চ্যালেঞ্জ: ইতিহাসের হাতছানি আইজলের সামনে। —ফাইল চিত্র
পাহাড়ে সূর্যোদয়, না সমতলে?
ভারতীয় ফুটবলের নতুন ইতিহাস নাকি পরম্পরার পুনরাবৃত্তি?
আজ রবিবারের আই লিগের আকাশে উড়বে কোন আবির— লাল নাকি সবুজ?
বহু বছর পর এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর উৎকন্ঠায় মেতে থাকবে জয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে গঙ্গাপারের শহর।
সঞ্জয় সেনের টিম খেলবে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে। কিন্তু পুরো টিমের মন পড়ে থাকবে শিলং-য়ে। সরোবরের গ্যালারিতে যে সবুজ-মেরুন দর্শকরা থাকবেন তাঁদেরও চোখের চাহনি বারবার বদলাতে হবে। সকলে জানতে চাইবেন খালিদ জামিলের আইজল এফ সি-র ফল কী হল। টিভির দর্শকদের বারবার বদলাতে হবে চ্যানেল।
মোহনবাগানের সঙ্গে অবশ্য আইজলের ভাবনার কোনও মিল নেই। তাদের পথ ভিন্ন। কলকাতার দিকে পাহাড়বাসীর চোখ থাকবে না। তাদের সব ফোকাস নিজেদের উপর।
মহম্মদ আল আমনা বা কামো বায়োরা নামবেন কিছুটা অর্জুনের লক্ষ্যভেদের ভাবনা নিয়ে। তাঁদের থিম সং আজ, ‘ সর্বশক্তি নিয়ে শিলং লাজংকে বধ করো। আগে কী হয়েছে দেখার দরকার নেই, এ বার যেন ইতিহাস ফস্কে না যায়।’ আইজল চ্যাম্পিয়ন হলে জাতীয় লিগ এবং আই লিগ মিলিয়ে একুশ বছরে প্রথম বার এদেশের ফুটবলে একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত উপস্থিত হবে। বাংলা, গোয়া, পঞ্জাব, মুম্বই ছাড়িয়ে উত্তর-পূর্বে প্রথম বার পড়বে ফুটবল-পূর্ণিমার আলো। এত দিন যে অঞ্চলটা ছিল শুধু বিভিন্ন ক্লাবের ফুটবলের সাপ্লাই লাইন, তারাই এ বার পরবে মুকুট। শুধু তাই নয় প্রমাণ হয়ে যাবে কম বাজেটের টিমও চ্যাম্পিয়ন হয়। সনি নর্দের পাওয়া টাকার সামান্য বেশি এ বার টিম গড়তে খরচ করেছে আইজল।
সেই আলোর অপেক্ষায় পাহাড় যেমন শনিবার রাত থেকে তৈরি হচ্ছে ঢাক-ঢোল আর ‘ওলে ওলে আইজল’ গান নিয়ে, তেমনই শনিবার সকালে মোহনবাগান অনুশীলনের সময় কর্তা, সমর্থকদের হাতে হাতে ঘুরেছে প্রসাদী ফুল। প্রসাদ। ঠাকুরের ছবি। তাঁদের কেউ কেউ আবার আশা আর অশঙ্কায় দুলতে দুলতে পকেটে আবির নিয়েও যাবেন লুকিয়ে। যদি ওড়ানোর সুযোগ এসে যায়।
আজ যে আই লিগের চ্যাম্পিয়ন্স ডে।
খেতাব জেতার অঙ্কটা খুব সহজ। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে আইজল-শিলং ম্যাচে আইজলকে অন্তত ড্র করতেই হবে। আর মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে শুধু চেন্নাইকে হারালেই হবে না, হারতে হবে আইজলকে।
উত্তেজক এই পরিস্থিতিতে সঞ্জয় সেন যেমন চাপে, একই চাপ নিতে হচ্ছে খালিদকেও। প্রত্যাশার চাপ।
ম্যাচের আগের দিন সেটা বেরিয়ে পড়েছে দুই কোচের মুখ থেকেই।
আরও পড়ুন:আই লিগে বিপ্লবের নাম এখন আইজল
সঞ্জয় যেমন বলে দিয়েছেন, ‘‘ছোট টিমগুলোই আমাদের এ বার সবথেকে ভুগিয়েছে। ম্যাচ জেতার পর মাঠের বাইরে এসে জানব চ্যাম্পিয়ন হলাম কি না? মানসিক চাপ তো আছেই। ফুটবলে যে সবই সম্ভব।’’
আর আইজলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দোরগোড়ায় এনে দেওয়া খালিদের মন্তব্য, ‘‘টিমের উপর চাপ যাতে না পড়ে সে জন্য নিজেই সব চাপ নিচ্ছি। চ্যাম্পিয়ন শব্দটা টিমের ভিতর একেবারেই ঢুকতে দিচ্ছি না।’’
চ্যাম্পিয়ন হলে যেমন আইজলের সঙ্গে তাঁদের কোচ খালিদও এদেশের এলিট কোচেদের তালিকায় তুলে ফেলবেন নিজের নাম, তেমনই সঞ্জয়ের মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলে ছুঁয়ে ফেলবে ডেম্পোকে। পাঁচ বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড। আর চেতলার কোচ নিজে ছোঁবেন সুব্রত ভট্টাচার্যকে। দু’বার কোচ হিসাবে পালতোলা নৌকোয় আই লিগ তোলার জন্য।
ম্যাচের আগে অবশ্য নানা অঙ্ক চলছে দুই শিবিরেই। সঞ্জয় এ দিন হাল্কা অনুশীলন করিয়েছেন দলকে। তাঁর দলে একটি পরিবর্তন হতে পারে। আজহারউদ্দিন মল্লিকের জায়গায় খেলতে পারেন রেইনার ফার্নান্ডেজ। খালিদ পাচ্ছেন না টিমের সেরা দুই ফুটবলার আশুতোষ মেহতা আর আলফ্রেড জারিয়ানকে। শিলং বরাবরই গাঁট আইজলের। সে জন্যই আশায় বুক বেঁধে সঞ্জয় বলেছেন, ‘‘ওদের ডার্বির রেকর্ডটা দেখুন। শিলং এগিয়ে। আইজলের জেতা সহজ হবে না।’’ পাল্টা খালিদের মন্তব্য, ‘‘কঠিন ম্যাচ। কিন্তু শিলংয়ের সঙ্গে ড্র করলেও তো আমরা চ্যাম্পিয়ন।’’
ফেডারেশন কর্তারাও বুঝতে পারছেন না, কে চ্যাম্পিয়ন হবে? শনিবার সন্ধ্যার বিমানে ট্রফি পৌঁছেছে শিলংয়ে। যাওয়ার আগে মোহনবাগান কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলে রেখেছেন দিল্লির ফুটবল কর্তারা। সনি-ড্যারেল ডাফিরা চ্যাম্পিয়ন হলে পরে ট্রফি দেওয়া হবে মোহনবাগান মাঠে উৎসব করে।
রবিবারের রাত ন’টার আগে সবই যে উৎকন্ঠায় মোড়া।
রবিবার
মোহনবাগান বনাম চেন্নাই সিটি এফসি (টেন ওয়ান চ্যানেলে)।
লাজং এফসি বনাম আইজল এফসি (টেন টু চ্যানেলে)।
সব ম্যাচ শুরু সন্ধে ৭.০৫।