শুক্রবার মোহনবাগান মাঠে মোহনবাগান বনাম ইউনাইটেড ম্যাচ। -নিজস্ব চিত্র।
মোহনবাগান ৩ (বিদেমি-২, ডাফি) : ইউনাইটেড ১ (বুধিরাম)
ততক্ষণে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছে ইউনাইটেড। তখনই হঠাৎ চমক। ২২ মিনিটের খেলা চলছিল। মোহনবাগান রক্ষণকে যেন দাঁড় করিয়েই বক্সে ঢুকে পড়লেন শ্যামনগরের এই আদিবাসী ছেলে। হারিয়ে গিয়ে হয়ত ফিরে আসা একেই বলে। একটা সময় ইস্টবেঙ্গল জুনিয়র থেকে সিনিয়র দলের জার্সি গায়ে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে। লাল-হলুদের হয়ে পর পর গোল করে জায়গা করে নিয়েছিলেন অনেক বড় নামের পাশে। কিন্তু তার পরই হঠাৎ উধাও। চোট এবং দুস্থ পরিবার থেকে উঠে আসা বুধি বেশিদিন থাকতে পারেননি লাইম লাইটে। আবার ফিরলেন এই মরসুমে ইউনাইটেডের হাত ধরে। বোঝা গেল তিনি ফিরছেন, যখন শঙ্করের পাস থেকে ডান পায়ের ইনস্টেপে কাটালেন মোহনবাগান ডিফেন্সের রাজু গায়কোয়াড় ও চিন্তামনি চন্দ্রশেখরকে। দুই স্টপার কেটে যেতেই সামনে শুধু গোলকিপার অর্ণব দাশশর্মা। চলতি বলেই বুধিরাম টুডুর মাপা শট চলে গেল গোলে। সমতায় ফিরল ইউনাইটেড ঠিকই। কিন্তু ধরে রাখতে পারলেন না বেল্লোরা।
গত সোমবার এই মোহনবাগান মাঠই দেখেছিল সমর্থকদের উত্তেজনার ফল। যে কারণে শেষ করা যায়নি বাকি দেড় মিনিটের ম্যাচ। তিন দিন পর সেই মোহনবাগান মাঠেই জয়ের পতাকা ওড়ালেন এই সাপোর্টাররাই। শুরুটা করেছিল মোহনবাগানই। শেষও করলেন ডাফি, বিদেমি, তন্ময়রা। দুই বিদেশির গোলে জয়ে ফিরল মোহনবাগান।
ম্যাচ শুরুর ন’মিনিটের মধ্যেই গোলের নিশ্চিত সুযোগ চলে এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। তপন মাইতির কর্নার বক্সের মধ্যে থেকেই হেড করেছিলেন ড্যানিয়েল বিদেমি। কিন্তু গোলের দিকে যাওয়ার বদলে সেই বল ছিটকে চলে আসে বাইরে। সেখানেই ফাঁকায় ছিলেন বাগান অধিনায়ক রাজু গায়কোয়াড়। সেই মুহূর্তে ছন্নছাড়া ইউনাইটেড রক্ষণের সুযোগ নিতে ব্যর্থ রাজু। দূর্বল শট বাইরে যেতেই গোলের আশা শেষ। কিন্তু গোল পেতে বেশি সময় নেয়নি মোহনবাগান। দশ মিনিটের মধ্যেই বিদেমির গোলে এগিয়ে যায় সবুজ-মেরুন।
মোহনবাগানের দুই গোলদাতা ড্যানিয়েল বিদেমি ও ড্যারেল ডাফি।
ডানদিক খেকে তন্ময়ের ছোট্ট টোকা ধরে প্রভাত লাকরাকে প্রায় ঘারে নিয়েই সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়কে পরাস্ত করে ইউনাইটেড জালে বল জড়ান বিদেমি। মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই বুধিরাম টুডুর অসাধারণ গোলে সমতায় ফেরে ইউনাইটেড। উত্তেজনায় জার্সি খুলে হলুদ কার্ডও দেখেন তিনি। কিন্তু এই ম্যাচের ইতিহাসে লেখা থাকবে বুধিরামের গোলটিই। জয় শেষ পর্যন্ত লেখা হয়েছে মোহনবাগানেরই নামে।
ডার্বির আগে এই জয় খুবই দরকার ছিল মোহনবাগানের জন্য। লিগ তালিকায় তিন নম্বরে থাকা মোহনবাগানের পয়েন্ট এখন ছ’ম্যাচে ১৬। ডার্বিসহ হাতে রয়েছে আরও চারটি ম্যাচ। বিদেমির জোড়া গোল ও ডাফির গোলে আবার লিগের আশা দেখতে শুরু করে দিল গঙ্গা পাড়ের ক্লাব।
মোহনবাগানকে আশ্বস্ত করল ডাফির গোল। ৩৫ মিনিটে তন্ময়ের ক্রস থেকে ডাফির হেড গোল লাইনের বাইরে ড্রপ খেয়ে যখন চলে গেল গোলে তখন সংগ্রামের কিছুই করার ছিল না। ২-১ এ এগিয়ে গিয়ে আবার খেলায় ফেরে মোহনবাগান। না হলে গোল হজম করে কিছুটা ছন্নছাড়াই দেখাচ্ছিল বাগান রক্ষণকে। বিশেষ করে রাজু-চিন্তামনির বোঝাপড়ার অভাবে বার বার গোলের মুখ খুলে যাচ্ছিল ইউনাইটেডের সামনে। তার মধ্যেই ইউনাইটেডের গোলমুখি শট একবার ক্রসপিসে লেগে ফিরল। তার আগেই অবশ্য নিজের দ্বিতীয় ও দলের হয়ে তৃতীয় গোল করে ফেলেছেন বিদেমি। মাঝে বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবলের জন্য পেনাল্টিরও দাবি তোলেন ইউনাইটেড ফুটবলাররা। পেনাল্টি দিলে কিছু বলার থাকত না। কিন্তু এদিন হয়তো সাহস দেখাতে পারলেন না রেফারি। ম্যাচের সেরা হয়েছেন জোড়া গোল করা ড্যানিয়েল বিদেমি।
আরও খবর
ডংয়ের গোলে টানা সাত ম্যাচ জয় ইস্টবেঙ্গলের