চক্রান্ত, মানছে না়ডা

কলঙ্কমুক্ত হয়ে কেঁদে ফেললেন নরসিংহ

নাডার রিপোর্ট জেনেছেন কিছুক্ষণ আগেই। যা মেনে নিয়েছে, তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে নিষিদ্ধ অ্যানাবলিক স্টেরয়েড মিথানডাইনোন নেননি। যে রিপোর্ট বলছে, নির্দোষ নরসিংহ যাদব চক্রান্তের শিকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০৫:১১
Share:

দুশ্চিন্তা কাটার পর মিষ্টিমুখ। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই

নাডার রিপোর্ট জেনেছেন কিছুক্ষণ আগেই। যা মেনে নিয়েছে, তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে নিষিদ্ধ অ্যানাবলিক স্টেরয়েড মিথানডাইনোন নেননি। যে রিপোর্ট বলছে, নির্দোষ নরসিংহ যাদব চক্রান্তের শিকার।

Advertisement

আর সে খবর শোনার পর কেঁদে ফেললেন বিতর্ক সরিয়ে উঠে আসা কুস্তিগির। পাশে তখন কোচ জগমল সিংহ। ভিড় বাড়তে শুরু করেছে গুরু-শিষ্যকে ঘিরে। দু’জনেরই চোখে এখন রিও-র স্বপ্ন।

কিন্তু রিও যাওয়ার রাস্তা কতটা পরিষ্কার হল নরসিংহের সামনে? নরসিংহ গোষ্ঠী নিশ্চিত, অলিম্পিক্স যেতে সমস্যা হবে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নাডা (জাতীয় ডোপ বিরোধী সংস্থা) যদি কাউকে নির্দোষ বলে এক বার, তার পর ওয়াডা (বিশ্ব ডোপ বিরোধী সংস্থা) তাঁকে আর শাস্তি দেয় না। যে ধারণার উপর ভর করেই নরসিংহ এবং তাঁর কোচ স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। তবে নাডা জানিয়েছে, অলিম্পিক্সে নামতে গেলে নরসিংহকে আরও একটা পরীক্ষা দিতে হবে।

Advertisement

কিন্তু সোমবার নাডার এই রায় অন্য এক বিতর্ক চরমে তুলে দিয়ে গেল। নাডা বলছে, নরসিংহের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই চক্রান্তের পিছনে তা হলে কে? যাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে তাঁরা আসলে কার লোক?

সেটা পরিষ্কার হয়নি। কিন্তু নরসিংহ দাবি তুলছেন, চক্রান্তকারীদের শাস্তি চাই। বলছেন, ‘‘যে বা যারা এই কাজ করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। যাতে কেউ ফের এ রকম কাজ করার সাহস না পায়।’’ পাশে দাঁড়িয়ে নরসিংহের কোচ তখন বলছিলেন, ‘‘এত চাপেও নরসিংহ কিন্তু এক দিনের জন্যও অনুশীলন বন্ধ রাখেনি।’’

গত এক সপ্তাহ ধরে গোটা দেশে ঝড় তোলা এই ডোপ কেলেঙ্কারির রায় দিতে গিয়ে এ দিন নাডা-র ডিরেক্টর জেনারেল নবীন অগ্রবাল বলেন, ‘‘মাথায় রাখতে হবে ২৫ জুন পর্যন্ত নরসিংহের কোনও নমুনাই পজিটিভ ছিল না। ফলে এটা প্রমাণিত হয় না ৫ জুলাই নেওয়া যে নমুনা পজিটিভ হয়েছে তা পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য। মাত্র এক বার নরসিংহের নমুনা পজিটিভ হলেও তা ইচ্ছাকৃত নয়। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার পর নাডার রায় হল, নরসিংহ চক্রান্তের শিকার।’’

ম্যাটের বাইরে সুশীল-নরসিংহ লড়াই শুরু বছর খানেক আগে। যখন ২০০৮ ও ২০১২ অলিম্পিক্সে সুশীল কুমার যে বিভাগে ব্রোঞ্জ ও রুপো পেয়েছিলেন সেই ৬৬ কেজি বিভাগ বাতিল হয়। যার বদলি হিসেবে ৭৪ কেজি বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে রিওর টিকিট পান নরসিংহ। অলিম্পিক্স ও বিশ্ব কুস্তি সংস্থার নিয়মে রিওতে একটি বিভাগে এক দেশ থেকে এক জনই নামতে পারবেন। যাঁকে বাছবেন সে দেশের ফেডারেশন। সুশীল গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কাঁধের চোটে নামেননি। উল্টে দাবি করতে থাকেন তাঁর সঙ্গে নরসিংহের ট্রায়াল দেখে রিওর প্রতিযোগী বাছা হোক। ২০১৬-র এপ্রিলে ফেডারেশন যে দাবিতে জল ঢেলে জানিয়ে দেয় রিও যাবে নরসিংহ-ই। যার বিরুদ্ধে আদালতে সুশীল আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। তার ঠিক পরেই এই ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন নরসিংহ। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা যায় নাডার শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে। কুস্তির শীর্ষ কর্তাকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এরই মাঝে সাইয়ের রাঁধুনি দাবি করে বসেন, নরসিংহের খাবারে কাউকে সাদা গুঁড়ো মেশাতে দেখেছেন। নরসিংহও চিহ্নিত করেন এক জুনিয়র কুস্তিগিরকে।

নরসিংহ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় এ দিন খুশিতে ডগমগ কুস্তি ফেডারেশনের সচিব ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমরা সকলে খুব খুশি। গোটা দেশ নরসিংহের পাশে ছিল। নাডার সিদ্ধান্তকে আজই আমরা ওয়াডা ও ওয়ার্ল্ড রেসলিং ফেডারেশনকে জানিয়ে দিয়েছি। আশা করছি যে কোনও মুহূর্তে আমরা জবাব পেয়ে যাব। এও আশা করছি, ভারতের হয়ে নরসিংহই লড়বে রিওতে।’’ নরসিংহ নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর এ দিন গোটা দেশ জুড়ে শুভেচ্ছা বার্তা আসছে। বাদ যাননি সুশীল কুমারও। টুইটারে সুশীলের মন্তব্য, ‘‘নরসিংহকে মুবারক। রিওতে ও ভাল ফল করুক সেটাই আমি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন