্চের কাছে গিয়ে ‘তোরা মেয়েদের মতো খেলছিস’ বলে পরিস্থিতি গরম করার চেষ্টা করছিলেন মহমেডান দলের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি। কিন্তু বিরতির আগে ডিকার গোলে এগিয়ে গিয়েও উজ্জীবিত ফুটবল খেলল কেথায় মহমেডান!

মহমেডানকে রুখে ছয় ম্যাচে তিন পয়েন্ট হল কাস্টমসের। অবনমনের কক্ষপথে ঢুকে গেলেও এ দিন তাদের প্রিয়ন্ত সিংহ, উজ্জ্বল হাওলাদাররা দুরন্ত খেললেন। কাস্টমস কোচ রাজীব দে টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির প্রাক্তনী। চুটিয়ে খেলেছেন কলকাতা ময়দানে। সহকারী কোচ প্রলয় সাহাও ময়দানে চেনা মুখ। এই দু’জনে মিলে ধরে ফেলেছিলেন সাদা-কালো শিবিরের ‘আসল খেলোয়াড়’ তীর্থঙ্কর সরকার। তিনিই মাঝমাঠে বল ধরে দুই উইং-এ দীপেন্দু ও ফৈয়জ-কে খেলান। এ দিন ম্যাচের শুরু থেকেই সেই তীর্থঙ্কর বল ধরলেই তাঁকে ব্লক করছিলেন কাস্টমসের গোলদাতা ধীমান সিংহ এবং বেহালার ছেলে সঞ্চয়ন সমাদ্দার। ফলে দুই উইং-এ খেলা ছড়াতে পারেনি মহমেডান। উল্টে ৪-৫-১ ছকে মাঝমাঠে পায়ের জঙ্গল বানিয়ে রেখেছিল কাস্টমস। এই ধরনের ম্যাচে অর্ধেক সুযোগকেও কাজে লাগাতে হয়। সেখানে জিতেন মুর্মু যে জোড়া গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন তার পর জেতার আশা না করাই ভাল।

কর্তাদের চাপে কি না জানা নেই, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের মতো পোড় খাওয়া কোচও সোমবার সই করা মনবীরকে নামিয়ে দিয়েছিলেন তীর্থঙ্করকে তুলে। ফলে আরও অগোছাল হয়ে যায় দীপেন্দুদের মাঝমাঠ।

সাদা-কালো শিবিরের অগোছাল মাঝমাঠের সুযোগ নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধে দুরপাল্লার শটে নিয়ে সমতা ফেরান ধীমান সিংহ। দর্শনীয় গোল করে নিজেই সাইড লাইনের ধারে রাখা স্কোরবোর্ড বদলে দিয়ে আসেন তিনি।

মহমেডান কোচ বাড়ি যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘পাঁচ পয়েন্টে পিছিয়ে গিয়ে লিগের লড়াই কঠিন হল। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল—জোড়া বড় ম্যাচ জিতলে তবে ফের লিগ জয়ের রাস্তায় হাঁটতে পারব। কাজটা কঠিন। তবে সেটার জন্যই বুধবার থেকে ঝাঁপাতে হবে।’’

মহমেডান স্পোর্টিং: শঙ্কর রায়, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, সোমোতোচুকু রিচার্ড, রানা ঘরামি, কামরান ফারুক, দীপেন্দু দোয়ারি, কালু ওগবা, তীর্থঙ্কর সরকার (মনবীর সিংহ), শেখ ফৈয়জ (সত্যম শর্মা), জিতেন মুর্মু, দিপান্দা ডিকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন