বাগানে সনির একাকী মহড়া

ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডার্বির আগে আশ্চর্যজনক ভাবে বদলে যান তিনি। এমন একটা বলয় তৈরি করেন নিজের চার দিকে, যেখানে কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। প্রস্তুতিও সারেন একা একা। তিনি— সনি নর্দে।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

টাঙ্গি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৭ ০৪:২৪
Share:

সনি-বলবন্ত। লড়াই কটকে। ফাইল চিত্র

ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডার্বির আগে আশ্চর্যজনক ভাবে বদলে যান তিনি। এমন একটা বলয় তৈরি করেন নিজের চার দিকে, যেখানে কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। প্রস্তুতিও সারেন একা একা। তিনি— সনি নর্দে।

Advertisement

শনিবার সকাল এগারোটা নাগাদ ড্রিমস বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ড্যারেল ডাফি, কাতসুমি ইউসা-রা নেমে পড়েছেন মাঠে। সনি তখনও ড্রেসিংরুমে। হাইতি তারকা এলেন সকলের শেষে। হাতে গুটিয়ে রাখা কালো রঙের ইলাস্টিক ব্যান্ড।

প্র্যাকটিস শুরুর আগে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। সনি তাতে যোগ না দিয়ে চলে গেলেন ফিজিক্যাল ট্রেনার গার্সিয়ার কাছে।

Advertisement

ওয়ার্মআপের পরে কোচ সঞ্জয় সেন ফুটবলারদের নিয়ে সিচ্যুয়েশন প্র্যাকটিস করাচ্ছিলেন। সনি সেখানেও নেই। মাঠের অন্য প্রান্তে সরে গিয়ে মাংসপেশির জোর বাড়ানোর অনুশীলন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। টাইব্রেকার অনুশীলনেও কোনও আগ্রহ ছিল না তাঁর।

ডার্বির আগে কী হয় সনি-র? সবুজ-মেরুন তারকার সতীর্থরা বলছিলেন, ‘‘ডার্বির প্রস্তুতি সনি শুরু করে দেয় চব্বিশ ঘণ্টা আগে থেকেই। বহির্জগত থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমাদেরও চিনতে পারে না। ওর এই পরিবর্তনে প্রথম দিকে আমাদের অবশ্য খুব অস্বস্তি হতো। এখন মানিয়ে নিয়েছি।’’

সনি-র ব্যাখ্যা, ‘‘ম্যাচ শুরু হওয়ার আগের চব্বিশ ঘণ্টাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক প্রস্তুতিটা এই সময়ই নিতে হয়। অনেকে চাপ কমাতে সতীর্থদের সঙ্গে গল্প করে। সিনেমা দেখে। কিন্তু আমার তাতে মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আমি চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করি।’’

যদিও বলবন্ত সিংহ, জেজে লালপেখলুয়া থেকে আনাস এডাথোডিকা, প্রীতম কোটাল— প্রত্যেকেই ফুরফুরে মেজাজে। ফেডারেশন কাপ শুরুর আগে কারণে অকারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠা সবুজ-মেরুন কোচও আশ্চর্য রকম শান্ত।

ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও শিলিগুড়িতে আই লিগ ডার্বিতে জয় কি সেমিফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে? প্র্যাকটিসের পরে সঞ্জয় বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগ দারুণ। টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল। ডার্বিতে কী হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। যারা চাপমুক্ত হয়ে খেলবে, তারাই জিতবে।’’ সনি-ও মনে রাখতে চান না আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অসাধারণ ফ্রি-কিকে গোলটা। তাঁর যুক্তি, ‘‘অতীত নিয়ে পড়ে থাকার কোনও মানে হয় না। আমাদের লক্ষ্য ফেড কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।’’ মোহনবাগান কোচ চিন্তিত ইস্টবেঙ্গলের এক জনকে নিয়েই। তিনি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য! বললেন, ‘‘মনোরঞ্জন ও সুব্রত ভট্টাচার্যের খেলা দেখে বড় হয়েছি। মনাদা দায়িত্ব নেওয়ার পরে দলটা বদলে গিয়েছে।’’

সবুজ-মেরুন শিবিরে উদ্বেগের কারণ ক্লান্তি। বেঙ্গালুরু-র বিরুদ্ধে খেলে শুক্রবার রাত প্রায় এগারোটায় ভুবনেশ্বরের হোটেলে ফেরেন কাতসুমি-রা। সকালে উঠেই ফের ৪২ কিলোমিটার দূরের মাঠে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমের মধ্যে প্র্যাকটিস করতে আসতে হয়েছে। ফুটবলাররা বলছেন, ‘‘ম্যাচের পরে ক্লান্তিতে সহজে ঘুম আসতে চায় না। তার ওপর প্রচণ্ড গরম। শরীর চলছে না।’’

ব্যতিক্রম এদুয়ার্দো ফেরিরা। তাঁর উপরেই থাকছে ওয়েডসন ও প্লাজা-কে আটাকানোর দায়িত্ব। তাই বেঙ্গালুরু ম্যাচের ক্লান্তি ভুলে পুরোদমেই প্র্যাকটিস করলেন তিনি। টিম বাসে ওঠার আগে এদুয়ার্দো-র হুঙ্কার, ‘‘ওয়েডসন-প্লাজা ভাল ফুটবলার। কিন্তু আমাকে টপকে গোল করা সহজ নয়। আগের দু’টো ডার্বিতেও ইস্টবেঙ্গল আমাদের হারাতে পারেনি। আশা করছি, এ বারও পারবে না।’’

সনি-র মৌনতা ও এদুয়ার্দোর হুঙ্কারে ডার্বির আগে চাপমুক্ত সবুজ-মেরুন শিবির!

ফেডারেশন কাপ: আইজল এফসি বনাম বেঙ্গালুরু এফসি (বিকেল, ৪.০০)। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান (সন্ধে, ৭.০০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন