নায়ক: কাস্টমসের অন্যতম ভরসা সৌরভ। নিজস্ব চিত্র
দু’পায়ে নিখুঁত ট্যাকল। সঙ্গে দুর্দান্ত কভারিং। দু’প্রান্ত থেকে ভয় ধরানো সব ক্রস যখন ভেসে আসে বক্সে তখন তাঁর অনুমানক্ষমতাও চোখে পড়ার মতো। সঙ্গে লড়াকু মনোভাব এবং প্রচণ্ড সাহস।
এগুলোই কল্যাণীর ছেলে সৌরভ দাশগুপ্ত-র সম্পদ। আর তা দিয়েই মঙ্গলবার কল্যাণীর ছেলে নব্বই মিনিট ঢেকে রাখলেন মহমেডানের জোড়া স্ট্রাইকার দিপান্দা ডিকা এবং জিতেন মুর্মুকে।
এ দিন ম্যাচের পর কাস্টমসের এই তরুণ স্টপার সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছিলেন আশির দশকে কলকাতা ময়দানের কিংবদন্তি স্টপার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর কাছেই যে স্টপার হয়ে ওঠার প্রথম পাঠ সৌরভের। এ বার কলকাতা লিগে কাস্টমসের জার্সি গায়ে সৌরভের খেলা অনেকেরই নজর কেড়েছে।
মনোরঞ্জন বলছিলেন, ‘‘ছেলেটার সব চেয়ে বড় গুণ হল ধৈর্য আর সাহস। ছোট বয়সে আমার কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল জুনিয়র দলে ছিল। তখন দেখতাম এমন সব ট্যাকল নিচ্ছে যা ওর সমবয়সীরা নিতে ভয় পায়। এ বার কাস্টমসের হয়ে ভাল খেলছে ছেলেটা। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে বড় দলে খেলার যোগ্যতা রয়েছে।’’
বাবা সামান্য বীমা কর্মী। স্বল্প আয়ের সংসার। তাই খেলা শুরুর দিকে অনেক প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে সৌরভকে। ম্যাচের পর সেই কথা বলতে গিয়ে আবেগে গলা বুজে আসে সন্দেশ ঝিঙ্গনের ভক্ত সৌরভের।
আরও পড়ুন: ‘হাজার গোল করলে আমার সমান হবে’
কল্যাণী পুরসভা পরিচালিত ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে ফুটবলে প্রথম হাতেখড়ি। তার পর ইস্টবেঙ্গল জুনিয়র দলে সুযোগ পান জুনিয়রদের টুর্নামেন্টে ভাল পারফর্ম করার সুবাদে।
সৌরভের কথায়, ‘‘ইস্টবেঙ্গল জুনিয়র দলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং স্বরূপ দাস স্যারের কাছে অনেক কিছু শিখেছি। সেগুলো এখন কাজে লাগছে। আমাকে পরিণত ফুটবলার করে তুলতে ওঁদের অবদান ভুলতে পারব না। মনোরঞ্জন স্যারের টিপস কাজে লাগিয়েই আজ ডিকাকে আটকেছি। আমাকে আরও ভাল খেলতে হবে আগামী দিনে।’’
এ বার কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেও ভাল খেলেছিলেন সৌরভ। কিন্তু শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে যাওয়ার হতাশা ভোলেননি। কাস্টমসের সহকারী কোচ প্রলয় সাহাও বললেন, ‘‘এরিয়ানে গত বছর বেশ ভাল খেলেছিল সৌরভ। সেটা দেখেই এ বার ওকে দলে নিয়েছি আমরা। লিগেও বেশ ভাল খেলেছে।’’
কাস্টমসের জার্সি গায়ে দেওয়ার আগে বছরের শুরুতে সন্তোষজয়ী বাংলা দলেও ছিলেন সৌরভ। সে কথা বলতে গিয়ে মুখ আলো করা হাসি খেলে যায় সের্জিও র্যামোসের ভক্তের। বলেন, ‘‘জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত ছিল বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতে ঘরে ফেরা। কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে স্টপার ছাড়াও মাঝমাঠেও খেলিয়েছিলেন সন্তোষ ট্রফিতে।’’
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য জানতে চাইলে বলেন, ‘‘বড় দলে খেলতে চাই। তবে সেটা ছোট দলে নিজের জাত চিনিয়ে তবেই।’’
এ দিন ড্রেসিংরুমে ফিরেই কোচ রাজীব দে-র কাছে জানতে চাইছিলেন তাঁর নিজের পারফরম্যান্স ঠিক ছিল কি না? কাস্টমস কোচও বলছেন, ‘‘ছেলেটা এ রকমই। রোজ ম্যাচের পর জেনে যায় নিজের ভুল-ত্রুটি।
আর সৌরভ বলছেন, ‘‘ছোট দলে প্রতিটা দিন নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করি। তার জন্যই এটা জেনে নিই নিয়মিত ভাবে। মনোরঞ্জন স্যার এ ভাবেই এগোতে বলেছেন।’’