হাফ ডজন গোলের পর বাগানে ডার্বি-আফসোস

ছয় গোলে জেতার পর বাগানে ফিরে এল চার দিন আগের ‘মৃত’ ডার্বি! শনিবার ম্যাচের পর সবুজ-মেরুন তাঁবুতে ঘুরপাক খেয়েছে আক্ষেপ আর আফসোস— আহা, কেন ডার্বিটা খেললাম না আমরা! তা হলে…!

Advertisement

তানিয়া রায়

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০২
Share:

শনিবারের নায়ক বিদেমি। ছবি: উৎপল সরকার।

মোহনবাগান ৬ : আর্মি একাদশ ০ (বিদেমি-৪, ডাফি, আজহার)

Advertisement

ছয় গোলে জেতার পর বাগানে ফিরে এল চার দিন আগের ‘মৃত’ ডার্বি!

শনিবার ম্যাচের পর সবুজ-মেরুন তাঁবুতে ঘুরপাক খেয়েছে আক্ষেপ আর আফসোস— আহা, কেন ডার্বিটা খেললাম না আমরা! তা হলে…!

Advertisement

সেনাদের বিরুদ্ধে ড্যানিয়েল বিদেমি একটা করে গোল করছেন, আর গ্যালারি থেকে দীর্ঘশ্বাস উপচে পড়ছে, ‘‘এ রকম খেললে ইস্টবেঙ্গলকে হারাতাম। কর্তারা যে কী করলেন!’’

শু‌ধু সদস্য-সমর্থকরাই নন, হতাশ বাগান ফুটবলাররাও। ম্যাচ শেষে সমর্থকদের কথার প্রতিধ্বনি দিনের নায়ক বিদেমির মুখে। ‘‘ডার্বির জন্য অনেক প্ল্যান ছিল। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তো খেলতেই পারলাম না। ওই ম্যাচে গোল করতে না পারার আফসোসটা আজ মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।’’ বেচারা বিদেমি! কলকাতা লিগের পর যে তাঁর ঠাঁই পাওয়া কঠিন গঙ্গাপাড়ের তাঁবুতে। ডার্বি না খেলার হতাশা তো থাকবেই।

বছর কুড়ির বঙ্গসন্তান গোলদাতা আজহারউদ্দিন মল্লিকও বলে গেলেন, ‘‘ডার্বি খেললে আমরা জিততাম।’’

কলকাতা লিগে বাগানের যে দল খেলছে তার সত্তর শতাংশ ফুটবলারই আই লিগে থাকবেন না। ফলে তাঁদের কাছে কলকাতা ডার্বি ছিল স্বপ্নের ম্যাচ। নিজেদেরকে দেখানোর মঞ্চ। অসীম দে নামে যে ছেলেটি স্টপার খেললেন এ দিন, বাগান জার্সিতে প্রথম একাদশে অভিষেকের ম্যাচে তিনিও বেশ নজর কাড়লেন। কিন্তু আই লিগের দলে অসীমের খেলার সুযোগ নেই। তন্ময় ঘোষ, সৌরভ দাসদের-ই বা ভবিষ্যৎ কী? বাগান এখন যদি লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে থাকত, কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হতো, তা হলে এই তরুণ-ব্রিগেড ছুঁয়ে ফেলতে পারত প্রত্যাশা। কিন্তু হাফ ডজন গোলে দলকে জেতানোর পরেও তাঁদের ভাঁড়ার শূন্য।

যে টিমটা এ বারের লিগে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে (২) গোল করেছে সবচেয়ে বেশি (২০), সেই টিমের দুই ফুটবলার ডাফি এবং বিদেমি ছ’টা করে গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে এই মুহূর্তে সবার আগে। অথচ ক্লাবের একটা ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্তে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই থেকে তাঁদের ছিটকে যেতে হয়েছে। কার জন্য বা কোন কারণে সেটা মুখ্য নয়। আসল কথা, মোহন-কর্তারা ডার্বি বয়কট করে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মেরেছেন। পড়শি ক্লাবকে লিগ পাইয়ে দিয়েছেন। এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না।

সেনারা এ দিন মূলত দ্বিতীয় দল নিয়ে বাগানের বিরুদ্ধে নেমেছিল। কারণ ডুরান্ড খেলতে চলে গিয়েছেন টিমের প্রধান ফুটবলাররা। তার উপর আবার দলের কোচ বিবি কক্কর রেফারি পিটিয়ে নির্বাসনে। ফলে একে ৪৭ নয়, গাদা বন্দুক নিয়েই বাগানের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন সুনীল-কমলেশরা। সেই ভাঙাচোরা টিমের বিরুদ্ধে ডাফি-বিদেমিরা যে দাদাগিরি করবেন, এটা স্বাভাবিক ছিল। তাও হাফটাইমে স্কোরলাইন কিছুটা হলেও ভদ্রস্থ ছিল সেনাদের পক্ষে। বাগান তখন এগিয়ে ১-০। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে সেনাদের সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেন শঙ্করলাল চক্রবর্তীর ছেলেরা। বন্যার বাঁধ ভাঙা জলে যেমন খড়কুটো ভেসে যায়, ঠিক সে ভাবেই বিদেমি-আজহারদের তাণ্ডবে নৈশালোকের মোহনবাগান মাঠে দিশেহারা হয়ে পড়ে সেনাবাহিনী। একটা-দু’টো নয়, দ্বিতীয়ার্ধে পাঁচ-পাঁচটা গোল হয়।

বিদেমি এ দিন নিজে তো গোল করেছেনই, গোল করিয়েওছেন। বাগান কর্তারা আই লিগের জন্য যাতে তাঁকে নিয়ে ভাবেন সে জন্যই সম্ভবত নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া ছিলেন এই বিদেশি স্ট্রাইকার। তাঁর পাশে এ দিন স্কটিশ গোলমেশিন ডাফিকেও নিষ্প্রভ দেখিয়েছে। বাগানের আরও দুটো ম্যাচ রয়েছে টালিগঞ্জ অগ্রগামী আর মহমেডানের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচগুলোতেও নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে তাঁকে যে ছেঁটে ফেলা হবে, সে কথা ভালই জানেন বিদেমি। বলছিলেন, ‘‘আমার সঙ্গে বাগানের এক বছরের চুক্তি ঠিকই। তবে সেখানে একটা শর্তও রয়েছে। যাতে কলকাতা লিগের পর আমরা দু’পক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’’

লিগ হাতছাড়া। রাতের আলোয় প্রিয় দলের ম্যাচ দেখতে তাই গ্যালারি উপচে এ দিন সমর্থকরা আসেননি। তবে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের মন ভরিয়ে দিয়েছেন বাগানের তরুণ ফুটবলাররা। হাফ ডজন গোলের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে বাড়িমুখো হয়েছেন সবুজ-মেরুন সদস্য-সমর্থকরা। সঙ্গে অবশ্যই তাঁদের প্রিয় দলের ডার্বি না খেলার আফসোসে ভারী হয়েছে গোষ্ঠ পাল সরণির বাতাস।

কর্তাদের তাতে অবশ্য কোনও হেলদোল আছে বলে মনে হল না।

মোহনবাগান: অর্ণব, চিন্তা, রাজু (বিক্রমজিৎ), অসীম, তন্ময়, আজহার, পঙ্কজ, শরণ (সৌরভ), প্রবীর, ডাফি (আমিরি), বিদেমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন