মোহনবাগান-১ (সাবিথ) : মহমেডান-২ (আদিলেজা, সুনীল)

ফুজার তোপের সামনে বেরিয়ে এল বাগান-কঙ্কাল

রাতের ঘুম ছুটল! খেলে ফেলা চারটে ম্যাচের সিডি দেখার ঠেলায়। উদ্দেশ্য, টিমের কাটাছেঁড়া। এক কাঁড়ি টাকার জলাঞ্জলি! ফুটবলারদের সঙ্গে শহরের এক নামী রেস্তোরাঁয় ‘গালা লাঞ্চ’-এর ব্যবস্থা পাকা হয়ে রয়েছে যে সোমবার! যার পুরো বিল কোচের অ্যাকাউন্টে যাবে। বড় ম্যাচ শেষে সুভাষ ভৌমিকের পরের চব্বিশ ঘণ্টার সূচি দেখলে হঠাৎ করে চোখের সামনে দু’টো দিক ভেসে উঠতে পারে হয় তিনি ডার্বি ম্যাচের প্রস্তুতি সাত দিন আগে থেকেই শুরু করে দিলেন। নয় তো বড় ম্যাচ জেতার আনন্দে এতটাই মশগুল মোহন-টিডি যে, উৎসবের মেজাজে ডুবে যেতে চাইছেন।

Advertisement

প্রীতম সাহা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২০
Share:

সুনীলের ঠিকানা লেখা ফ্রিকিক। রবিবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাতের ঘুম ছুটল! খেলে ফেলা চারটে ম্যাচের সিডি দেখার ঠেলায়। উদ্দেশ্য, টিমের কাটাছেঁড়া।

Advertisement

এক কাঁড়ি টাকার জলাঞ্জলি! ফুটবলারদের সঙ্গে শহরের এক নামী রেস্তোরাঁয় ‘গালা লাঞ্চ’-এর ব্যবস্থা পাকা হয়ে রয়েছে যে সোমবার! যার পুরো বিল কোচের অ্যাকাউন্টে যাবে।

বড় ম্যাচ শেষে সুভাষ ভৌমিকের পরের চব্বিশ ঘণ্টার সূচি দেখলে হঠাৎ করে চোখের সামনে দু’টো দিক ভেসে উঠতে পারে হয় তিনি ডার্বি ম্যাচের প্রস্তুতি সাত দিন আগে থেকেই শুরু করে দিলেন। নয় তো বড় ম্যাচ জেতার আনন্দে এতটাই মশগুল মোহন-টিডি যে, উৎসবের মেজাজে ডুবে যেতে চাইছেন।

Advertisement

এবং দুটোর কোনওটাই ঠিক নয়!

বরং উলটপুরাণ ঘটেছে রবিবারের যুবভারতীতে। কলকাতা লিগে জয়ের হ্যাটট্রিকের পর মহমেডানের কাছে মরসুমে প্রথম হার দেখল মোহনবাগান। এবং দায়ের বোঝা নিজের কাঁধে নিয়ে মোহন-টিডির সরল স্বীকারোক্তি, “আমিই ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি। ব্যর্থ ফুটবলাররা নয়। আমি।”

ম্যাচ শুরুর প্রথম আধ ঘণ্টা দেখলে সুভাষের এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত হওয়া আবার কঠিন। মোহনবাগান তখন যেন মাঠে উড়ছে! যে হারে সাবিথ-বোয়া-বলবন্তদের একের পর এক আক্রমণ সাদা-কালোর ছোট বক্সে আছড়ে পড়ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল, হয়তো পুলিশ ম্যাচের চেয়েও বেশি গোলে জিতবে মোহনবাগান। কিন্তু অনুমানের ঘোড়া ছোটানো থেমে গেল সাবিথের প্রথম গোলের পরেই। যে মুহূর্তে বাড়তি তাগিদ নিয়ে আরও তেড়েফুঁড়ে খেলার সময়, ঠিক তখনই বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো কেঁপে গেলেন সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা। অ্যাটাকিং ফুটবল খেলার পরিবর্তে গোটা টিম তখন গোলপোস্টের পাহারায় বাগানের ছোট বক্সের সামনে। আর যে টিম ইতিমধ্যেই একটা গোল হজম করে বসে, সেই মহমেডান দলবল নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে মাঠে। সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে করতে সুভাষের মুখে একটা সময় থুতু পর্যন্ত উঠে এল, “দলটাকে ওপরে তোল, ওপরে তোল।” কিন্তু কে কার কথা শোনে? বিদ্যূৎস্পৃষ্টে ‘মৃত্যু’র হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারল না কাতসুমিদের।

শেহনাজের ফ্রি কিক থেকে সাবিথের সুযোগ-সন্ধানী গোল আর রাজীব ঘোষের সেন্টার থেকে মহমেডানের বিদেশি স্ট্রাইকার আদিলেজার ১-১ করার মধ্যে ব্যবধান একুশ মিনিটের। আর এই একুশ মিনিটে অন্তত নিশ্চিত সাতটা সুযোগ তৈরি করেছে ফুজা তোপের দল। তবে ম্যাচের রং বদলে দিল কিংশুকের একটা ব্যাক হেড। যেটা কভার করা উচিত ছিল ধনচন্দ্র সিংহের। তিনি করেননি। উল্টে আদিলেজা শিল্টনকে একের বিরুদ্ধে এক অবস্থায় পেয়ে যান। বাগান অধিনায়ক-গোলকিপারের তৎপরতায় সেই যাত্রা বেঁচে গেলেও, দীর্ঘমেয়াদি দৌড়ে রক্ষা পায়নি। ম্যাচের পরে সুভাষ বলছিলেন, “গোলের পরে কেন টিমটা দাঁড়িয়ে গেল, সেটা নিয়ে চর্চা করতে হবে। সারা রাত জেগে ম্যাচের সিডি দেখব। আমাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ওষুধ খুঁজে বার করতে হবে।”

কী ওষুধ লাগবে সেটা সুভাষই খুঁজুন। তবে রোগটা যে আত্মতুষ্টি বোঝার জন্য অন্যদের বিশেষ মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। সাবিথ-সতীশরা হয়তো ভেবেছিলেন পুলিশ কিংবা কালীঘাট এমএসের মতোই মহমেডান ম্যাচটাও সহজে উতরে যাবেন। কিন্তু বিপক্ষে একটা দাপুটে বিদেশি স্ট্রাইকার পড়তেই বাগানের কঙ্কাল বেরিয়ে এল। ম্যাচের সেরা আদিলেজার ‘উইথ দ্য বল’ দৌড়, শরীরকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা এবং ফুটবলবুদ্ধির সামনে সুভাষের শেখানো পাসিং ফুটবল উধাও। বাগানে তখন লং বল আর লং বল। দ্বিতীয়ার্ধে অবস্থা আরও বিশ্রী আকার নেয়। এমনকী একটা সময় আদিলেজার ‘বক্স টু বক্স’ লম্বা দৌড়ের সামনে কিংশুক-শৌভিক-শেহনাজদের অসহায় মুখগুলো ভেসে উঠছিল বারবার। পিছন থেকে ট্যাকল করে ফাউল করলেন, হলুদ-কার্ডও দেখলেন কিংশুক। ১-২ লজ্জা আটকাতে পারলেন না। সুনীল কুমারের ফ্রিকিক সোজা জড়িয়ে যায় বাগানের জালে। ম্যাচ শেষে ফুজা তোপে বলছিলেন, “আমার স্বপ্নপূরণ হল। এক মাসের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকে হারালাম। কলকাতায় আমার কোচ হওয়া সার্থক।” সত্যিই তো। ২০০৮-এর পর এক লিগে ইস্ট-মোহন দুই প্রধানকেই হারাল মহমেডান।

১-২ পিছিয়ে পড়ার পরে সুভাষ তখন ৪-১-৩-২ থেকে ৪-৪-২ ছকে ফিরে এসেছেন। পঙ্কজ মৌলা ও রাম মালিকের মতো ‘কারবাইডে পাকা আম’ নামিয়ে। মাঝমাঠের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার লালকমল ভৌমিক নামলেন ম্যাচ শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে। উদ্দেশ্য, সারাক্ষণ যে বাগানের মাঝমাঠকে বসন্ত সিংহ-বিজয় মাড্ডিরা ‘রোড রোলার’ দিয়ে পিষে ফেললেন, সেই মাঝমাঠে সামান্য গার্ড দেওয়া। সুভাষের ছক বদল অবশ্য কিছুটা কাজে দিয়েছিল শেষ লগ্নে। কাতসুমি-বোয়ারা গোলের সন্ধান দিতে না পারলেও, সুযোগ তৈরি হয়। তবে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের মতো মহমেডান গোলকিপার অর্ণব দাস শর্মা এ দিনও অনবদ্য কিছু গোল বাঁচালেন। সুভাষ বলছিলেন, “রাম-পঙ্কজকে নামাতে বাধ্য হলাম। আমার কিছু করার ছিল না। তবে ফাতাইকে নামাইনি বাকি ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়ার ভয়ে। সবাইকে নিয়ে কাল লাঞ্চে যাচ্ছি।”

এক রবিবার ‘কিছু করতে’ ব্যর্থ সুভাষ পরের রবিবার ডার্বিতে কী করতে পারেন এখন সেটাই দেখার!

মোহনবাগান: শিল্টন, কিংশুক, ধনচন্দ্র, শৌভিক, সতীশ, শেহনাজ (লালকমল), কাতসুমি, শৌভিক (পঙ্কজ), বোয়া, বলবন্ত (রাম), সাবিথ

মহমেডান: অর্ণব, সুনীল, গৌর (কাজি), উগো, অসীম (ওয়াসিম), বিজয়, ফুলচাঁদ, রাজীব, বসন্ত, সুখদেব, আদিলেজা (আলফ্রেড)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন