Sports News

অন ইওর মার্ক...গেট সেট গো, অর্ণব মণ্ডলকে হারিয়েও মলিন নন মলিনা

আধ ঘন্টাও হয়নি টিমের নির্ভরযোগ্য আর এ বারের সবথেকে ধারাবাহিক ডিফেন্ডারকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে! এ বার তা হলে কী হবে-র প্রবল দুশ্চিন্তায় প্র্যাকটিসের পর ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আটলেটিকো দে কলকাতার একদল কর্তা।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:২৪
Share:

ইয়ান হিউম ১২ ম্যাচে ৫ গোল ছবি: উৎপল সরকার।

আধ ঘন্টাও হয়নি টিমের নির্ভরযোগ্য আর এ বারের সবথেকে ধারাবাহিক ডিফেন্ডারকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে!

Advertisement

এ বার তা হলে কী হবে-র প্রবল দুশ্চিন্তায় প্র্যাকটিসের পর ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আটলেটিকো দে কলকাতার একদল কর্তা। তার উপর জোসে মলিনা। বাংলা প্রবাদের স্প্যানিশ অর্থ যাঁকে বোঝাতে গিয়ে কর্তাদের আরও গলদঘর্ম অবস্থা।

মলিনা মাস তিনেক কলকাতায় কাটিয়ে ফেলেছেন। তা হলেও ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ প্রবাদটা একেবারেই অচেনা শব্দগুচ্ছ এটিকে কোচের কাছে। কিন্তু সেটাই তো সেমিফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে আচমকা হাজির মলিনার ড্রেসিংরুমে! রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে অনুশীলন চলাকালীন ‘বল চোর বল চোর’ কায়দায় খেলতে গিয়ে হঠাৎ-ই খোঁড়াতে খোঁড়াতে বসে পড়েন এ দিন অর্ণব মণ্ডল। শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত যা খবর, তাতে এটিকে-তে তিন বছর বুক বাজিয়ে খেলা একমাত্র বঙ্গসন্তানের শনিবারের হাইভোল্টেজ ম্যাচে খেলার সম্ভাবনা কার্যত নেই-ই!

Advertisement

অর্ণবের চোটটা ঠিক কী? তাঁর সতীর্থরা জানাচ্ছেন, গোড়ালি ঘুরে গিয়েছে! কোচ বলছেন, ‘‘মাসল ক্র্যাম্প। দেখতে হবে।’’ টিম ডাক্তারের মুখে কুলুপ। মলিনার কপালে বলিরেখার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফোরলান-সুনীল-সনিদের প্রধান অ্যান্টিডোট–ই হাসপাতালে। দুশ্চিন্তা তো বাড়বেই কলকাতার!

গোল হয়ে দাঁড়িয়ে লিগ টেবলের এক নম্বর টিম মুম্বই সিটি। পাস দেওয়া-নেওয়া চলছে। যাঁকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে আইএসএলের প্রথম সেমিফাইনাল, সেই সোনালি চুলের ফুটবলারের মুখে শীতের বিকেলে অনাবিল হাসি। হঠাৎ-ই একটা বল এসে লাগল তাঁর পেটে। সাঁইত্রিশের দিয়েগো ফোরলান সামান্য কঁকিয়ে উঠলেন যেন! মিনিট দুয়েক বসে থাকলেন সবুজ ঘাসে। তার পর আবার উঠে দাঁড়ালেন বিশ্বকাপে সোনার বলের মালিক। হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসা মুম্বইওয়ালাদের মুখেও ফিরল হাসি। টিমের উরুগুয়ান মহাতারকা ফরোয়ার্ডের সঙ্গেই।

টিমের মঙ্গল কামনায় দু’দিন আগেই মাদার টেরিজার ‘নির্মল হৃদয়’-এ গিয়েছিলেন কলকাতার ক্যাপ্টেন বোরহা ফার্নান্ডেজ। সঙ্গে নিয়েছিলেন একঝুড়ি ফল। দলের অনুশীলনের পর টিফিনে হিউম-পস্টিগা-দেবজিতদের যে ফল খেতে দেওয়া হয়, সেগুলো থেকে একটা করে চেয়ে নিয়েছিলেন স্প্যানিশ মিডিও। নির্মল হৃদয়ের দুঃস্থদের জন্য। অধিনায়কের এই অভিনব উদ্যোগ কলকাতা টিমের একাত্মতার এক টুকরো ছবি। কঠিন সেমিফাইনাল যুদ্ধে নামার আগে।

ফোরলান রুখতে অর্ণব যদি শনিবার না-ও থাকেন মাঠে, তাঁদের এই একাত্মতাই মনে হচ্ছে সেরা শক্তি মলিনার কলকাতার। টিমের যুদ্ধং দেহি শরীরী ভাষার বিচ্ছুরণের মাত্রা যে কতটা সেটা বেরিয়ে আসছে এটিকে কোচের কথায়। ‘‘অলওয়েজ.. অলওয়েজ...অলওয়েজ আমি জিততে চাই। আমাদের উপর কোনও চাপ নেই। স্রেফ আর একটা নব্বই মিনিটের ম্যাচ খেলতে নামছি। এবং সেটা জেতার জন্য নামছি।’’ শান্ত শরীরটা কথা বলার সময় যেন একটু কেঁপে ওঠে উত্তেজনায়। ‘‘শুনে রাখুন, ফেভারিটরা সব সময় জেতে না। আপনাদের কাছে যে ফেভারিট, আমাদের কাছে সে তা না-ও হতে পারে। ফোরলান একা খেলবে না, আমরাও খেলব।’’ বলে হাবাসের উত্তরসূরির মুখে খেলে যায় তীর্যক হাসি।

যুদ্ধ-যুদ্ধ আবহটা আরও গরম হয়ে ওঠে প্রেসরুমে। যখন বিপক্ষ কোচের বসা একই চেয়ারে এসে শান্ত গলায় মুম্বই কোচ আলেসান্দ্রো গুইমারেস বলে গেলেন, ‘‘সেমিফাইনালে ফেভারিট কি না জানি না, তবে আমরাই এ বার টুর্নামেন্টের সবথেকে ধারাবাহিক টিম। গোল না খাওয়াটা আমরা অভ্যাসে পরিণত করেছি। আমাদের ডিফেন্স এতই শক্তিশালী, আটটা টিমের মধ্যে সবথেকে কম গোল হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে।’’ মলিনার মতো নায়ক-মার্কা মুখ হয়তো নয়, তবে গুইমারেসের ভাঙাচোরা মুখাবয়বেরই তীক্ষ্ণতা দেখে মনে হবে, বিপক্ষকে পিষে ফেলার যাবতীয় বুলডোজার যেন রয়েছে তাঁর ড্রেসিংরুমে।

কিছু দিন আগেও যে মাঠ ছিল প্রায় ধ্বংসস্তুপ, সেটাই এখন সেজেগুজে যেন রাজবাড়ি। সন্ধের রবীন্দ্র সরোবরে ঘরে ফেরা পাখির কোলাহল শুনতে শুনতে মনে হয়, শনিবারের পর এই স্টেডিয়ামের হাল কী হবে কে জানে? যেমন মনে হচ্ছে, স্প্যানিশ বনাম কোস্টারিকা কোচের যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কতটা রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠবে কে জানে? সাংবাদিক সম্মেলনে এসে আক্রমণ এবং প্রতিআক্রমণের কোলাজে প্রাক-ম্যাচ আবহ তপ্ত দেখালেও কলকাতা ও মুম্বই কোচদ্বয় শেষ পর্যন্ত মাঠে কতটা আক্রমণাত্মক হতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। নকআউটের প্রথম পর্বে দু’জনের কেউই কাছা খুলে আক্রমণে যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন বলে মনে হয় না। দুই কোচই মনে রাখবেন, আরও নব্বই মিনিট অবশিষ্ট থাকবে শনিবারের পরেও।

গত বার হাবাস অ্যাওয়ে ম্যাচে যে অহেতুক ঝুঁকি নিতে গিয়ে তিন গোল খেয়ে বসেছিলেন। পরে চেন্নাইয়ানের বিরুদ্ধে নিজেদের মাঠে জিতেও যা সামাল দেওয়া যায়নি। বিদায় নিয়েছিলেন সেমিফাইনাল থেকে। মলিনা সে রাস্তায় হাঁটার বান্দা নন। বলেও দিচ্ছেন, ‘‘জিততে চাই। তবে সেটা করতে গিয়ে হারতেও চাই না।’’ এ সবের মধ্যে একটা মজার তথ্য, গত বার হাবাসের কলকাতার গোলে দাঁড়িয়ে যে অমরিন্দর সিংহ ডুবিয়েছিলেন, তিনি এ বার মুম্বইয়ের কিপার হয়ে শহরে হাজির।

আহত অর্ণবের জায়গায় আজ কিংশুক দেবনাথ খেললেও কলকাতা যে নিজেদের গোলে তালা বন্ধ করে তবেই আক্রমণে ঝাঁপাবে সেটা মনে হয় স্বভাবতই বুধতে পারছেন বিশ্বকাপে কোস্টারিকার দু’বারের কোচ গুইমারেস। ‘‘প্রথম বার সেমিফাইনাল খেলছি। ফোরলানের মতো অস্ত্র আছে আমার। প্রথম নব্বই মিনিটে ম্যাচটা শেষ হয়ে যাবে না। তাই এখানে যা পাব সেটাই লাভ।’’ বোঝাই যায়, অ্যাওয়ে ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে পারলেই মুম্বই কোচ খুশি হবেন।

ভিভিআইপি স্ট্যান্ডে নিজের-নিজের দলের হয়ে গলা ফাটাতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে রণবীর কপূর শনিবার থাকবেন কি না সেটা আগের রাত পর্যন্ত নিশ্চিত নয়। মুম্বই মালিক নির্ধারিত শ্যুটিং শিডিউল ছেড়েও শহরে আসতে পারেন বলে জানিয়ে রাখা হয়েছে সংগঠকদের। বলিউড তারকা অনিশ্চিত হলেও একঝাঁক টলিউড তারকা কিন্তু স্টেডিয়ামে থাকবেন কলকাতাকে সমর্থন করতে। সরোবরে প্রথম বার টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। শনি-সন্ধ্যের গ্যালারি ‘মেক্সিকান ওয়েভ’ ওঠার ঢেউ অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

এই আবহে মলিনার কাঁটা যদি হন ফোরলান, তা হলে কুসুম হয়তো তাঁর টিমের আত্মবিশ্বাস। যার উপর ভর করেই কলকাতার কোচ বলছেন, ‘‘খেলা হবে তো এগারোর বনাম এগারোয়। সেখানে ফোরলান একটা নাম মাত্র।’’

যা শুনে মলিনার সেরা ডিফেন্ডার পায়ের প্রচণ্ড যন্ত্রণার মধ্যেও নির্ঘাত স্বস্তি পাবেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন