বিতর্ক: আজাকে নিয়ে সমস্যায় ক্লাব কর্তারা। ফাইল চিত্র
হঠাৎ তারকা হয়ে ওঠা ফুটবলার ফিলিপ আজাকে নিয়ে অভিনব সমস্যায় মহমেডান কর্তারা! আজার আবদারে তাঁরা বেশ বেকায়দায়। বলা যায়, মাথায় হাত সাদা-কালো কর্তাদের।
মজিদ বিসকার থেকে ওডাফা ওকোলি, মাইক ওকোরো থেকে সনি নর্দে— অসংখ্য বিদেশি ফুটবলারকে নিয়ে নানা নাটক বা চমকপ্রদ ঘটনা দেখেছে ময়দান। কিন্তু আজা যা করছেন বা বলছেন তা সম্ভবত নজিরবিহীন। পাড়ায় পাড়ায় নিয়মিত খেপ খেলে বেড়ানো ফুটবলারটিকে শো-কজের হুমকি দিয়েছিল মহমেডান। কলকাতা লিগে ময়দানের অন্যতম সফল স্ট্রাইকার ক্লাব কর্তাদের বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি খেপ খেলব। ক্লাব ফুটবলে খেলব না। ওখানে ক্লাবের চেয়ে অনেক বেশি টাকা পাওয়া যায়।’’ যা শুনে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলতে যাওয়া কর্তারা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এ রকম হুমকি দেওয়ার পর গত ছয় দিন উধাও হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করে হইচই ফেলে দেওয়া আজা। অনেক কষ্টে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমবার ধরে বেঁধে এনে ফ্ল্যাটে তুলেছেন ক্লাব কর্তারা। শোনা যাচ্ছে আজ, মঙ্গলবার থেকে অনুশীলনে নামবেন সাদা-কালো জার্সিতে ১৬ গোল করা ফুটবলার। তিনি অবশ্য নিজে একাই আসেননি ঘানা থেকে নিয়ে এসেছেন তাঁর ভাই ডিফেন্ডার মোজেস যুবাহকে। যা খবর, রঘু নন্দীর দল আজা ও তাঁর ভাইকে নিয়ে আই লিগ খেলতে নামবে।
কলকাতা বা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নাইজিরিয়া, ঘানা বা ক্যামেরুনের মতো দেশের অসংখ্য ফুটবলারকে দেখা যায় ঘুরে বেড়াতে। ছাত্র-ভিসা নিয়ে তাঁরা আসেন ভারতে। এবং জীবনধারণের জন্য বেছে নেন ফুটবল। হলদিয়া থেকে বাঁকুড়া, বনগাঁ থেকে নদিয়া, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ফুটবল প্রতিযোগিতা হয় সারা বছর। প্রচুর পুরস্কার অর্থ দেওয়া হয় সেখানে। ওই সব প্রতিযোগিতায় ‘খেপ’ খেলতে যান আজার মতো অসংখ্য ফুটবলার। কলকাতায় অন্তত চার জন এজেন্ট আছেন যাঁরা বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে এই বিদেশিদের যোগাযোগ করিয়ে দেন।
আজা ঘানা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন ওই ‘খেপ’ খেলার ইচ্ছা নিয়েই। প্রথম বছর খেলতে এসে তেমন সাফল্য পাননি। পরে আবার খেলতে এসে নজরে পড়ে যান মহমেডান কর্তাদের। কম টাকায় (মাসিক ৩৫ হাজার, পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার) মহমেডানের সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে মহমেডানকে ম্যাচ জেতানোর পরে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘‘আমি খেপ খেলি। ভারতে খেপ খেলার জন্যই এসেছিলাম।’’ এ দিনও সন্ধ্যায় তাঁকে ফোনে ধরা হলেও গর্বিত ভঙ্গিতে বলে দিলেন, ‘‘ক্লাব ফুটবল খেললে কত টাকা পায় ফুটবলাররা? আই লিগ, আইএসএল কত টাকা দেবে আমাকে? এর চেয়ে খেপ খেললে অনেক বেশি টাকা পেয়ে যাব আমি।’’ আজা কিন্তু ভুল বলেননি। ক্লাবের এক কর্তা জানালেন, গত দু’সপ্তাহে নবদ্বীপ ও হলদিয়ায় দুটো টুনার্মেন্টে ছয় ম্যাচ খেলে নাকি আজা আড়াই লাখ টাকা পেয়েছেন। ক্লাব কর্তারা তাঁকে ‘খেপ’ খেলতে বারণ করায় ক্লাব সচিব কামারুদ্দিন আমেদের সঙ্গে তাঁর একপ্রস্ত কথা কাটাকাটিও হয় কয়েকদিন আগে। সামনে আই লিগের খেলা বলে ঝামেলায় যেতে চাইছেন না মহমেডান কর্তারা। কোচ রঘু নন্দী বললেন, ‘‘ আমার মনে হয় আজা কিন্তু ওডাফার সমমানের ফুটবলার। দুর্দান্ত ড্রিবল আছে পায়ে। গোলের সামনে ভয়ঙ্কর। তিনটে ট্রফি জিতেছি। প্রত্যেকটাতে গোল করেছে। কিন্তু বিশৃঙ্খল জীবন যাপন করছে। খেপ খেলে বেড়াচ্ছে। চোট পেলে আমরা সমস্যায় পড়ব। কর্তারা ওকে সাসপেন্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আই লিগের কথা মাথায় রেখে কিছু করতে বারণ করেছি। অনুশীলন শুরু হয়ে গেলেও আসছে না। কাল (মঙ্গলবার) আসবে বলেছে।’’
আইএফএ-র নিয়মে নথিভুক্ত ফুটবলারদের খেপ খেলা অপরাধ। সই করার সময় ‘খেপ খেলব না’ মুচলেকা দিতে হয়। প্রমাণ হলে সাসপেন্ড হওয়াও নিয়মে আছে। কিন্তু আইনের ফাঁকও আছে। এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ দলকে ছবি-সহ প্রতিবাদ পত্র জমা দিতে হয় রাজ্য সংস্থায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, বেশিরভাগ জায়গাতেই তো নাম ভঁড়িয়ে খেলেন আজার মতো বিদেশিরা। ফলে ছবি আর নামের সঙ্গে মিল না থাকায় প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান বিদেশিরা।