বিধ্বস্ত: কুড়ি মিনিটেই উঠে গেলেন কাতসুমি। ফাইল চিত্র
সন্ধেবেলাই খবর পেলাম মলদ্বীপে এএফসি কাপের ম্যাচে মোহনবাগান ২-৫ চূর্ণ হয়েছে ওদের মেজিয়া স্পোর্টস অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ক্লাবের কাছে। খবরটা পেয়েই মন ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেল গত নভেম্বরে।
যে দিন বেঙ্গালুরু এফসি দেশের প্রথম দল হিসেবে এএফসি কাপের ফাইনালে খেলতে নেমেছিল। সে দিন হেরে ফিরলেও গোটা দেশ কুর্নিশ করেছিল সুনীল ছেত্রীদের। তার পর রাস্তাঘাটে এ কথা বহু বার শুনেছি—চার বছরের পুঁচকে ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি যদি এএফসি কাপের ফাইনালে যেতে পারে, তা হলে শতাব্দী প্রাচীন মোহনবাগান কেন পারছে না?
ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, কাজটা খুব একটা কঠিন নয়। দরকার শুধু ক্লাব কর্তাদের মানসিকতা বদল। মোহনবাগান এ পর্যন্ত ১৪ বার ফেড কাপ জিতেছে। আগামী বছরগুলোতে হয়তো আরও অনেক বার জিতবে। কিন্তু মোহনবাগান কোনও দিন এএফসি কাপ পায়নি। এটা বুঝে এশীয় স্তরের এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নজর দিতেই পারত তারা।
অনেকেই এ ক্ষেত্রে মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন-কে দুষবেন। আমি বরং বলব, এএফসি স্তরে ভাল ফল করার জন্য সবার আগে এই টুর্নামেন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে কর্তাদের। আর তাদের সেটা বোঝাতে পারে টিমের কোচ। মোহনবাগান কোচের সঙ্গে কর্তাদেরও বুঝতে হবে, সবচেয়ে বড় হচ্ছে দেশের সম্মান। এএফসি কাপে একটা ম্যাচ খেললে টিমের এগারোটা ফুটবলার আহত হয়ে যাবে না। আবার এএফসি কাপে একটা ম্যাচ হারলে মোহনবাগান পরের জাতীয় টুর্নামেন্ট জিতেই ফিরবে সে কথাও কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে না।
তা হলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট নিয়ে ক্লাব কর্তাদের কেন এই দায়সারা মনোভাব? পর পর দু’বছর ধরেই দেখছি মোহনবাগান এএফসি কাপে খেলার সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাচ্ছে না। যেন মাঠে নামতে হবে বলে মাঠে নামছে। পুরো শক্তি নিয়ে নামছে কোথায়? আসল লক্ষ্য সেই ফেড কাপ এবং আই লিগ। এটা ক্লাব কর্তাদের ভুল সিদ্ধান্ত। যেখানে মোহনবাগান কোচকেও কাঠগড়ায় তুলতে হয়। কোচ কেন বোঝাবে না যে, এএফসি কাপও গুরুত্বপূর্ণ।
মানছি, ক্লাবের আর্থিক টানাটানি রয়েছে। কিন্তু তা বলে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই এই গা-ছাড়া মনোভাব কেন? যদি আর্থিক কারণেই এই মনোভাব হয়ে থাকে, তা হলে এএফসি কাপ থেকে নাম তুলে নিতে পারে মোহনবাগান। সেক্ষেত্রে দেশের অন্য কোনও ক্লাব খেলুক সেই জায়গায়। কর্তারা এটাও তো মাথায় রাখতে পারেন, এএফসি কাপে যদি মোহনবাগান সাফল্য পায় তা হলে কর্পোরেট সংস্থাগুলোও ক্লাব সম্পর্কে আগ্রহ দেখাতে পারে।
ক্লাব প্রশাসকদের বুঝতে হবে, জেতা একটা অভ্যাস। সেটা এক বার নষ্ট হয়ে গেলে প্রভাব পড়ে দলে। পুরনো ছন্দ ফিরে পেতে দেরি হয়। আইজল ম্যাচের কথা ভেবে মোহনবাগান রবীন্দ্র সরোবরে এই মেজিয়ার কাছে এএফসি কাপে হেরে গিয়েছিল। সনি নর্দে-সহ প্রথম একাদশের সিংহভাগ ফুটবলারদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল সে দিন। তার আগে পরপর ম্যাচ জিতে মোহনবাগান কিন্তু ছন্দে ছিল। এএফসি কাপে মেজিয়ার কাছে হারের পর আই লিগে শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে তা এখন সবাই জানে!
ক্লাব কর্তারা ও কোচ এই ঢিলেমি দেওয়ার মানসিকতা দেখানোয় ফুটবলাররাও তার সুবিধে নিতে শুরু করে দিয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন সনি নর্দে, ডাফি-সহ একাধিক ফুটবলার এএফসি কাপের ম্যাচ দেখলেই চোটে কাবু হয়ে পড়ছে। অথবা বলে দিচ্ছে, তারা অসুস্থ। কিন্তু আই লিগ বা ফেড কাপের ম্যাচের সময় সব চোট-অসুস্থতা উধাও হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় আন্তর্জাতিক ম্যাচে দলে থাকতে না পারলে ফুটবলাররা রাগে, দুঃখে ফেটে পড়ত। আর এখন তারকারা আন্তর্জাতিক ম্যাচে বসে থাকতে চায়। এর চেয়ে পরিহাসের ব্যাপার আর কী হতে পারে। সনি নর্দেকে কে গিয়ে বলবে— ওহে সনি, আই লিগে গোল করে সেলিব্রেশনের যে আনন্দ রয়েছে, তার চেয়েও অনেক বেশি গৌরব রয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করার মধ্যে। কে জানে বাবা, প্রধান ফুটবলারদের বিশ্রাম দেওয়াটা কীসের ট্যাকটিক্স! মোহনবাগানের হয়ে বহু যুদ্ধ লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পাঁচ গোল খাওয়ার দিনটা ক্লাবের জন্য লজ্জার।