অভাবের বাধা টপকে জাতীয় স্তরে মৌসুমী

একে অভাবের সংসার। তার ওপর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। মনের জোর ও আগ্রহ থাকলে যে কোনও সমস্যাই সাফল্যে বাধা হতে পারে, এবার তা প্রমাণ করল দিনহাটার কিশোরী মৌসুমী সূত্রধর।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৮:৪৩
Share:

যোগ দিবসে যোগাসন প্রদর্শনীতে মৌসুমী। — হিমাংশুরঞ্জন দেব

একে অভাবের সংসার। তার ওপর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। মনের জোর ও আগ্রহ থাকলে যে কোনও সমস্যাই সাফল্যে বাধা হতে পারে, এবার তা প্রমাণ করল দিনহাটার কিশোরী মৌসুমী সূত্রধর।

Advertisement

সাফল্যের নজির গড়ে জাতীয় যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ডাক পেল দিনহাটার ওই মূক ও বধির কিশোরী। আগামী অগস্ট মাসে হাওড়ায় ওই প্রতিযোগিতার আসর বসবে। উত্তরবঙ্গের প্রতিযোগীদের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে মৌসুমী। অল ইন্ডিয়া যোগ কালচার ফেডারেশন ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিনহাটা মহামায়াপাট ব্যায়াম বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ব যোগাসন দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চে মৌসুমীকে সংবর্ধনা জানান। এখানেই প্রায় আট বছর ধরে যোগাসনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মৌসুমী। মহকুমা ও জেলাস্তরে যোগাসনের নানা প্রতিযোগিতায় নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে বেশ কিছুদিন থেকেই সাড়া ফেলেছিল ওই কিশোরী। কিন্তু একেবারে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ছাড়পত্র মিলবে সেটা অনেকেই ভাবেননি। স্বাভাবিকভাবে এ দিন বিশ্ব যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে মৌসুমীকে নিয়ে ছিল বাড়তি উচ্ছ্বাস।

Advertisement

ওই ব্যায়াম বিদ্যালয়ের সচিব বিভুরঞ্জন সাহা বলেন, “ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই এবার জাতীয় যোগাসন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ডাক পেয়েছে মৌসুমী। এজন্য ওর বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।’’ তিনি জানান, শীঘ্রই প্রতিযোগিতার তারিখও ঘোষণা করা হবে।”

ব্যায়াম বিদ্যালয় ও মৌসুমীর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনহাটার সারদাপল্লী এলাকায় দিদার বাড়িই আপাতত মৌসুমীর ঠিকানা। বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই মা স্বপ্নাদেবী মূক ও বধির মেয়ে মৌসুমীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। দিনমজুরির কাজ করে অভাব অনটনের মধ্যে সংসার চালান। মেয়ের শারীরিক সমস্যার কথা ভেবেই মূলত মৌসুমীকে ওই ব্যায়াম বিদ্যালয়ে যোগাসনে ভর্তি করান তিনি।

স্বপ্নাদেবীর মা জোৎস্না সাহা সপ্তাহে তিনদিন যাবতীয় প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নাতনিকে প্রশিক্ষণ দিতে নিয়ে যান। মঙ্গলবারেও তিনিই মৌসুমীকে নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যান। জোৎস্নাদেবী বলেন, “মেয়ের বিয়ে টেকেনি। নাতনি মূক ও বধির। অভাবের সংসারে চিন্তায় ছিলাম। কিছুটা শরীরচর্চার কথা ভেবেই ওকে যোগাসনে ভর্তি করানো হয়। তাতে শারীরিক সমস্যারও খানিকটা উন্নতি হয়েছে। ভবিষ্যতে ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলে পরিশ্রমটা সার্থক মনে হবে। সেই চেষ্টাতেই সাধ্যমত কাজ করছি।”

ব্যায়াম বিদ্যালয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, বাড়তি যত্ন ও গুরুত্ব দিয়ে মৌসুমীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মৌসুমীর প্রশিক্ষক সুজিত পাল বলেন, “জাতীয় প্রতিযোগিতায় এবারই প্রথম সুযোগ পেয়েছে মৌসুমী। আমরা আশা করছি ওই মঞ্চে সে সাফল্য ছিনিয়ে আনবে।” সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া মৌসুমীও নিজেকে ভুলে অনুশীলনে ব্যস্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন