বন্ধুত্বে এখন ফাটল।
প্রশ্ন: আপনাকে ফোনে কম আর টুইটারে বেশি পাওয়া যায়...
যোগেশ্বর: কুস্তির বাইরে ওটাই আমার জগত। বন্ধুবান্ধব নেই। সময়ও নেই। বাড়ি থেকে ট্রেনিং, ট্রেনিং থেকে বাড়ি— এটাই আমার রোজের সূচি। বাকি বিশ্বের খোঁজ-খবর রাখার জন্য টুইটারই আমার বন্ধু।
প্র: এই জগতে আপনি নিজেও তো জনপ্রিয়। বিতর্কেও আছেন।
যোগেশ্বর: (গম্ভীর গলায়) মানে?
প্র: মানে আমির খান হোক কিংবা সলমন খান, এমনকী কানহাইয়া কুমারকেও তো ছাড়েননি আপনি?
যোগেশ্বর: আমি যা বলি, মন থেকে বলি। সোজাসাপ্টা বলি। কেউ যদি দেশ-বিরোধী কথা বলে, কাজ করে, তাকে নিয়ে একবার কেন, একশোবার বলব। দেশকে কেউ অপমান করলে, ছাড়ব না। সে যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন।
প্র: আপনার টুইটার প্রোফাইলে তাই প্রথমে লেখা ‘আ প্রাউড হিন্দুস্তানি’। পরে অলিম্পিক্স পদকজয়ী?
যোগেশ্বর: আমার কাছে দেশ সবার আগে। সুভাষচন্দ্র বসু, ভগৎ সিংহ, চন্দ্রশেখর আজাদরা আমার আদর্শ। পালোয়ান না হলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতাম। প্রথম ইচ্ছেটা পূরণ হয়নি। পরেরটা হয়েছে। আমি এখন হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি। অবসরের পরে পুরোদমে দেশের সেবা করব।
প্র: পুলিশের চাকরি মানে বুদ্ধির পরীক্ষা। কিন্তু পালোয়ানদের তো লোকে বলে ‘দিমাগ হি নহি হোতা’?
যোগেশ্বর: (হাসতে হাসতে) বাজে কথা। কুস্তিতে শক্তি কম হলেও চলে। বুদ্ধিটা লাগে। আমাদের খেলায় অনেক কিছু আছে যা শক্তিতে হবে না। বুদ্ধি দিয়ে পেতে হয়। খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন আমি এখন বলতে পারব না, আপনার মাথায় কী চলছে। কিন্তু রিংয়ে বিপক্ষের মাথায় কী ঘুরছে সেটা বুঝতে হয়। কাউন্টার করে নিজের অ্যাটাকিং বা ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি তৈরি করি।
প্র: এটাও শোনা যায়, পালোয়ান মানেই নাকি প্রচুর খাবে-দাবে?
যোগেশ্বর: এটাও ভুল। কুস্তিগীররা ব্যালেন্সড ডায়েট করে। আমরা খুব বেশি খাই না। কিন্তু যেটা খাই, খুব পুষ্টিকর হয়। আমাদের বড় সমস্যা, ওয়েট মেনটেন করা। আমার ডায়েটে সকালে কলা, বাদাম আর দুধ। পরে দু’টো রুটি সবজি। দুপুরে ওটস। রাতেও দু’টো থেকে তিনটে রুটি আর সবজি। দিনে দুধ প্রায় আড়াই লিটার। মাছ-মাংস খাই না।
প্র: ব্যালেন্সড ডায়েটের মতো বাস্তব জীবনেও আপনি এতটা ব্যালেন্সড কি?
যোগেশ্বর: কেন?
প্র: নরসিংহ যাদবের পাশে আপনি যেমন ভাবে দাঁড়িয়েছেন...
যোগেশ্বর: আমি আগেই বলেছি, নীতির সঙ্গে আমি সমঝোতা করি না। নরসিংহ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। ও যদি সত্যিই অপরাধ করে থাকে, তা হলে শাস্তি হবে। কিন্তু আমার মতে ও নির্দোষ। ইচ্ছে করে ওকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বার কিছু লোককে খুশি করার জন্য আমি তো নিজের স্ট্যান্ড পাল্টাতে পারি না। তাতে কেউ অখুশি হলে হবে।
প্র: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে কেউ বোধহয় খুব অখুশি?
যোগেশ্বর: একটা সময় আমার খুব কাছের মানুষ ছিল। বলতে পারেন, একই পয়সার দু’টো পিঠ ছিলাম। কিন্তু এখন অনেক কিছু বদলে গিয়েছে আমাদের মধ্যে। সুশীল কুমারের সঙ্গে আমার আর কোনও কথা নেই। মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ। নরসিংহকে সমর্থন করার জন্য বন্ধুত্ব নষ্ট হয়েছে কি না, জানি না। তবে কিছু গল্প পর্দার আড়ালে থাকলেই ভাল।
প্র: রিও আপনার শেষ অলিম্পিক্স বলেছিলেন। এখানে পদক জিততে না পেরে হতাশ। নাকি লন্ডনের ব্রোঞ্জ পদক রুপোয় বদলে যাওয়ায় খুশি?
যোগেশ্বর: দু’টোই হতাশাজনক। রিওতে যেমন সোনার পদক জিততে চেয়েছিলাম। তেমন না লড়ে রুপো চাইনি। আমি তো বলেওছি যে, ওই রুপো চাইনা। বেসিকের পরিবারের কাছে থাকুক। কিন্তু অলিম্পিক্স সংস্থার নিয়মে যদি সেটা সম্ভব না হয়, তা হলে বাধ্য হয়ে নিতে হবে পদকটা।
প্র: রিও অলিম্পিক্সের পরে বিয়ে করবেন বলেছিলেন। সেটা কী হল?
যোগেশ্বর: ১৬ জানুয়ারি বিয়ে।
প্র: পাত্রী কোথাকার? কুস্তিগীর?
যোগেশ্বর: না। আমি এখনও মেয়ে দেখিনি। আমার মা-ই ঠিক করেছে। সোনিপতের মেয়ে। নাম শীতল। ব্যস! এ বার থামুন...
প্র: শেষ প্রশ্ন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী আপনার?
যোগেশ্বর: আপাতত বিশ্ব কুস্তি চ্যাম্পিয়নশিপ। এশিয়ান গেমস। প্রথমটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অলিম্পিক্স পদক থাকলেও ওই একটা পদক আমার নেই।