নার্ভ হারিয়ে ‘ডেঞ্জার জোনে’ মুস্তাফিজুর, বলছে বাংলাদেশ

স্বভাবটা নাকি কোনও দিন খুব একটা ছিল না। বৃহস্পতিবার মাঝরাত থেকে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটের মধ্যমণি হয়ে যান সাতক্ষীরার উনিশ বছরের পেসার, তা হলে বিতর্কের অধুনা বস্তুও বটে!

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

স্বভাবটা নাকি কোনও দিন খুব একটা ছিল না।

Advertisement

বৃহস্পতিবার মাঝরাত থেকে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটের মধ্যমণি হয়ে যান সাতক্ষীরার উনিশ বছরের পেসার, তা হলে বিতর্কের অধুনা বস্তুও বটে! জীবনের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচে পাঁচ উইকেটের সঙ্গে প্রাপ্তি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির গুঁতো, যার পিছু ধরে বিতর্ক। ধোনির মতো তাঁর ম্যাচ ফি-ও কাটা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বারবার ডেঞ্জার জোনে চলে যাওয়া তাঁর স্বভাব? নাকি দুর্ঘটনা?

তিনি মুস্তাফিজুর রহমান।

Advertisement

বাংলাদেশ মিডিয়াকুলের কারও কারও ধারণা নেই মুস্তাফজির আগে কখনও এমন করেছেন কি না। কারণ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁরা সে ভাবে মুস্তাফিজুরকে দেখেননি। বছরদুয়েক হল তাঁর উত্থান। প্রথমে অনূর্ধ্ব উনিশ টিম, এক বছর ঢাকা আবাহনী ক্লাব। তার পর দেশের জার্সিতে বৃহস্পতিবারের আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটা টি-টোয়েন্টি। অথচ বৃহস্পতিবারের ম্যাচে দেখা গিয়েছে যে ধোনির সময় শুধু নয়, তার আগেও ডেঞ্জার জোনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন মুস্তাফিজুর। যার পর বলাবলি চলছে, বাঁ হাতি বাংলাদেশ পেসারের এটা সমস্যা কি না।

বাংলাদেশ মিডিয়া না দেখলেও এ পারের অনূর্ধ্ব উনিশের বোলারদের দায়িত্বে থাকা কোচ সরবর ইমরান বলছিলেন, “আমি দু’বছর ওকে দেখছি। কখনও এটা করতে দেখিনি। ইচ্ছে করে ধোনির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল বলেও মনে হয় না। আসলে মুস্তাফিজুর অত স্মার্ট না। প্রথম বার নামছে বলে নার্ভাস হয়ে ও ভাবে ডেঞ্জার জোনে চলে যাচ্ছিল। পরের ম্যাচ থেকেই শুধরে নেবে।”

“যে কেউ বড় চোট পেতে পারত। ব্যাটসম্যান যখন রান নিচ্ছে, তখন পিচ থেকে দূরে থাকাটা
শিখতে হবে ওকে (মুস্তাফিজুরকে)। আম্পায়ারদের উচিত ওর সঙ্গে কথা বলা।
এই অভ্যেসটা না বদলালে ব্যাপারটা ওর জন্য খুব কঠিন হয়ে যাবে।” —সুরেশ রায়না

ঘটনা হল, ও পার বাংলার প্রাক্তন পেসার রণদেব বসুও বাংলাদেশ অ্যাকাডেমিতে কোচের দায়িত্ব সামলে গিয়েছেন। কলকাতা থেকে ফোনে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে তাঁর মনে হল, মুস্তাফিজুরের এই সমস্যা তাঁর আগে একটু-আধটু চোখে পড়েছে। “আসলে অ্যাকাডেমির নেটে বল করা আর ম্যাচে করা সমান নয়। অ্যাকাডেমির নেটে বল করার সময় দেখতাম যে ও কখনও কখনও ডেঞ্জার জোনে চলে যেত। বলেওছিলাম সেটা। কিন্তু অ্যাকাডেমিতে বোলিংয়ের টেকনিক্যাল দিকগুলো অনেক বেশি দেখা হয়। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”

বিতর্ক বাদ দিয়ে বরং মুস্তাফিজুরের দুই কোচই ছাত্রের প্রতিভার কথা আলোচনায় বেশি আনতে চান। ইমরান বলছিলেন যে, মুস্তাফিজুরের মতো পরিশ্রমী ছেলে কমই আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। একটা সময় দাদা মোখলেসুর রহমান চল্লিশ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে ভাইকে প্র্যাকটিসে নিয়ে যেতেন। সাতক্ষীরায় খেলতে খেলতে চোখে পড়ে যাওয়ার পর ঢাকার পেস বোলিং ক্যাম্পে যোগ দেওয়া। তার পর অনূর্ধ্ব উনিশ বাংলাদেশের নেটে বল করতে করতে একটা সময় নিয়মিত বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব উনিশ খেলতে শুরু করে দেওয়া। রণদেব আবার অ্যাকাডেমির বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়ে যখন বছর আড়াই আগে এখানে আসেন, মুস্তাফিজুর মোটেও তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল না। তিন বা চার নম্বর ছিলেন, যিনি কি না মাসখানেকের মধ্যে প্রভূত উন্নতি ঘটিয়ে এক নম্বর বোলিং-ছাত্র হয়ে ওঠেন। বলা হচ্ছে, তাঁর বোলিং লেংথ বাংলাদেশ পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল। কারণ সেটা উপমহাদেশের লেংথের উপযোগী। এটাও বলা হচ্ছে, কাটার নিয়ে এত হইচই যে হচ্ছে, তার মাজাঘষা এখনও সম্পূর্ণ নয়। সময়ের সঙ্গে নাকি আরও ধারালো হবে।

ঈশ্বর জানেন, ব্যাটসম্যানদের তখন কী হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন