IPL 2019

অবিক্রিত থাকার যন্ত্রণা উপশম পরের দিকে, যুবি এ বার মুম্বইয়ে

আইপিএল নিলাম যখন শুরু হয়, ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে তিনটের আশপাশে। ঘণ্টাখানেক নিলাম এগোতেই স্পষ্ট হয়ে গেল যুবরাজের প্রাথমিক ভাগ্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:২৯
Share:

টি২০ ফরম্যাটে নিজের জায়গা ফিরে পেতে প্র্যাকটিসে যুবরাজ। —ফাইল চিত্র।

২০১৫-র জানুয়ারিতে সে বছরের আইপিএল মরশুমের জন্য ১৬ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি হয়েছিলেন যুবরাজ সিংহ। অঙ্কের হিসাবে আইপিএলে এই মূল্য এখনও রেকর্ড! ২০১৮-র শীতের সন্ধ্যায় সেই আইপিএল নিলামে সেই যুবরাজ যখন নিলামের প্রথম পর্বে অবিক্রিত রইলেন তখন বেশ অবাকই হয়েছিলেন আপামর ক্রিকেট ভক্ত। ২০১৯-এর আইপিএল নিলামের প্রথম রাউন্ডে ব্যাট ধরার জন্য তাহলেএকটা দলও পেলেন না টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম পর পর ছয় ছক্কার মালিক? এই প্রশ্নটাই ততক্ষণে ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেট মহলে। তার কয়েকঘণ্টা পর ছবিটা বদলাল। বেস প্রাইস ছিল ১ কোটি। ঠিক এই অঙ্কেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে টেনে নিল ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রাউড পুলার!

Advertisement

আইপিএল নিলাম যখন শুরু হয়, ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে তিনটের আশপাশে। ঘণ্টাখানেক নিলাম এগোতে না এগোতেই সেই মুহুর্ত। যুবরাজের নাম উঠল বটে কিন্তু তিনি রইলেন অবিক্রিত। প্রথম রাউন্ডে তাঁর নামের পাশে উঠে আসেনি আইপিএলের কোনও ফ্রাঞ্চাইজির কার্ড। জয়দেব উনাদকাট, অক্ষর পটেলের মতো জুনিয়ররা তত ক্ষণে দল পেয়ে গিয়েছেন। দামও উঠেছে চড়া। ২০১৮-য় যে দলে ছিলেন সেই নিজের রাজ্য পঞ্জাবের কাছেও এবার অবহেলিত রয়ে গিয়েছেন তিনি। তারা বরং তত ক্ষণে দলে নিয়েছে মহম্মদ শামিকে।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার কিছু আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে আরও এক বার নিলামে উঠল যুবরাজের নাম।

Advertisement

ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন

আরও পড়ুন: লাইভ: অবিক্রিত যুবরাজ-শন মার্শ-আমলা-অ্যাঞ্জেলো-মর্কেল, ফার্গুসনকে নিল কেকেআর

সম্প্রতি রঞ্জিতে দিল্লির বিরুদ্ধে ব্যাট করছেন যুবরাজ। ছবি: পিটিআই।

মুম্বইয়া ভাষায় যুবরাজ হলেন খারুশ প্লেয়ার! বাইশ গজে চোয়ালচাপা লড়াই করতেই বেশি অভ্যস্থ। জীবনেরকাঠিন্য তিনি কম চাখেননি। জাতীয় দলের হয়ে শেষ খেলেছেন ৩০ জুন ২০১৭তে। সেটা ছিল ওয়ান ডে। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জাতীয় দলের জার্সি হাতছাড়া হওয়ার চেয়েও প্রখর বাস্তবের মরণকামড়ও ছিল সেই কাঠিন্যের তালিকায়। ২০১১-য় ফুসফুসে ক্যানসারের সপাট কামড় নাড়িয়ে দিয়েছিল আয়ুরেখা। বোস্সেটনে ছুটে গিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। ব্যাট ধরার জন্য তখন হাত নিশপিশ করত টপ ফর্মে থাকা এই ক্রিকেটারের। কেমোথেরাপিকে হাতিয়ার করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার মতো করে বীরবিক্রমে ২০১২-য় দেশে ফিরেছিলেন যুবরাজ। ফিরেছিলেন ম্যাচেও। তার পরই পারফর্ম্যান্স, ফিটনেস এ সবের ঘরে এঁটে উঠতে পারছেন না— এই অভিযোগে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।

তার পর থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন দেশের হয়ে ব্যাট ধরার। নিচ্ছিলেন পাওয়ার ট্রেনিংও। সে ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন এই পঞ্জাবতনয়। তবু জাতীয় দলের শিকে ছেঁড়েনি। ছেলেকে বাদ দেওয়ার নেপথ্যে এক সময় ধোনির ‘কারসাজি’-কে দুরমুশ করেছিলেন যুবরাজের বাবা যোগরাজ।

আরও পড়ুন: নিলামে বড় আকর্ষণ হেটমায়ার, প্রশ্ন যুবরাজকে নিয়ে

২০০০ সালে কেনিয়ায় বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে দেশের হয়ে অভিষেক। দেশের জার্সিতে ৩০৪টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন যুবরাজ সিংহ। রান করেছেন ৮৭০১। গড় ৩৬.৫৫ওয়ান ডে-তে সর্বোচ্চ রান ১৫০। খেলেছেন ৪০টি টেস্ট ও ৫৮টি ‘টি২০’। ২০১২তে অর্জুন পুরস্কারও পেয়েছেন। ২০১১তে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। টুর্নামেন্টের সেরাও হয়েছিলেন।

যুবরাজের ব্যাট ধরার স্টান্স, শট হাঁকড়ানোর ক্যারিশমা বহু ক্রিকেট বোদ্ধাকেও টিভি স্ক্রিনে হিড়হিড় করে টেনে এনেছে। ছয় ফুট লম্বা ছেলেটার দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসই ২০১৫-তে তার দাম টেনে নিয়ে গিয়েছিল ১৬ কোটিতে। সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড়ের মুকুট মাথায় তুলে চমকে দিয়েছিলেন তামাম ক্রিকেটকূলকে। যদিও সে বছর তাঁর খেলা বিক্রীত দামকে মূল্য দিতে পারেনি। দিল্লি আড়ি করেছিল তার পরের বছরই।

২০১৬-য় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ৭ কোটিতে কিনে দলে ঠাঁই দিয়েছিল তাঁকে। ছাপ ফেলতে পারেননি তেমন। ১০ ম্যাচে মাত্র২৩৬ রানেই গুটিয়ে যায় রানের খাতা। ঘরের ছেলের উপর আস্থা রাখতে এর পর ২০১৮-য় বেস প্রাইস ২ কোটিতেই তাঁকে কেনে তাঁরই জন্মরাজ্য পঞ্জাব। সাত ম্যাচ খেলে ৬৪ রান করেন যুবরাজ। এ বছর বেস প্রাইস ১ কোটিতে নেমে দাঁড়িয়েছিল।

আরও পড়ুন: বিরাট ‘অভদ্র’! কে বললেন এমন কথা?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আইপিএলের মঞ্চে সে ভাবে দাগ না কাটলেও সম্প্রতি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রঞ্জি ট্রফিতে বেশ ভাল পারফর্ম করছিলেন যুবরাজ। গত কাল তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে ৩৪ বলে ৪১ রান করেন যুবি। সঙ্গে উইকেটও নেন দু’টি। সাম্প্রতিক কালে রঞ্জির পারফর্ম্যান্সের থেকেই তাঁকে নিয়ে আশায় ছিলেন অনুরাগীরা। মঙ্গলবার সন্ধের প্রথম রাউন্ডের শেষে সে আশার ঘরে সাময়িক ভাটা এলেও পরেরদিকে যাবতীয় সংশয় ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল।

‘‘আমি এখনও খেলছি। প্রতিদিন নিজের সেরা অনুশীলনটা করছি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বেশি হচ্ছে। আর আমি নিজেকে ২০১৯ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলতে দেখতে পাচ্ছি। তার পর অবসরের কথা ভাবব।’’ এক বছর আগে ইউনিসেফ-এর একটি অনুষ্ঠানে আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠে এ কথাই বলেছিলেন যুবরাজ।

(ক্রিকেটের খবর,ফুটবলের খবর, টেনিসের খবর, হকির খবর - খেলার খবরেরসেরা ঠিকানা আমাদের খেলা বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন