সুয়ারেজের বই ও উইং প্লেতে মর্গ্যান-বধ

‘আমি শুধু জিততে চাই তাই নয়, জয়টা আমার জন্য খুব জরুরি!’ ফ্রাঞ্চিকোলির দেশের বিতর্কিত স্ট্রাইকার লুই সুয়ারেজের আত্মজীবনী ‘ক্রসিং দ্য লাইন’-এর ব্যাক কভারে লেখা রয়েছে এই কথাটা। মোহনবাগান মিডিও বিক্রমজিৎ সিংহকে বইটা দেখিয়েছেন তাঁর এজেন্ট বেটো।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৬
Share:

জয়ের উৎসব দুই গোলদাতার। বলবন্তের সঙ্গে ধনচন্দ্র। ছবি:শঙ্কর নাগ দাস।

মোহনবাগান-২ (ধনচন্দ্র, বলবন্ত)

Advertisement

ডেম্পো-০

‘আমি শুধু জিততে চাই তাই নয়, জয়টা আমার জন্য খুব জরুরি!’

Advertisement

ফ্রাঞ্চিকোলির দেশের বিতর্কিত স্ট্রাইকার লুই সুয়ারেজের আত্মজীবনী ‘ক্রসিং দ্য লাইন’-এর ব্যাক কভারে লেখা রয়েছে এই কথাটা। মোহনবাগান মিডিও বিক্রমজিৎ সিংহকে বইটা দেখিয়েছেন তাঁর এজেন্ট বেটো। শনিবার দেশোয়ালি সতীর্থ বলবন্ত সিংহকে যে কথাটা আবার বলেছিলেন বিক্রমজিৎ। বলবন্তের গোলের খিদের পিছনে সেটা কাজ করল কি?

পৌলমী চক্রবর্তী অবশ্য ম্যাচ দেখে বেরোনোর পরে বান্ধবীকে বললেন, আমি মাঠে এলে বাগানে তিন পয়েন্ট আসে দেখছি। পৌলমীর স্বামীকে ময়দান খুব ভাল চেনে। শঙ্করলাল চক্রবর্তী তো মোহনবাগানেরই সহকারী কোচ।

পৌলমীর পিছনে বসে এ দিন খেলা দেখছিলেন সদ্য মাতৃহারা বাগানের দুই প্রাক্তন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও রঞ্জন চৌধুরী। এই দু’জনে আবার বললেন, “ম্যাচের সেরা বাগান কিপার দেবজিৎ মজুমদার চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছে।”

তবে দিনের সেরা উদ্ধৃতি দিলেন নিউ আলিপুরের গৃহবধু মঞ্জু ঘোষ। সকাল আটটার সময় গিয়েছিলেন ইডেনে। তাঁর প্রিয় দলের ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে। সেখানে শ্যামবাজারের কাছে মোহনবাগানের লক্ষ্মীরতনরা হারায় চলে আসেন যুবভারতীতে। মর্গ্যানের ডেম্পোকে ২-০ হারিয়ে ইস্টবেঙ্গলের তুলনায় পাঁচ পয়েন্টে সবুজ-মেরুনের এগিয়ে যাওয়ার দিনে মোহনবাগান সদস্যা বলে বসলেন, “সঞ্জয় সেন বাকিদের মতো আজ ফার্গুসন, কাল মোরিনহো নিয়ে বকবক করেন না। আই লিগটা মোহনবাগান ওঁর কোচিংয়ে পেলে বাঙালি কোচেদের রমরমা ফিরবে।”

আট ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে অপারজিত ভাবে আই লিগের শীর্ষে থাকা বাগান কোচ যদিও বিনয়ী ভঙ্গিতেই বলছেন, “এখনও ১২ ম্যাচ বাকি। তবে শেহনাজের মাথা গরম করে লাল কার্ড দেখাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।”

এ দিন চেতলা নিবাসী বাগান কোচের কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল পেটের গণ্ডগোলে কাবু হয়ে মর্গ্যানের রক্ষণের নেতা ক্যালাম অ্যাঙ্গাস প্রথম একাদশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ায়। কলকাতায় মর্গ্যান থাকাকালীন সম্মুখসমরে শতকরা নব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই জিতেছেন ডাকাবুকো সঞ্জয়। জানতেন টিমে সেই ৪-১-২-১-২ ছকে পেনের মতো একটা ‘ফ্রি-ম্যান’ রাখেন মর্গ্যান। কিন্তু ব্রিটিশ কোচের গোয়া ইনিংসের ‘ফ্রি-ম্যান’ কোস্তারিকান বিশ্বকাপার কার্লোস হার্নান্দেজের ফিটনেস দেখলে শিউরে উঠতে হয়। সঞ্জয় কার্লোসের টার্নিং আর ঠিকানা লেখা পাস বাড়ানো বন্ধ করলেন মাঝমাঠে শেহনাজ সিংহকে দিয়ে। সঙ্গে প্রতি দশ মিনিট অন্তর মাঝমাঠে পঙ্কজ-বোয়া-কাতসুমির জায়গা বদলের পরিকল্পনা। লেনি রডরিগেজ সঞ্জয়ের তৈরি করা এই ধাঁধা সামলাতে না পারেননি। ধনচন্দ্রর প্রথম গোল এই সুযোগেই। ধনচন্দ্রের হ্যামস্ট্রিংয়ে টানেও খুব বেশি পরিস্থিতি পরিবর্তন হল না। উইং প্লে দিয়ে বরং দ্বিতীয় গোল তুলে নিলেন সঞ্জয়।

তবে জিতলেও এ দিন বাগানের জোড়া ফরোয়ার্ডের ব্যবধান বার বার কুড়ি-বাইশ গজ হয়ে যাচ্ছিল। ডার্বিতে ব্যবধানটা পনেরো গজের বেশি হলেই মুশকিল। গোলদাতা বলবন্ত-ধনচন্দ্ররা অবশ্য আশাবাদী, “সঞ্জয়দা সব শুধরে দেবেন।”

সুয়ারেজের বই থেকে মেলা কোটেশন, সত্যজিতদের বঙ্গসন্তান কিপার, সহকারী কোচের লাকি বেটার হাফ তো রয়েছেই। তবে তা ছাপিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় পরে মোহনবাগানে আই লিগের স্বপ্ন দেখানোর ফেরিওয়ালা চেতলার এক কোচ। এক বঙ্গসন্তান।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, সুখেন, কিংশুক, বেলো, ধনচন্দ্র (ডেনসন), শেহনাজ, সৌভিক, কাতসুমি, বোয়া, পঙ্কজ (জেজে), বলবন্ত (বিক্রমজিৎ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন